Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গোৎসব চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গোৎসব

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গোৎসব। এ জেলায় এ বছর ১’শ ২২টি মন্ডপে পুজা অর্চণা হচ্ছে। 

সোমবার সকাল থেকে নারিকেল বা ডাব এর সাথে আম শাখাসহ ঘট স্থাপনের পর ষষ্ঠির কল্পনার মধ্য দিয়ে শারদীয় দূর্গা পুজার শুরু হয়েছে। শারদীয় দূর্গোৎসব সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিবছরের মত এবছরও জেলায় হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ নির্বিঘেœ তাদের পুজা শুরু এবং শেষ করবে বলে আশা করছেন জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহিত কুমার দাঁ। 

এ বছর বারঘরিয়ার ২২ পুতুল প্রমিতার মৃৎশিল্পী শ্রী অসিত পাল। মন্দিরের পুরোহীত শ্রী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তাকে সহায়তাকারী তাপস চাটার্জী। এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট ১২২টি প্রতিমার পুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫৩টি, পৌর এলাকায় ২৭টি ও বিভিন্ন ইউনিয়নে ২৬টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৩১টি, গোমস্তাপুর উপজেলায় ২৬টি, নাচোল উপজেলায় ১০টি ও ভোলাহাট উপজেলায় ২টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বারঘরিয়া এলাকায় বাইশ পুতুল মন্ডপে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং অন্যন্য প্রতিমা নিয়ে পুজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছরও তেমনিভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা এলাকায় বাইশ পুতুল বিশিষ্ট আরও একটি দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয়। চৌডালা বাইশ পুতুল প্রতিমা জমিদার ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রাণ চন্দ্র সাহা ১৬৯০ খ্রীঃ ৮৮৭ বঙ্গাব্দ এবং বারঘরিয়া বাইশ পুতুল প্রতিমা বিত্তশালী ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ধনঞ্জয় সাহা মহাশয় কর্তৃক ১৭০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একই কাঠামোর ভিতর ২২টি দেবদেবীর পুতুল সমন্বয়ে গঠিত দুর্গা মায়ের পুজা বাংলাদেশ ও ভারতের আর কোথাও হয় না। এই দৃষ্টিনন্দন, সুশোভিত, বৈচিত্রময়, অনন্য প্রতিমা দর্শনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত থেকেও বহু সংখ্যক দর্শনার্থীরা আসেন। এই প্রতিমা কাঠামোতে যে সমস্ত দেব-দেবী থাকে সেগুলো হচ্ছে, গঙ্গা, শিব, দুর্গা, ল⊃2;ী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহ, অসুর, জয়া, বিজয়া, নন্দী, বিন্দী, ময়ুর, ইঁদুর, ষাঁড়, সর্প ২টি, মগর মাছ ২টি, রাম, লক্ষণ। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মোহিত কুমার দাঁ শারদীয় দূর্গোৎসব বিষয়ে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলায় এবছর মোট ১২২টি মন্ডপে দারুন উৎসাহ, উদ্দীপনার ভিতর দিয়ে দুর্গাপুজার আয়োজন হয়েছে। মন্দিরগুলো বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিটি মন্দিরে অনুদান দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ডপের প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নির্বিঘেœ যাতে পুজা অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি মন্ডপে দুটি পর্ব অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে উদযাপিত হয়Ñআরতির সময় ধূপতি নৃত্য এবং দশমীর দিন সধবা মায়েদের সিদুঁর খেলা। ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যের সাথে এ দুটি পর্ব বড় আনন্দ মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। 

উল্লেখ্য, মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে নব পত্রিকা বা কলা বউ এর পুজা সর্বপ্রথম। আদিকাল থেকেই চলে আসছে সুর (দেবতা) আর অসুরের (দানব) মধ্যে দ্বন্দ। সৎ আর অসৎ প্রবৃত্তির মধ্যে যুদ্ধ। সত্য যুগে রাজ্য হারা রাজা সুরথ রাজ্য পুণঃ প্রাপ্তি এবং পারলৌকিক সুখ-শান্তি কামনায় প্রথম দুর্গা পুজা করেন বসন্তকালে। তাই দেবীর নাম হয় বাসন্তী, আর ত্রেতা যুগে রাবণের কবল হতে সীতাকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে শ্রী রামচন্দ্র অকালে দুর্গা পুজা করেন। এজন্য এই পুজাকে অকাল বোধন বা শারদীয় দূর্গা পুজা উৎসব বলে। সেই থেকেই চলমান দুর্গাপুজা। দুর্গাপুজার মূলতত্ত¡ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন, অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির উদয়। ঐক্য, সাম্য, সমত্ব, মৈত্রী, ধৈর্য্য, প্রেম প্রভৃতি মানবিক গুনাবলী অর্জন ও ষড়রিপুর দমন বা বর্জন করাই এ পুজোর মুল আদর্শ ও শিক্ষা বলে জানান তিনি।