Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

নড়াইলের কোন হাসপাতালেই নেই কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ব্যবস্থা নড়াইল

নড়াইলের কোন হাসপাতালেই নেই কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ব্যবস্থা

নড়াইলের সরকারি, বে-সরকারি কোন হাসপাতালেই করোনা আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা দেয়ার মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসায় হাইফ্লো অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ এর সাথে রক্তের প্লাজমা থেরাপি দেয়ার সুবিধা থাকা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু নড়াইলের সরকারি বে-সরকারি কোন হাসপাতালে এসব নেই সুবিধা। মৃদু উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা হলেও বাকীদের খুলনা বা ঢাকা রেফার্ড করা হয়। এতে বরে রোগী এবং স্বজনদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। তবে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। 

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ৩০ জুন পর্যন্ত নড়াইলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৯ জনের মধ্যে ৭ জন মৃত্যুবরন করেছেন। সরকারি-বে-সরকারি মিলিয়ে জেলায় ৩০ জন চিকিৎসক এবং ৩৮ নার্স কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। 

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নড়াইল সদর হাসপাতালে সংক্রামক ওয়ার্ডকে করোনা সাসপেকটেড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ঠিক তার পিছনের কেবিন  ভবনের ৪ টি বেডে করোনা পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসা চলছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের মোট ২০টি বেড, শহরের ডুমুরতলা এলাকার সরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকে কোডিভ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষনা করে ১০০টিসহ জেলায় সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৯০ টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। তবে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ এর সুবিধা কোথাও নাই ।

করোনায় আক্রান্ত নড়াইলের কামাল প্রতাপ গ্রামে নয়ন শেখের বড় ভাই হুমায়ুন কবীর বলেন, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়নের জ্বর শ্বাসকষ্ট হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের সবাই খুব অমানবিক আচরন করে। একদিন রাতে শ্বাসকষ্ট হলে কেউ তার কাছে যায়নি। নার্সদের ডাকলে রাগ করেছে। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিয়ে দেয়, কিন্তু তাতে কোন অক্সিজেন ছিল না। পরে নয়নকে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান সে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ভাল আছে। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মী জানান, সাধারনত দূর থেকেই হাসপাতালে কোডিভ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার রেখে আসা হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া আছে। রোগীরা প্রয়োজনমত তা ব্যবহার করে। এ্যান্টিবায়োটিক, ফেক্সোসহ প্রচলিত ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। উন্নত সুবিধা না থাকায় ঝুকিপূর্ণ মনে হলেই রোগীকে বড় হাসপাতালগুলিতে পাঠানো হয়। বিশ্বে আলোচিত রেমডিসিভির ওষুধের ব্যবহার করা হয় না। সাধারনত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং নার্সরাই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক  কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট নড়াইল সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের অনুরোধ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২ জুন সারাদেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিতে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দেন। অথচ এখন পর্যন্ত অবহেলিত নড়াইলে কোন কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। তিনি হাসপাতালে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ সুবিধা চালুর দাবি করেন। নড়াইল শহরের মহিষখোলার জনৈক অনিকের মাতা গত ২৬ জুন জ্বর-শ্বাসকষ্টে মারা যান। 

অনিক ফেইসবুক বার্তায় জানান, “তার মায়ের দুইবার স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়। যদিও প্রথমবার স্যাম্পল যশোর ল্যাবে পাঠানোর চার দিন পর জানতে পারেন, স্যাম্পল নষ্ট হবার কারণে পরীক্ষা করা যায়নি। যশোর ল্যাবের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ২৫ জুন দ্বিতীয় বার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর ২৬ তারিখ রাতে জানানো হয় তার মা করোনা পজেটিভ ছিলেন।”

নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক পলাশ মোল্যা বলেন, দেশের সনাক্ত বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুর শতকরা হার ২% এর নীচে, সেখানে নড়াইলে মৃত্যুর শতকরা  হার ৩.৯%। রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্য জেলায় পাঠানো হয়। অনেক সময় নমুনা নষ্ট এবং ফলাফল পেতে দেরী হয়। নড়াইলে একটি ল্যাব স্থাপন এবং রোগীদের চিকিৎসায় রক্তের প্লাজমা থেরাপির দেয়ার ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান।

নড়াইল সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মুশিউর রহমান বাবু বলেন, সাধ্যমত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে নড়াইল সদর হাসপাতালের ৮জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এখানে কর্তব্যরত সকল ডাক্তার ও নার্সরা রোস্টার অনুযায়ী রোগী দেখেন। তারা বিধি মোতাবেক কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। হাসপাতালে পযাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। তবে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ নাই । 

নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা: আব্দুল মোমেন বলেন, জেলায় মোট ২২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এছাড়া কেন্দ্রিয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর জন্য একটা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিতর্কিত রেমডিসিভির ওষুধের সরবরাহ নাই এবং করোনায় আক্রান্তদের জন্য এ ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে না। 

নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা এবং মাননীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির নির্দেশনায় জেলার করোনা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। জেলায় পযাপ্ত পরিমান অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার আরো উন্নয়নের জন্য কাজ অব্যহত রয়েছে। তিনি সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালী ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।