Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

রাজবাড়ীতে বন্যা দূর্গত পদ্মা পাড়ে ডাকাত আতঙ্ক! রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে বন্যা দূর্গত পদ্মা পাড়ে ডাকাত আতঙ্ক!

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্ঠিত চর ও নদীর তীরের হাজার হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। বন্যা দূর্গত এলাকার হতদরিদ্র মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের সাথে যুক্ত হয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে রয়েছে মূল্যবান গবাদী পশু। যে কারনে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে কোরবানি উপযোগি পশু।

স্থানীয়রা জানান, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চর কুশাহাটা, রাখালগাছী, বেতকা, চর বেতকা, মজলিশপুর, দেবীপুর, বাহিরচরসহ বিভিন্ন চর এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই হতদরিদ্র। সারা বছর অতি কষ্টে চরের ঘাসের উপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের প্রতি পরিবার ২-৪ টি করে গরু ও ছাগল পালন করেন। কোরবানী ঈদের আগে এরা পশুগুলো বিক্রি করে সংসারের অসচ্ছলতা কিছুটা ঘোচানোর চেষ্টা করেন।

এদিকে এ বছর প্রতিটি চর প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাবার নিয়ে প্রচন্ড রকমভাবে বিপাকে পড়েছেন পশু মালিকরা। অনেকের নিজেদের থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তাটুকুও নেই। তারা গবাদী পশু নিয়ে পড়েছেন বেশী বেকায়দায়। তার উপর সৃষ্টি হয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। বাড়ীর উঠানে ট্রলার ভিড়িয়ে গরু তুলে নিয়ে গেলে অসহায় কৃষকের কিছুই করার থাকে না। বিগত বছরগুলোতে এ ধরণের ঘটনা ঘটলেও এ বছর অবশ্য এখনো এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও অজানা আশংকায় চরের মানুষ রাত জেগে যতোটা সম্ভব নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নিজেরাই নিজেদের এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন।

সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শহর রক্ষা বাধের উপর গরু ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত একশ টি পরিবার। তারা পাটকাঠি ও বাশ দিয়ে ঘর তৈরি করে গরু ও ছাগলের সাথে একত্রে বসবাস করছেন।

এ সময় দেবোগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা নাছিমা আক্তার বলেন, বাড়িতে ওঠানে ও শোবার ঘরে পানি। করোনা স্বামীকে কর্মহীন করেছে। ৮ টি ছাগল পালন করেছিলাম। যা কোরবানির হাটে বিক্রি করার কথা ছিলো। কিন্তুু খাদ্যের সমস্যায় দুটি মারা গেছে। বাকি ৬ টি নিয়ে রাস্তায়ই কাটছে দিনও রাত। গত এক সপ্তাহের বন্যায় দশ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছেন তিনি। 

দৌলতদিয়া ৬নং ফেরিঘাটের মাথায় মহাসড়কে কোরবানীর ঈদে বিক্রি উপযোগী দুটি ষাড় গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাহির চরের কৃষক ফকের শেখের স্ত্রী তছিরণ বেগম। আলাপকালে তিনি জানান, আমাদের বাড়ী-ঘরসহ বাহির চরের বেশীরভাগ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। তাই গরু-বাছুর নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। তারপরও রাতে ভয়ে ভয়ে থাকি।

একইভাবে রেজাউল হক, চাঁদ আলী শেখ, বাবলু মোল্লা, শাহজাহান সরদার, শুকুর আলী সরদারসহ আরো অনেকেই জানান, তারা প্রত্যেকেই দুই একটি গরু-ছাগল নিয়ে নদীর পাড়ে মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে লোকজনের কোলাহল থাকলেও ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে তারা গরু পাহাড়া দেন।

এদিকে দুর্গম কুশাহাটা, রাখালগাছী, কর্ণেশনা চরের পশু মালিকরা রয়েছেন একে বারেই অরক্ষিত। কিন্তু এলাকাগুলোতে নৌপুলিশ কিংবা থানা পুলিশের কোন টহল না থাকায় সাধারণ মানুষ সব সময় ভীত-সন্ত্রষ্ট থাকেন।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, পদ্মা নদীর ওপার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন তার ওয়ার্ডটি। এখানকার প্রতিটি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। বাড়তি দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে গবাদী পশুর খাবার যোগানো ও তাদের নিরাপত্তা।

মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম জানান, তার ওয়ার্ডের অন্তর্গত দুর্গম চর কুশাহাটার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে কুরবানীর ঈদে বিক্রির উপযোগী পশু রয়েছে। চরের মানুষ ও পশু উভয়েই প্লাবিত হয়ে এক দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। সেখানকার লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে নৌকা ও ট্রলার যোগে রাতে এলাকা পাহাড়া দিচ্ছে।

দৌলতদিয়ার নৌ থানা পুলিশের পরিদর্শক মুন্নাফ হোসেন জানান, আমরা শুধু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করি। এর বাইরের এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে থানা পুলিশের কাজ করার কথা।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ আশিকুর রহমান পিপিএম জানান, তারা বন্যা দুর্গত এলাকায় এখনো কোন টহল দিচ্ছেন না।  তবে চারদিক প্লাবিত থাকায় চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। চোর-ডাকাত রুখতে প্রতিটি এলাকার আনছার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সব সময় সতর্ক রাখা হয়েছে। সেই সাথে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এলাকাবাসীকে এই দুঃসময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। সেই সাথে জরুরী পরিস্থিতিতে থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানান।