Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সন্তান চিরনিদ্রায় শায়িত, মা কারাগারে! নড়াইল

সন্তান চিরনিদ্রায় শায়িত, মা কারাগারে!

আপনাদের আইনের খাতায় কোন জায়গায় কি লেখা আছে? যার সন্তান মারা গেছে, যে মা দশ মাস দশ দিন পেটে রাখছে, সেই মা রে কি মৃত সন্তানের মুখটা শেষ বারের মত দেখতে দেয়া যাবেনা? আপনারা তাকে (মৃত সন্তানের মা কে) নিয়ে যাবেন? নিয়ে যান। মরা সন্তানের মুখটাতো একবার দেখতে দেবেন। আপনার আইনের খাতায় কি কোন জায়গায় লেখা আছে? এরকম আইন কি আপনারা গড়ছেন? 

দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া তিথি খানমের মৃত্যুর রহস্য জানতে শনিবার (৩১ জানুয়ারী) দুপুরে তার বাড়িতে গেলে তিথির বড় বোন কাজলী বেগম উপরোক্ত প্রশ্নগুলি একের পর এক করতে থাকেন সমাজের বিবেকবান মানুষ, পুলিশ প্রশাসন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে। এ সময় কাজলীর দুই চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরলেও প্রতিটি কথায় ছিল নিরব প্রতিবাদের ইঙ্গিত। তিথি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত ছিরু সরদারের মেয়ে। সে জয়পুর জেসিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। তবে তিথির আত্মহত্যার সুনির্দিষ্ট কারন এখনও জানা যায় নি। 

তিথির চাচা জিরু সরদার বলেন, গত বুধবার সন্ধার একটু আগে নিজের ঘরে আঁড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় তিথি খানম। এর কিছু সময় পর তিথির মা চম্পা বেগম ঘরে ঢুকতে গেলে ভেতর থেকে দরজা জানালা বন্ধ পায়। প্রতিবেশিদের সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে তিথির ঝুলন্ত নিথর দেহ লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। জিরু সরদার আরও বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ ছিলনা আমাদের। কিন্তু পরের দিন  বৃহস্পতিবার লোহাগড়া থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য তিথির মরাদেহ নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এর পর তিথির মা চম্পা বগেমকে একটি স্বাক্ষর করার কথা বলে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জানতে পারলাম নিজের সন্তানকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে চম্পাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। 

প্রতিবেশী মাছুরা খানম। তিনি লোহাগড়া সরকারি কলেজের ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্রী। একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় তিথির সাথে ছিল বান্ধবীর মত সম্পর্ক। মাছুরা বলেন, তিথির আত্মহত্যার ২০/২৫ মিনিট আগে আমার সাথে ছিল। তখন তিথি পেটে ব্যথা হওয়ার কথা বলে বাড়ি চলে যায়। এর পর পরই জানতে পারি সে আত্মহত্যা করেছে।  

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর বিশ্বনাথ দাস বলেন, তিথির বাবা ২০০৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে চম্পা বেগম অন্যের বাড়ি বাড়ি কাজ করে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন। আমরা শুনেছি তিথি প্রায়ই শারীরিক ভাবে অসুস্থা থাকত। পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিথির দাফনের আগে অন্তত এক বারের মত মা চম্পাকে সন্তানের মুখখানা শেষ বারের মত দেখার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সেই সুযোগ তারা দেন নি। 

এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমানউল্লাহ আর বারী বলেন, নিহতে মা চম্পা বেগমকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছ।