সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গার্মেন্টস শিল্প সি কে সুয়েটার্স দেড় মাস ধরে বন্ধ অর্থ-বাণিজ্য /  দিনাজপুর / 
চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার কারণে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দরে সি কে সুয়েটার্স লিমিটেড নামক উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানটি দেড় মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ্যভাবে ৫ হাজার মানুষের রুটি-রুজির পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
দিনাজপুর জেলা বিজ্ঞ দ্রুত বিচার আদালতে দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা গেছে, ওই ফ্যাক্টরীর ১৯জন শ্রমিক বেশ কিছু দিন ধরে কোম্পানীর কর্মকর্তাদের উপর চাঁদাবাজী ইত্যাদির জন্য চাঁপ সৃষ্টি করে আসছে বলে জানা গেছে।
২০০৭ সালে লুসাকা গ্রুপ বাংলাদেশের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সি কে স্যুয়েটার্স লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ রপ্তানিমুখী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বছরে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার গার্মেন্টেসের মালামাল ইউরোপ, আমেরিকায় রপ্তানী করে থাকে। এখানে প্রত্যক্ষভাবে ২ হাজার এবং পরোক্ষভাবে ৩ হাজার জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের কিছু অসৎ শ্রমিক ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী গত ১০মে তারিখে ফ্যাক্টরির মধ্যে ভাংচুর, চুরি ও মারদাঙ্গার ঘটনা ঘটায়। এতে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এ ব্যাপারে ২৭ জন শ্রমিক এবং অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জনকে আসামী করে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার জিআর নং ৮৫/১৫। এই ঘটনার পর আসামীরা দলবদ্ধভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির আশেপাশে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে ভয়ভীতি সৃষ্টি বিশৃঙ্খলা, অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির অপরাপর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করছে। এ কারনে ১২মে হতে ৩০মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রবেশ করতে পারেনি।
গত ৫ জুন বিকেল ৬টার দিকে মামলায় উল্লেখিত আসামীরা বেআইনী জনতা দলবদ্ধ হয়ে খুন জখম ও দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। তারা গেটের বাইরে একটি ভটভটি যাতে শিপমেন্টের জন্য ১৭ লক্ষ টাকার মালামাল ছিল তা লুটপাটের চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-শ্রমিক-কর্মচারীদের তৎপরতায় এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর ওই দিনেই সন্ধ্যা ৭টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী গাড়ীতে গার্মেন্টস বাজার মোড়ে দুবৃত্তরা আটক করে। তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারপিট করে এবং গার্মেন্টস ফেক্টরিতে কাজ করতে আসলে তাদের জবাই করে হত্যা করবে মর্মে হুমকি দেয়।
৬ মে তারিখে দুর্বৃত্তরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করে। তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুর মোঃ বুলুর কাছে ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চায় এবং তার কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা আরো দাবী করে যে, প্রতিটি শ্রমিকের নিকট হতে মাসিক ১০০ টাকা হরে তাদের চাঁদা দিতে হবে। পূর্বের দাবীকৃত ১৫ লক্ষ টাকার চাঁদার জন্য ১৬/৬/১৫ তারিখে তারা প্রোডাকশন ম্যানেজার মোঃ আমিনুল ইসলামকে লাঞ্চিত করে এবং এই মর্মে হুমকি দেয় যে, ওই চাঁদা না দিলে ফ্যাক্টরি চালু করতে দিবে না।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুর্বত্তদের উৎপাত অব্যাহত ছিল, কারখানাটিও ছিল বন্ধ। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আসামীদের মধ্যে সাকুল্যে ১৭ জন আদালত থেকে জামিন নিলেও বাকীরা পলাতক থেকে অপকর্ম করে আসছে। এদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের কোন ভুমিকা নেই। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই অপতৎপরতার ইন্ধন যোগাচ্ছে জনৈক ইউপি চেয়ারম্যান। সে সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এই ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।