Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সনৎ বসু’র অণুগল্প ‘জীবন মৃত্যু ভালোবাসা’ শিল্প ও সাহিত্য

সনৎ বসু’র অণুগল্প ‘জীবন মৃত্যু ভালোবাসা’

মাঘী পূর্ণিমার চাঁদ ৷ মাঝ আকাশে ৷ নীচে মায়াময় পৃথিবী ৷
চার তলার ছাদে দাঁড়িয়ে ঋষভ ৷ একা ৷ রাত প্রায় এগারোটা ৷
জনহীন গলিপথ হালকা আলোর ঘেরাটোপে ৷ দক্ষিণের মাঠ থেকে উড়ে আসছে পড়ন্ত শীতের হালকা হাওয়া ৷
চারপাশে অলীক স্বপ্নের জাল ৷ 
ঋষভ এই মুহূর্তে অস্থির ৷ অগোছালো চিন্তার জটাজালে বন্দী ৷
পাপিয়ার খাওয়া শেষ হল? খাওয়ার আগে ইনসুলিন নিয়েছে তো! ইদানীং সব কিছুতে ভুল হচ্ছে পাপিয়ার৷ সারাক্ষণ পিনাকীর চিন্তা ৷ পিনাকী অরুণাচলে ৷ চীন বর্ডারে ৷
ডাক্তার বারবার বলেছে ৷ ওষুধগুলো ঠিকঠাক খেতে ৷ রোজ সকাল বিকেল রাস্তায় ঘন্টাখানেক হাঁটতে ৷
পাপিয়া কিছুই মানছে না ৷
এই নিয়ে দুজনের মধ্যে এক চোট হয়ে গেছে গতকাল ৷ রাগলে ঋষভের মাথা ঠিক থাকেনা৷ মুখ দিয়ে অকথা কুকথা বেরিয়ে যায় ৷
ঝাঁঝ সহ্য করতে না পেরে পাপিয়া বাচ্চা মেয়েদের মতো কাঁদে ৷ সংসার ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে চায় ৷
পিনাকী এখন বুমলাপাসে ৷ মাইনাস বারো ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৷ ট্রেঞ্চের ভিতর ৷ স্লিপিংব্যাগের ভেতরে ৷ হোয়াটসঅ্যাপে মাকে ছবি পাঠিয়েছে ৷ একদম চিন্তা করতে নিষেধ করেছে ৷
কিন্তু মায়ের মন ৷ একমাত্র ছেলে ৷ ক'দিন ধরে স্মার্টফোনে দেখাচ্ছে কাশ্মিরের পুলওয়ামায় অতগুলো তরতাজা জোয়ানের নৃশংস হত্যা ৷
সন্ত্রাসবাদ ৷ কত ভয়ংকর ৷ কত ক্ষমতাবান ৷ রাষ্ট্র সেখানে অসহায় ৷
পাপিয়ার চিন্তায় চিন্তায় ঘুম হয় না ৷ অত ওষুধেও সুগার কমে না ৷ কোন ভরসায় বিয়ে দেবেন ছেলের ৷ ওরও তো নিজস্ব একটা জীবন চাই ৷ মা হয়ে  একটা ফুলের মতো মেয়ের  জীবন তছনছ  করে দেবেন!
ঋষভ বোঝেন ভুলটা তারই ৷ পাপিয়ার মনের অবস্থা তার বোঝা উচিত ছিল ৷
স্বপ্নের পৃথিবী ছেড়ে লিফটে নেমে আসেন দোতলায় ৷
চাঁদটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ৷ মাঘী পূর্ণিমার চাঁদ ৷খোলা জানলায় যেন ডাকছে ৷
দূরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ৷ অনর্গল গাড়ি চলাচল ৷ আলো ঝলমল ৷
ডাক্তার বলেছে ব্লাডে়র এইচ বি এওয়ান সি টা একবার চেক করাতে ৷ ডাইবিটিস ইজ এ সাইলেন্ট কিলার ৷ হুঁশিয়ার না থাকলেই বিপদ ৷ তাই অলওয়েজ বি কেয়ারফুল  মিস্টার ঋষভ দত্ত ৷
ছেলেটা বাড়ির অমতেই আর্মিতে চলে গেল ৷ কলকাতায় কোথায় চাকরি ৷
বেশ চলছিল ৷পুলওয়ামার ঘটনাটাই সব হিসেব পাল্টে দিল ৷ ফোর্সের উপর এত বড়ো অ্যাটাক!
পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢোকে ঋষভ ৷ পাপিয়া ঘুমোচ্ছে ৷সব জানলা খোলা ৷ ভরা জ্যোৎস্না হামলে পড়েছে বিছানায় ৷
আটষট্টি বছরের ঋষভের চোখে তার ছোট্ট ঘরটা যেন স্বপ্নের খেলাঘর ৷
টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ ঋষভ ৷ পাপিয়াকে দেখে ৷ আলুথালু চুল ৷ সিঁথিতে সিঁদুর ৷ ভরা পূর্ণিমায় কি আঁচল ছড়িয়ে স্নান করছে পাপিয়া!  কিন্তু চোখের কেন অশ্রু কেন!
হঠাৎ উঁকি দিয়ে যেন হারিয়ে যায় বছর পঁয়ত্রিশ আগের কয়েকটা মোহময় দিন ৷
ঋষভ পা টিপে টিপে জানলার ধারে সরে যায় ৷
পাপিয়া যে এইমাত্র পাশ ফিরে আকাশের দিকে মুখ করে শুলো।