Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

খাগড়াছড়িতে ভিন্ন স্বাদের নানা রকম আদিবাসী খাবার ঔষধি গুণে ভরপুর খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে ভিন্ন স্বাদের নানা রকম আদিবাসী খাবার ঔষধি গুণে ভরপুর

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ভিন্ন স্বাদের আদিবাসী (পাহাড়ি)’র রান্নায় ঔষধি গুণাগুণ ভরপুর হয়ে থাকে। যেন মন ভরেও ভরেনা অনেক শাক-শব্জি খাবার পরিবেশনায়। এলাকার বিভিন্ন রোগাক্রান্তদের শাক-শব্জির চাহিদা অনেক গুন বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিকস, জন্ডিস, হাসি-কাচি, সর্দি জ্বর, গলা ব্যথা, কোমড় ব্যথা, শরীল দুর্বল, হাই-লো প্রেসার ইত্যাদি রোগীদের সু-স্বাধু উপকারী খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। তার মধ্যে সারা দেশের সাথে কোভিড-১৯ করোনা উপসর্গ রোগীদের পরিত্রান পেতে চাহিদা অনেক গুন বেড়ে গেছে। এলাকা ভিত্তিক খাবারে থাকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট। আর ভিন্নতা রান্নায় থাকে ভিন্ন স্বাদ। ভোজন রসিক মানুষের আপ্যায়নের জন্য টেবিল থাকে নানা পদের রান্নায় ঔষধি গুনাগুন ভরপুর। 

আদিবাসী (পাহাড়ি) অনেক শাক-শব্জিতে ঔষধি গুণাগুণ থাকার ফলে সাধারন সচেতন মানুষের চাহিদা দিন দিন দ্বিগুন বেড়ে চলেছে। ঔষধি গুনাগুন তরকারীর মধ্যে যেমন মাশরুম (সাদা/খয়েরি), সাবারাং, থানকুনি পাতা, হলুদ ফুল, আদা কচি পাতা/ফুল, শিমুল শুকনা ফুল, নিম পাতা, আমলকি-বহেরা-হরিতকি কচি পাতা শাক, গন্ধ পাতা, জংগলী টিতা কচু শাক, তেতুল কচি পাতা, টিতা করলা কচি শাকসহ ৩৫-৫৫ রকমে ইত্যাদি নাম না জানা অনেক জুম পাহাড়ের উপাদিত ফসল। 

তবে সমতলের তুলনায় আপ্যায়নের টেবিলে বৈচিত্রতা থাকে আদিবাসী (পাহাড়ি) দের খাবারের মেন্যুতে। কম মশলার এসব রান্না ভোজন রশিকের ষোলআনা পূরণ করবে এতে সন্দেহ নেই। আর পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে আদিবাসী (পাহাড়ি) খাবার খাবেননা তা কি হয়! এবারে আদিবাসী (পাহাড়ি)দের ঐতিহ্যবাহী কিছু রান্না সম্পর্কে জেনে নিই।

তিন পার্বত্য জেলা পাহাড়ের স্থানীয় খাবারের তালিকায় যে নামটি সবার আগে আসে সেটি হচ্ছে বাঁশ অথবা বাশকোরল। কচি বাঁশ দিয়ে রান্না করা হরেক পদের খাবার যেন পূর্ণতা আনে খাবারে। কচি বাঁশ সেদ্ধ বা শুকনা সেদ্ধ দুই প্রকারে খাবার উপযোগী হয়ে খাকে।

বাঁশ সেদ্ধ, বাঁশের ডাল, বাঁশ দিয়ে ছোট মাছ, মিশ্রন শব্জি (পাচন/গন্ধ) তরতরকারী, যে কোন মাংসের সাথে মিশ্রন, কিংবা বাঁশ দিয়ে সবজি রান্না যেন অতুলনীয়। শুধু কি রান্না, ব্যাম্বো চিকেনের কথা নিশ্চই সবাই শুনেছেন? মুরগীকে মসলা দিয়ে মিশিয়ে বাঁশের ভেতর রান্না করা এক অন্যরকম সতেজ স্বাধের আয়োজন।

এবার আসি আরও কিছু রান্নার কথায়, মৌসুমী অনুযায়ী বাধাকপি সেদ্ধ, ঢেকি শাক সেদ্ধ, ফুলকপি সেদ্ধ, মুলা শাক সেদ্ধ, শিমসহ অনেক পদের শাক সেদ্ধ করে রান্না করা হয়। মূলত পরিস্কার শাক গরম পানিতে লবন দিয়ে সেদ্ধ করা হয়।

আর শাক সেদ্ধ পরিপূর্ণতা আনবে ভর্তায়। চিকন মরিচ, নাপ্পি শুটকি, ছোট শুকনা বা ভেড়মা (গাজা), ধনে পাতা, পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি করা ভর্তা শাক সেদ্ধর অনন্য সঙ্গী। এর পরে রয়েছে মাশরুম। টিতা করলা শাক দিয়ে মাশরুম সেদ্ধ, ডিম দিয়ে মাশরুম ভাজি, মাশরুম দিয়ে ডাল অন্যতম।

এই অঞ্চলে তরকারিতে শুটকির ব্যবহার থাকবেই। যার মধ্যে প্রত্যক তরকারীতে নাপ্পি চিদ্দোল বা ছোটো মাছের শুকনা চিদ্দোল অথবা গাজা (ভেড়মা) দিয়ে রান্না করতে হয়। সেটি রান্না হোক কিংবা সেদ্ধ। যেমন পাহাড়ের গোল আলু রান্না, মিক্স সবজি রান্না, হাঙ্গর শুটকি দিয়ে কাঠাল, বেগুন দিয়ে সাবারাং সেদ্ধ, সিম রান্না অন্যতম।

বর্তমানে খাগড়াছড়িতে গড়ে উঠেছে একাধিক খাবারের দোকান। তার মধ্যে রয়েছে  পান খাইয়া পাড়ার সিস্টেম, খাংময়, জামতল মং হোটেল, মাহাজন পাড়ার ব্যাম্বো সুট, ইজোর, টং গড়, স্বর্নিভরে চাকমা হোটেল, মারমা হোটেল। এসব দোকানে পাহাড়ের একাধিক ঐতিহ্যবাহী সব ধরনের খাবারের আয়োজন থাকে।