Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

বিশ্ব জয় করলো বাংলাদেশের যুবারা খেলাধুলা

বিশ্ব জয় করলো বাংলাদেশের যুবারা

ভারতকে হটিয়ে বিশ্ব জয় করলো বাংলাদেশের যুবারা। কোয়ার্টারে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এবার আরেকটি রেকর্ড গড়লো যুবা টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।এরই সাথে বিশ্বকাপজয়ী দল হিসাবে ইতিহাসের পাতায় উঠে গেল বাংলাদেশের নাম। ক্রীড়াক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা।

বড়দের ক্রিকেটে তো বটেই, ছোটরাও ভারতের সঙ্গে দারুণ লড়াই করলেও সাফল্য হাত ফসকে গেছে অনেকবার। গত দুই বছরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের হার সেটাই প্রমাণ করে। ২০১৮ সালে যুব এশিয়া কাপ সেমিফাইনালে মাত্র ২ রানে হেরে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতকে ১৭২ রানে আটকে দিলেও তারা থামে ১৭০ রানে। আর গত বছর আগস্টে ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে তো পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ২৬১ রান করে হারে ৬ উইকেটে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে দুই দল মুখোমুখি হয় এশিয়া কাপ ফাইনালে। ভারতকে ১০৬ রানে অলআউট করেও ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ১০১ রানে অলআউট হয়ে আরেকটি হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। টানা তৃতীয় ফাইনালে ভারত গেরো কাটালো বাংলাদেশ, তাও আবার বিশ্বমঞ্চে।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। ভালো সূচনার পর মাঝে পরপর উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা। সেখান থেকে আকবর আলী, ইমন ও রাকিবুলের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা। 

এর আগে ৪১ ওভারে ৭ উইকেট ১৬৩ রান করার পর বাংলাদেশের মনে শঙ্কা জাগিয়ে নামে বৃষ্টি। এর আগে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫৪ বলে ১৫ রান। খুব সহজ জয়ের কাছে টাইগাররা। বৃষ্টির পর কী হয় ভয় ছিল। খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের জন্য বৃষ্টি আইনে ৩০ বলে ৭ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ৭ রান করতে খেলে ৭ বল।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকর আলী ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৪৭ রান করেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রাকিবুল। ভারতীয় স্পিনার বিশোনি ৪ উইকেট শিকার করেন।

ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। দলীয় ৫০ রানে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড-উইকেটে কার্তিকের হাতে ক্যাচ হন তানজিদ। ওপেনিং জুটি ভাঙতেই বিপদে পড়ে যায় টাইগার যুবারা। পরের ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন।

সেমিফাইনাল ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল হাসান জয় ফিরে যান ব্যক্তিগত ৮ রানে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় রানের খাতায় খুলতে পারেননি। ১৫তম ওভারে এলবিডব্লিউ হন তিনি। দলীয় ৬৫ রানে স্ট্যাম্পিং হন শাহাদাৎ হোসেন। ১০ বল খেলে তার সংগ্রহ ১ রান।

উইকেট পড়লেও আশা ছিল কেউ না কেউ হাল ধরবেন। কিন্তু তেমন কাউকে দেখা গেল না। শামীম হোসেনের ব্যাটিংয়ে সুনাম থাকলেও ১৮ বলে ৭ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। দলীয় ১০৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ে গেলে আকবর আলীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে মাঠ ছাড়া ইমন।

এই জুটি দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াই করে যাচ্ছিল। ইমন খোঁড়া পা নিয়ে দেশের জন্য লড়ে যাচ্ছিলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্বপ্নজয়ের পথে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ৩২তম ওভারে। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে আকাশ সিংয়ের হাতে ক্যাচ হন তিনি। এরপর রাকিবুল হাসানকে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন আকবর।

ধীরে ধীরে যখন বাংলাদেশ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ৪১তম ওভারে বৃষ্টি নেমে আসে। যুবা টাইগারদের রান তখন ৭ উইকেটে ১৬৩ রান। ৫৪ বলে দরকার তখন মাত্র ১৫ রান। ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে তখনও বাংলাদেশ ১৮ রানে এগিয়ে ছিল।

বৃষ্টি শেষে পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ডিএল পদ্ধতিতে তখন যুব টাইগারদের দরকার হয় ৩০ বলে ৭ রান। সেই রান নিতে কোনো বেগ হতে হয়নি বাংলাদেশকে। অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ‍যুব টাইগাররা। 

এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে নেমে শুরু থেকে ভারতকে চাপে ফেলে টাইগার যুবারা। অভিষেকের মাধ্যমে প্রথম সাফল্য পায় আকবর আলিরা। ৯ রানের মাথায় দিব্যাংশ সাক্সেনার উইকেট তুলে নেন তিনি। 

দ্বিতীয় উইকেটে নিজেদের সামলে নেয় ভারতীয় যুব দল। জয়সওয়াল ও তিলক ভার্মা ৯৪ রানের জুটি গড়েন বেশ আস্থার সঙ্গে। ৩৮ রানে তিলককে ফেরান পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ১১৪ রানের মাথায় ছন্দে থাকা স্পিনার রকিবুল ফেরান অধিনায়ক প্রিয়াম গার্গকে। 

ধাক্কা সামলে ভারতের হয়ে লড়াই করেন যশস্বী জয়সওয়াল। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শরিফুলের শর্ট পিচ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ৮৮ রানে। মিড উইকেটের সহজ ক্যাচ লুফে নেন তানজিদ হাসান তামিম। এরপরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। পরের বলে সিদ্ধেশ বীরকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল।

মাত্র ২১ রানের ব্যবধানে পরপর ৭ উইকেট পড়ে ভারতীয় যুবাদের। শরিফুলের পর বিশ্বকাপে গতির ঝড় তোলেন অভিষেক দাস। ৪৫তম ওভারে অথর্ব আনকোলেকর ও কার্তিক তিয়াগির উইকেট তুলে নেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো এবারের আসরে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন অভিষেক। এর মাঝে রানআউটের শিকার ধ্রুব জুড়েল ও রবি বিষ্ণই। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সুশান্ত আউট হন সাকিবের বলে। এতে ৪৭.২ ওভারে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট হয় ভারত।

ফল : বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ফাইনাল : আকবর আলী (বাংলাদেশ)।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট : যশওয়াল (ভারত)।