Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

তুহিন কুমার চন্দ’র একগুচ্ছ ছড়া শিল্প ও সাহিত্য

তুহিন  কুমার  চন্দ’র একগুচ্ছ ছড়া

বলছে পাখি আমায় ডেকে 

বলছে পাখি আমায় ডেকে 
খাঁচায় কেন বন্দী
আটছো নাকি নতুন করে 
নতুন কোন ফন্দী? 

এতদিনতো খাঁচায় ছিলাম 
এখন আকাশ আমার
পরীর দেশে কাল বিকেলে 
মাপ দিয়েছি জামার।

এই দেখোনা বিশাল বনে 
মেঘের দেশে যাচ্ছি একা
ঘুরছি ফিরছি আপন মনে 
সবার সাথেই হচ্ছে দেখা।

খাঁচার জীবন কষ্ট কত 
তোমার আকাশ এইটুকুনি
বুঝতে পারো এখন তুমি 
তোমার কষ্ট আমিই  জানি।

বলছে পাখি আমায় ডেকে 
এতেই হাঁপাও আটকা বলে
খাঁচায় কেন বন্দী তুমি 
পরছো এবার  ক্যাচা কলে।

আর ক'টা দিন আটকে থাকো 
নিজের ঘরে নিজের মতোন
বাইরে এখন অদৃশ্য রোগ 
হামলা চালায় যখন তখন।

বলছে পাখি আমায় ডেকে 
খাঁচায় কেন বন্দী থাকো
নিজের ঘরে চুপটি করে 
ভালোবাসার ছবি আঁকো।

**************

জেলখানাতে বন্দী যেমন

বলছে খোকা ভেতর ঢোকো তোমার বয়েস ষাট 
আমরা এখন বাইরে যাবো আমরা সবে আট।

শুনেই বাবার চোখ দু'টো গোল কাঁচের গুলির মতো,
ছোকরাগুলো বলছে কি যে নিজের ইচ্ছেমতো? 

ঘরের বাইরে পা দেবো যেই চেঁচিয়ে ডাকে ও...মা
হেঁড়ে গলায় তেড়ে আসেন গিন্নী সত্যভামা।

বলবো কি আর বড্ড চেঁচায় জোগাড় করে লোকও
ঠেলে পাঠায় বাড়ির ভেতর বলছে ঘরে ঢোকো।

পুরুষ মানুষ আমরা কি আর থাকতে পারি ঘরে, 
পাইনা খেতে এক খিলি পান মনটা কেমন করে! 

পাড়ার মোড়ে তুলসীদাসের চপ ফুলুরির দোকান,
সেখান থেকে দাও না এনে গরম গরম দু'খান।

খোকা বলে বলবো মা'কে চপ ফুলুরির কথা!!
আমরা চাইলে ধমকে দিয়ে পিঠেই দিতে ব্যথা।

এখন খোকা বলছে ডেকে আমার বয়েস ষাট,
জানি তাদের বয়েস সবে এই হয়েছে আট।

এখন মনকে সান্ত্বনা দিই এঁকেই নিজের ছবি,
জেলখানাতে বন্দী যেমন অনেক অনেক কবি।

******************

চরকা বুড়ির হীরের সুতোয় 

বেলীফুলের গন্ধ নিতে যেই নেমেছি চাঁদের দেশে
পিঁড়ি পেতে চরকা বুড়ি কাটছে সূতো ছদ্মবেশে। 
আমার সাথে খোকন ছিলো, ছিলো পরীর ছোট্ট ছানা,
রূপোর গড়া হীরের পাতে মেঘ ঢেকে র‍য় নৌকো খানা।

চাঁদের দেশে বিজলী গ্রামে বর্ষা হলেই ঝিলিক নামে
মনিমুক্তোর বাগানখানায় রোজ বিকেলে বৃষ্টি থামে।
খোকন অবাক এসব দেখে চাঁদের দেশ কান্ডখানা
চরকা বুড়ির হীরের সুতোয় জ্যোৎস্না ঢালা  উঠোনখানা।

দোয়েল ডাকা সকালবেলায় পান্থপাদপ পাতার ফাঁকে,
পরীর ডানার শুভ্র পালক স্বর্নলতায় জড়িয়ে থাকে।
বেলীফুলের গন্ধ নিতে যেই নেমেছি চাঁদের দেশে
পাহাড় থেকে তারার মালা জড়িয়ে ধরে গলায় এসে।

খোকন সোনার ঘুম ভেঙ্গে যায় দোয়েল পাখির মিষ্টি ডাকে,
স্বপ্ন বুঝি! আকাশটাতে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

*******************

কি হয়েছে তোর

কি হয়েছে তোর
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি
হচ্ছে সবে ভোর। 

বকুল গাছের কোনে
প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে আঁধার 
রাতের প্রহর গোনে।

ঘুম জড়ানো চোখে
হাঁসগুলো সব নামছে জলে
ভোরের আলো দেখে।

দুঃখ ভীষণ তোর
এখন আবার পড়ার ঘরে 
দিতেই হবে দোড়।

দীঘল নদীর ঢেউ
শাল মহুয়ার পাতার কোলে
দেখতে পায়নি কেউ।

সূর্য উঠলো হেসে
দুষ্টু খোকন যাচ্ছে ভেসে
তেপান্তরের দেশে।

কি হয়েছে তোর
জানলা দিয়ে দেখ তাকিয়ে 
পাখির ঠোঁটে ভোর। 

********

ফুলের রংয়ে 

গবুমশাই পলাশ ফুলকে 
ধমকে দিয়ে কাল
আর যেন তোর ফুলের রংয়ে 
দেখতে পাইনা লাল।
পলাশ তাকে বলল ডেকে 
সাধ্য এমন  কি!
শুনেছি তুই ছিলিশ নাকি 
দত্ত বাড়ির ঝি?

পিটতো তোকে লাল লাঠিতে 
হাত টানেরই ফলে
বিশুর কাকার মানি ব্যাগে 
হাত দিয়েছিস বলে?
এখন যে তুই হবু রাজার 
গবু হয়েই কাল
এতদিনতো দেখতি সবুজ 
এখন দেখিস লাল?

ধমকে ওঠেন গবুমশাই 
পরিবেশ যে তারই
এতদিন কি ছিলো নাকি 
লাল সবুজের আড়ি?
যেদিক তাকান সবদিকে লাল 
পলাশ শিমুল ডালে
অবাক গবু দেখতে সেসব 
ওঠেন বাড়ির চালে।

ফাগুন আকাশ টকটকে লাল,
 লাল ঢেকেছে বনে
অন্য রংয়ের সবকিছু তাই 
গিলছে আপনমনে। 
গবু ভাবে এবার কি সে 
পিট্টি খাবে শেষে,
চুপ করে সে ঘোড়ায় চড়ে 
পালায় ছদ্মবেশে।