Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া খনির অপারেশন এরিয়া সম্প্ররসারণ হচ্ছে দিনাজপুর

পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া খনির অপারেশন এরিয়া সম্প্ররসারণ হচ্ছে

পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অপারেশন এরিয়া উত্তর ও দক্ষিণ দিকে স¤প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন কারণে যদি খনির বর্তমান অপারেশন এরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয় তারপরও যেন কয়লা উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  

এদিকে, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বড়পুকুরিয়া খনি এখন দেশে জ্বালানি খাতে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠানটি কয়লা বিক্রিলব্ধ অর্থ থেকে গত ছয় বছরে মুনাফা করেছে ১ হাজার ৪শ’ ২৯ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। এছাড়া এ খনি সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

জানা গেছে, ২১ বছর আগে ১৯৯৪ সালের জুন মাসে দেশের প্রথম খনি হিসেবে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উন্নয়ন প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) খনির উন্নয়ন কাজ শুরু করে।  ২০০১ সালের জুনে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু খনির উত্তর-পশ্চিম দিকে কয়লা মজুদের সেন্ট্রাল মাইনিং ডিস্ট্রিক্ট উন্নয়নকালে ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল একটি ফাটল দিয়ে হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে সুড়ঙ্গ পথ ও শ্যাফট প্লাবিত হয় এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি’র দুইজন চীনা শ্রমিক নিহত হয়। এ দুর্ঘটনার পর প্রায় আড়াই বছর কাজ বন্ধ থাকে। এ সময় বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয় বড়পুকুরিয়া খনি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান না হয়ে পেট্রোবাংলার শ্বেতহস্তিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় কোন কোন মহল থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলেরও দাবি জানানো হয়। পরবর্তীতে মাত্রাতিরিক্ত পানি প্রবাহ রোধকল্পে সিএমসি খনির মূল ডিজাইন পরিবর্তন করে এবং খনির সেন্ট্রাল পার্টের উত্তর-পশ্চিম দিকের পরিবর্তে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আবার উন্নয়ন কাজ শুরু করে ২০০০ সালের অক্টোবরে। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে প্রায় ১ হাজার ৪শ’ কোটি ৩২ লাখ টাকা (২৫১.০৮ মিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে ২০০৫ সালের জুনে খনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়। ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর খনির ৬ষ্ঠ সীমের প্রথম স্লাইসের ১১১০ নম্বর কোলফেইস থেকে মাল্টিস্লাইস লংওয়াল পদ্ধতিতে কয়লার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ (এম অ্যান্ড পি) ঠিকাদার সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম। এ পদ্ধতিতে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হতো। পরে ২০১৩ সালের মে মাস থেকে সর্বাধুনিক লংওয়াল টপ কোল কেভিং (খঞঈঈ) পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্লাইস থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে। সূত্রমতে, ১৯৯৮ সালে ৫ এপ্রিল বিপর্যয়ের পর মূল ডিজাইন পরিবর্তন করায় খনির সেন্ট্রাল পাটের উত্তর-পশ্চিম দিকে পড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুদ। তাছাড়া পরিবর্তিত ডিজাইনেও খনির জটিল এলাকা থেকে কয়লা আহরণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে কোন কারণে যদি বর্তমান অপারেশন এলাকা থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে খনির সেন্ট্রাল পার্টের উত্তর ও দক্ষিণ দিক স¤প্রসারণ করে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ লাখ ৩২ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ৬৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৭ টন কয়লা বিক্রি করে খনির আয় হয়েছে ৪ হাজার ২৫৮.১৬ কোটি টাকা। এ থেকে ১ হাজার ৭৮.৮৩ কোটি টাকা ভ্যাট, ট্যাক্স ও রয়ালিটি বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে খনিটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং গত ছয় বছরে মুনাফা করেছে ১ হাজার ৪২৯.৮১ কোটি টাকা।  এছাড়া কোম্পানি পর্যায়ে বড়পুকুরিয়া খনি বিগত তিন অর্থবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় সেরা দশ করদাতা সম্মননা পেয়ে আসছে। এ খনির কয়লা দিয়ে পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়ার ২৫০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২৫ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ দেশের ইটভাটা ও শিল্পকারখানার জ্বালানির চাহিদা অনেকটা পূরণ করছে এ খনির কয়লা। ইটভাটায় পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করার ফলে বৃক্ষ নিধনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান  জানান, খনি ভূ-গর্ভে বর্তমান অপারেশন এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ দিক স¤প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ঋবধংরনরষরঃু ঝঃঁফু) জন্য ২১ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরামর্শক ফার্ম নিয়োগের দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রাখার স্বার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  তিনি আরও জানান, দেশের জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে কয়লার ভূমিকা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খনি থেকে উন্নতমানের (বিটুমিনাস) কয়লা উৎপাদিত হচ্ছে। এর তাপজনন ক্ষমতা অনেক বেশি। সালফারের পরিমাণ অতি নগণ্য এবং অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব।  ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তর বড়পুকুরিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের ১১৯ মিটার থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় কয়লা আবিষ্কার করে। এখানে ৬.৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে ৩৬ ফুট পুরু ৬টি সীমে (স্তর) মজুদ কয়লার পরিমাণ ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিকটন। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ৬০ মিলিয়ন টন। প্রথম পর্যায়ে ৩ বর্গ কিলোমিটার সেন্ট্রালপার্ট থেকে ভূ-পৃষ্ঠের ২৯০-৪৫০ মিটার গভীর থেকে প্রতিবছর ১ মিলিয়ন টন করে ৩০ বছরে ৩০ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হবে।