Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী আজ শিল্প ও সাহিত্য

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী আজ

‘ও মন রমজানের এই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ কাকতালীয় ভাবে আজ এই ঈদের দিনেই কালজয়ী এই গানের স্রষ্টা বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের জন্মদিন। যার শক্তিশালী লেখা আর ছন্দে আজও উদ্বেলিত গোটা জাতি। 

আজ সোমবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মদিন।

সৃষ্টিশীল অনন্য প্রতিভার নাম, কাজী নজরুল ইসলাম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, নাট্যকার। চলচ্চিত্র অভিনেতা। শিল্পকলার নানান শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তাঁর কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নজরুজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয়ভাবে উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। তবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু সংগঠন ভার্চ্যুয়ালি নজরুলজয়ন্তী উদযাপন করবে। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারের জন্য ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শিরোনামে ৫৫ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। যা সোমবার সকাল ১১টা থেকে নিকটতম সময় প্রচারিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী প্রচারিত হবে।

নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে থাকছে ‘শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় যা বিকেল তিনটায় একাডেমির ফেসবুক পেজে প্রচারিত হবে। ‘নব যুগ ঐ এল ঐ’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে অনুষ্ঠানটি।

১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতার জন্য নজরুলকে দেয়া হয় সশ্রম কারাদন্ড। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি সংগীত ও চলচ্চিত্রে, পরিচালনা করেন। করেন অভিনয়ও।

১৯৪২ সালে বাকশক্তি হারান নজরুল। মাত্র ২২ বছরের লেখক জীবনে লেখেন প্রায় ৩ হাজার গান, অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস।

১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কবি। তার ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।