Opu Hasnat

আজ ১৭ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

শুধু ফটো তুইলেন না পারলে খাইব্যার দেন

শিবালয়ের চরাঞ্চলে বন্যায় ভাসছে লোকজন, খোঁজ নিচ্ছে না কেউ মানিকগঞ্জ

শিবালয়ের চরাঞ্চলে বন্যায় ভাসছে লোকজন, খোঁজ নিচ্ছে না কেউ

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর ৩টি উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের খোঁজ-খবর নিচ্ছে না কেউ। এ তিনটি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস। এসব  উপজেলার বিশাল চরে রয়েছে এ ভু-খন্ড। এসব অঞ্চলে বন্যাসহ যে কোন দুর্যোগ প্রথমে আঘাত হানে এসব এলাকাতে।  এবার বন্যার শুরু থেকেই প্রায় সব বসত বাড়ি পানিতে ভাসছে। এসকল অসহায়  ও দুর্গত  লোকজন পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে বন্যার পানিতে চরম বিপাকে পরেছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংঙ্কটে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক বেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে কোন মত  চলছে তাদের দিন। আবার অনেকের ঘরের মধ্যে বাঁশের তৈরি বিশেষ ধরণের মাঁচা তৈরি করে অসহায়ত্বের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তারা। এখন পর্যন্ত কেউই খোঁজ নেইনি তাদের। জেলার এ ৩টি উপজেলার দুর্যোগ  ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জানেনই না তার এলাকায় বন্যায় দুর্গত পরিবারের সংখ্যা কত।  বিশেষ করে এ জেলার অন্তর্গত পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলগুলো পুরোপুরি বন্যা প্লাবিত হয়েছে। জেলার দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর উপজেলার নদীর তীরবর্তি ইউনিয়নগুলো দ্রæত প্লাবিত হচ্ছে।

শনিবার বিকালে চর শিবালয়, চর বষ্ঠমী, চরমধ্যনগ, ত্রিশুন্ডী আলোকদিয়া, মধ্যনগরসহ আশে-পাশের বেশ কয়েটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব চরাঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়ি ঘর পানিতে ভাসছে। এ প্রতিবেদকের নৌকা নিয়ে যাওয়া দেখে সবাই এগিয়ে আসে।  বানভাসি এসব লোকজন বলতে থাকে ‘আমাদের রিলিপ দিবেন নাকি ভাই- শুধু  ফটো তুইল্যা লাভ কি। এতে কি আমাদের পেট ভরবো’। আমাদের খবর কেউ নেয় না। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সবাই বলতে থাকে কিছু আমাদের না দিলা কমপক্ষে আমাগো দেইহ্যাতে গ্যালা। অনেক পরিবার ছোট একটি ঝুপটি ঘরে পানির মধ্যে মাচা করে দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকে কোরবানীর পশু নিয়ে বিপাকে পরেছেন। পানির মধ্যে বেঁধে রেখেছেন গরু গুলোকে। আবার রান্না করার প্রয়োজনীয় জিনিসা না থাকায় এক বেলা খেয়ে না খেয়ে  অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

ভুক্তভোগী আকমল হোসেন, হাবু, জলিল, সন্তোস, ইউনুসসহ অনেকেই জানান,  বন্যার শুরু থেকে  উল্লেখ্য, সাতটি উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্ধী হয়েছে পরেছেন বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮শত পরিবারকে সহায়তা দেওয়ায় অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

দৌলতপুর উপজেলার যমুনার চর জিয়নপুর, বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, খলসী, চকমিরপুর, ঘিওর উপজেলার ঘিওর, বড়টিয়া, শিবালয় উপজেলার তেওতা, উথলী, শিবালয়, উলাইল, আরুয়া ইউনিয়ন হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, হারুকান্দি, কাঞ্চনপুর, লেছড়াগঞ্জ, ধুলসুড়া, আজিমনগর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসকল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম ইতিমধ্যে পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে গত (২৩ জুলাই) বৃহস্পতিবার হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্তরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ নীচু রাস্তা পানিতে তলিয়েছে ও কয়েকশ’ বাড়ি ঘরের মানুষজন পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।  পানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে  এক তৃতীয়াংশ বাড়ির উঠোনে পানি উঠে যাবে। এসব অঞ্চলের লোকজন নৌকা নির্ভর হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে আরিচায় অবস্থিত দেশের অন্যতম পিডিবি’র স্পান টাইপ পিসিপোল কারখানার পশ্চিম পাশের নদীর তীরবর্তি রাস্তা বন্যার পানিতে নিমজিত হয়ে পড়েছে। ফলে কারখানার অভ্যান্তরে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়ায় কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরিচা গবাদি পশুর হাট, আরিচা লঞ্চ ঘাট রোড, আরিচা পুরাতন ফেরি টার্মিনালে পানি উঠেছে।

এদিকে নদীর স্রোত তীব্রতর হওয়ায় ভাঙ্গন সমান তালে চলছে। এবার বর্ষার শুরু থেকেই তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানিকগঞ্জের এ ৪ উপজেলার পদ্মা-যমুনার আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে।

তেওতা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক মানুষ ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে এবং বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

হরিরামপুরের হারুকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু জানান, তার ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রাম পরিপূর্ণ বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

কঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী ইউনুছ উদ্দিন জানান, এ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বর্তমান অতিতের ভাঙ্গনসহ নতুন করে ভাঙ্গনে অনেক এলাকা পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: তোফাজ্জল হোসেন জানান, নদী ভাঙ্গনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ তার যমুনা চরের  ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তার ইউনিয়নটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। তার ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তি আরো দু’টি ইউনিয়ন জিয়নপুর ও বাঁচামারার বাসিন্দারা প্রতিবছরই ভাঙ্গনের শিকার এবং বন্যা কবলিত হয়। এ তিন ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

শিবালয় ১ নং ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, নদী তীরবর্তি এলাকায় পানি বৃদ্ধি ও হ্রাসের সময় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। তুলনামুলকভাবে এবছর ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না হলে অত্র এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হতে বেশী দিন লাগবে না। ইতিমধ্যে মাননীয় সংসদ সদস্য স্থায়ী বাঁধের জন্য চেষ্টা তদবির করছেন যা বাস্তাবায়নের পথে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেন, উপজেলার শিবালয়, তেওতা ও আরুয়া তিনটি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ তিনটি ইউনিয়নের তিনটি স্কুলে আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

হরিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দু’টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার্তদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।