Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

করোনা বিস্তার রোধে ধর্মগুরুদের দৌড়াত্ম থামাতে হবে মতামত

করোনা বিস্তার রোধে ধর্মগুরুদের দৌড়াত্ম থামাতে হবে

করোনা রোগী কোটি হতে আর বেশি দেরি নেই। মৃত্যুর মিছিল ৪ লক্ষ পার করে ৫ লক্ষের কোটায়। বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত প্রায় ৮০ হাজার। রোগী ১ লক্ষ হতে বেশি দেরি নেই এবং মৃত্যু হাজারের কোটা পার করছে দু’দিন আগে।  করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মুসলীম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকই আছে। পাপি, মহাপাপি থেকে শুরু করে জাত-ধর্মহীন নিষ্পাপ শিশুও আছে। এই করোনা ও মৃত্যুর মিছিলের লাইন ততই বৃদ্ধি হবে, মানুষ তাকে যতদূর টেনে নিয়ে যাবে!  

করোনা চিহ্নিত হবার প্রথমদিকে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ি ও ধর্মগুরু দাড়ি-গোঁফে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বলতেন ‘করোনা মুসলীমদের আক্রান্ত করবে না কিংবা হিন্দুদের আক্রান্ত করবে না! মসজিদ আল্লাহর ঘর, মন্দির ভগবানের ঘর ইত্যাদি ইত্যাদি। সেখানে মানুষকে কোন রোগ আক্রান্ত করবে না। সতেচনতা আবার কী?’ এইসব নানান কথা। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে এক ধর্মান্ধ লোকের বাকবিতণ্ডার ভিডিও কিছুদিন আগে ভাইরাল হয়েছিল।  

কথা হলো, ধর্ম ব্যবসায়িরা বারবার কল্পিত কথার জালে বিজ্ঞানকে আটকাবার চেষ্টা করে এবং করে আসছে। কারণ তারা জানে বিজ্ঞান বিস্ফোরিত হলে দুটি জিনিস পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। তারমধ্যে  এক নম্বরে আছে ধর্মকে পুঁজি করে  চতুরতার ব্যবসা। আর দ্বিতীয় ঘটলে মানবসমাজ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হবে চিরতরে। আপাতত দ্বিতীয়টি ঘটার সম্ভাবনা খুব কম, নেই বললেও চলে। তবে প্রথমটি দোটানায় দুলছে। জেনারেশন পরিবর্তন ঘটলে প্রথমটির এসপার ওসপার কিছু একটা ঘটবে, আশা করা যায়।

কোভিট ১৯ সম্পর্কে ধর্মব্যবসায়ি ও ধর্মগুরুদের জ্ঞান কিন্তু বিজ্ঞানের উঠোন পর্যন্ত যায় না। কারো দৌড় মসজিদ, কারো দৌড় মন্দির। এদের কেউ পানি পড়া খেয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখে, কেউ আবার গোমূত্র। সে বিবেচনায় এরা জন্মান্ধ এ কথা বলাও ভুল হবে না। ফলে এরা বিজ্ঞানের বি ও বিশ্বাস করে না।  

এই যে মহামারী ওদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো-  মসজিদ, মন্দির, গির্জা কিংবা আল্লাহ, খোদা, ভগবান, ঈশ্বর এসব করোনা চেনে না। পাপি-মহাপাপি, নিষ্পাপেরও কিছু বোঝে না। করোনার কাছে ধনী, গরিব, উঁচু-নিচু, জাত-পাত এসবের কোন ফারাক নেই। শেখালো ধর্ম-কর্ম যাই করো না কেন প্রকৃতি মাতাকে ক্ষ্যাপিয়ে তুলো না। তাতে কি কোন কাজ হলো? বা হচ্ছে বলে মনে হয়?

এত কিছুর পরেও ওদের মনের চোখ খুললো না। আমার কথায় একমত না হলে আপনার অন্তরদৃষ্টিতে চারপাশে ভালো করে তাকান। তবেই এদের আসল চেহারা দেখা যাবে। কীভাবে তারা মানুষের ব্রেন ধ্বংস করে সমাজে আধিপত্য বিস্তার করছে।  

ধর্মব্যবসায়ি ও ধর্মগুরুরা জানার পরও মানতে চায় না মনুষ্যজীবনটা একবারই হয়। এবং জীবনটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া মানে বোকামি করে আত্মঘাতী হওয়া। 

কাজেই ধর্ম-কর্ম যে যাই করুক তার ভাবনা হতে হবে- মনুষ্যজীবন মানবতার জন্য নিবেদিত না হলে, সমাজ-সংস্কৃতির মঙ্গলে কাজে না লাগলে জন্মটাই বৃথা। 

যেহেতু আমাদের সমাজের একটা অংশের মানুষ ধর্মব্যবসায়ি ও ধর্মগুরুদের কথায় ওঠেন এবং বসেন। এই অংশের মানুষেরা করোনা প্রতিরোধে সচেতনও নন। কাজেই এ সংকটে তাদের সচেতন করা সকলের দায়িত্ব।

লেখক : মাসুদ রানা সাকিল
কবি ও সম্পাদক
প্রকাশক, আইডিয়া প্রকাশন
সম্পাদক, ফিরেদেখা (সাহিত্যপত্র)
সেন্ট্রাল রোড, রংপুর।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর