Opu Hasnat

আজ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

দুর্গাপুরে ১বছর ধরে পাগলকে ভাত খাওয়াচ্ছেন এক চা দোকানী! নেত্রকোনা

দুর্গাপুরে ১বছর ধরে পাগলকে ভাত খাওয়াচ্ছেন এক চা দোকানী!

ভেজা শরীরে জ্বর নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে মা বলে ডাক দিলো নয়ন মিয়া। বাড়ীর ভিতরে থাকা কাজলী দে চেঁচিয়ে বলে উঠল, আসছিরে একটু দাঁড়া ....। বির বির করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে নয়ন মিয়া বলে ‘‘কোটি আসে কোটি যায় - কেউ পায় কেউ না পায়’’। এমনই এক মানবিকতার জয় হতে দেখা গেলো দুর্গাপুর পৌরসভার দেশওয়ালীপাড়া এলাকায়। কাজলী দে হিন্দু ধর্মালম্বী হয়েও নয়ন মিয়া (৩৬) নামের এক মুসলিম পাগল কে প্রায় ১বছর ধরে প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়াচ্ছেন।

কাজলী দে পেশায় একজন চা দোকানী। তার এক ছেলে এক মেয়ে। স্বামী গোপাল সরকার প্রায় ৩০বছর ধরে পঙ্গু। বহু কস্টে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলে পলাশ কে নিয়ে দুর্গাপুর পৌর এলাকায় সদর ইউনিয়নেয় মার্কেটের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

পাগলকে ভাত খাওয়ানো নিয়ে মঙ্গলবার কাজলী দে, এ প্রতিনিধি কে বলেন, নয়ন মিয়া পাগল। দীর্ঘদিন মানুষের দোকানের এই কোনে ওই কোনে বসে থাকে আর বির বির করে কি যেন বলে। প্রায় বছর খানেক আগে দুপুর বেলায় আমার দোকানে এসে বলে মা আমায় ভাত খাওয়াবি? মা ডাক শুনে আমার ভিতরটা দুমরে মুচরে উঠলো। আমি তখন দোকানের পিছনে আমার বাসায় নিয়া তাকে ভাত খাওয়াই। আর তখন থেকে নয়ন মিয়া প্রায় প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য এসে বসে থাকে আমার বাসার সামনে। আমি আমার সাধ্যমত তাকে খাবার দেই। আসলে খেতে ভাগ্য লাগে না, কাউকে খাওয়াতেই ভাগ্য লাগে। আমি একটি নগন্য চায়ের দোকানদার, আমার দেয়া খাবারে যে একটি মানুষের জীবন বেঁচে যাচ্ছে এটাই তো আমার কাছে পরম পাওয়া। 

এমন একটি ঘটনায় কাজলী দে কে সাহায্য করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি করেন স্থানীয়রাও। সেই সাথে পাগল নয়ন মিয়ার চিকিৎসা করাতে সরকারের উর্দ্ধতন মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

শহরের উকিলপাড়া এলাকার ব্যবসায়ি সুমন রায় ও নিমাই ঘোষ বলেন, নয়ন মিয়া ৮-১০ বছর আগেও বিভিন্ন মিস্টির দোকানে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। বিয়ে করে চর মোক্তারপাড়া এলাকায় সংসারও শুরু করেছে। হঠাৎ কি যে হয়ে গেল বোঝা যাচ্ছেনা। কেউ তাঁর চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়েও আসেনি। 

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। নয়ন মিয়ার বিষয়টা খুবই কষ্টদায়ক। আমরা সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। সমাজে বিত্তবানরা হয়তো ভাবছেন এটা তাদের বোঝা। যে বয়সে নয়ন মিয়া তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা, আর সেই সময় সে পাগল হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার চেষ্টা করব।