বসন্তের আগমনে নবীনদের কলতান
বর্ণিল আয়োজনে নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিলো বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ক্যাম্পাস / 
মাহেনুর জাহান : বর্ণিল আয়োজনে নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিলো বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) কলেজে নবীনদের বরণ করে নেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য সেই বিখ্যাত কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ লিখেছেন এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। নতুন আসবে, আর সবাই তাকে বরণ করবে সাদরে। এটাই পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম।
বুধবার সকাল আটটা থেকেই গ্রীণ রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ নবীনদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। বসন্তের আবেশে সজ্জিত কলেজ প্রাঙ্গণ যেন তাদের পদচারনায় হয়ে ওঠে আরও বেশি সজীব, প্রাণবন্ত।
নবীন বরণের এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি অধ্যাপক ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
নবীনদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীরা ফলাফল থেকে শুরু করে কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। তোমরাও এখন সেই ধারা অব্যাহত রাখবে, কলেজের সুনাম আরও বাড়িয়ে তুলবে। তোমাদের সেই প্রচেষ্টায় সবসময় পাশে পাবে আমাদের।”
শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, এই কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক আরও বলেন, “মেয়েরা এখান থেকে শুধু একটি সনদ নিয়ে চলে যাচ্ছে তা না। গার্হস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষার মাধ্যমে তারা স্বনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক জ্ঞান নিতে পারছে। নিজেদের তৈরি করতে পারছে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। এই যে কলেজটি এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। দু-একটি ছাড়া সাজানোর উপকরণ সবই তাদের হাতে বানানো।”
১৯৯৬ সালে ভাড়া করা বাসায় যাত্রা শুরু করে বর্তমানে নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত। এখানে পাঁচটি বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বিভাগগুলো হচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেণরশীপ, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা এবং বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগ।
কলেজের শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজনে তাদের পরিবেশনা তুলে ধরেন। যার প্রতিটি আয়োজন ছিল শিক্ষামূলক, শুধুই বিনোদন কেন্দ্রিক নয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রূপশ্রী চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি একটি পরিবার। আজ থেকে তোমরাও এই পরিবারের সদস্য হলে। আমি চাই তোমরা এখান থেকে জীবনমুখী শিক্ষা গ্রহণ করো। বাস্তব জীবনে এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাও।”
উপাধ্যক্ষ আয়েশা আক্তার বলেন, “এই কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রয়েছে সুসম্পর্কের মেলবন্ধন। সেই বন্ধনে যুক্ত হয়ে তোমাদের আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে হবে, হতে হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফলাফল ভালো করার পাশাপাশি ভালো করতে হবে আচার-ব্যবহার। তোমাদের হয়ে উঠতে হবে একজন ভালো মানুষ।”
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ প্রতি বছর কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চেয়ারম্যানস অ্যাওয়ার্ড এবং হারুণ কাদের মোহাম্মদ ইউসূফ বৃত্তি।
এরই ধারাবাহিকতায় নবীন বরণ অনুষ্ঠানের শুরুতেই পাঁচ বিভাগের প্রতিটি থেকে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় ‘চেয়ারম্যানস অ্যাওয়ার্ড’। এবারের বিজয়ীরা হলেন খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের মোসাম্মত সাবরিনা মমতাজ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেণরশীপ বিভাগের সুমাইয়া আক্তার সারা, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের শ্রাবণী রায়, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগের সাইকা আঞ্জুম এবং বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের সানজানা সাজনিন আনিকা। তারা প্রত্যেকে পাবেন একটি সনদ এবং পাঁচ হাজার টাকা।
প্রতিটি বিভাগের শেষ বর্ষে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের দেওয়া হয় ‘হারুণ কাদের মোহাম্মদ ইউসূফ বৃত্তি’। ২০১৭ সালে পাঁচ বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে বৃত্তি পান শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগের শারমিন সুলতান। ২০১৮ সালের জন্য বৃত্তি পান খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের আফজালুন্নেসা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেণরশীপ বিভাগের সুমনা তাবাসসুম, শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগের নমীতা বৈদ্য এবং বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের সাদিয়া আফরিন লিমা। তারা প্রত্যেকে পাবেন সনদ এবং ১০ হাজার টাকার শিক্ষা বৃত্তি।
এছাড়াও প্রতিবছর ২০ জন অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীর পূর্ণ এবং অর্ধ বেতন মওকুফ করা হয়।
নবীনদের অনুপ্রাণিত এবং উৎসাহিত করতে তাদের উপস্থিতিতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়।