Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

অমর একুশে গ্রন্থমেলা : রংপুরের প্রকাশক-লেখক, ছাপাখানা ও বাঁধাই শিল্পীরা ব্যস্ত রংপুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা : রংপুরের প্রকাশক-লেখক, ছাপাখানা ও বাঁধাই শিল্পীরা ব্যস্ত

শারমিন আক্তার, রংপুর : প্রতিযোগীতামূলক পৃথিবীতে সভ্যতার অগ্রগতির জন্য বইয়ের বিকল্প কিছু নেই। নিজেকে জানতে হলে, বুঝতে হলে এবং দক্ষ করে তুলতে হলে বই পড়াই একমাত্র পথ। ভালো বই মানুষকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। ভালো বই কাউকে প্রতারণার শিক্ষা দেয় না। বরং প্রতারণাকে চিহ্নিত করার কৌশল শিখিয়ে দেয়।

শুরু হচ্ছে প্রাণের বইমেলা। বইমেলাকে ঘিরে ব্যস্ততা রংপুরেও। প্রকাশকদের তথ্যমতে এবারের বইমেলাকে ঘিরে রংপুর থেকে প্রকাশিত হবে প্রায় অর্ধশতাধিক বই। গত ১০ বছরে প্রায় ২শতাধিক বই প্রকাশ করেছে রংপুরের আইডিয়া প্রকাশন। এছাড়াও অন্যান্য ছোট্ট প্রকাশনা সংস্থাগুলো প্রকাশ করেছে বেশ কিছু বই। এবারের মেলাকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে রংপুরের প্রকাশক-লেখক, ছাপাখানা ও বই বাঁধাই শিল্পীরা।

‘ঘরে ঘরে পাঠাগার, জনে জনে পাঠক’ এই স্লোগানে রংপুর অঞ্চলের সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীল বই প্রকাশনাকে প্রসারিত করার কাজ করছে আইডিয়া প্রকাশন। ঢাকা কেন্দ্রীকতার সাথে তাল মিলিয়ে রংপুরের প্রকাশনা শিল্পকে তুলে ধরছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সবার কাছে বই পৌঁছে দিতে হবে এ সংকল্প নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন পাঠাগার ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ৫হাজারের মতো বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশক কবি মাসুদ রানা সাকিল। প্রতিষ্ঠানটি অংশগ্রহণ করছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেলায়। জ্ঞান বিতরণকারী এ প্রতিষ্ঠানটি রংপুর অঞ্চলের লেখকদের জন্য উন্মোচন করেছে নতুন দুয়ার।

আসন্ন বইমেলা, বইপড়া ও সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা সম্পর্কে আইডিয়া প্রকাশন’র প্রকাশক মাসুদ রানা সাকিল জানান, আমরা চাই ‘ঘরে ঘরে পাঠাগার, জনে জনে পাঠক’। বর্তমানে আসন্ন অমর একুশে বইমেলাকে ঘিরে আমাদের ২০টির অধিক বই প্রকাশের অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে আমাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২শতাধিক। আমরা একেবারে অলাভজনকভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করে এ কাজ করছি। আমাদের নিজস্ব একটি পাঠাগার আছে। এছাড়াও বইপড়াকে উৎসাহিত করে আমরা প্রায় ৫হাজারের মতো বই বিভিন্ন পাঠাগার ও ব্যক্তি পর্যায়ে  বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। রংপুর এমন একটি শহর যেখানে একাডেমিক শিক্ষার বাইরে সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা করার মানুষের ব্যাপক অভাব। আমার ধারণা এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি মানুষ সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা বা একাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়ায় আগ্রহী নয়। সেরকম জায়গায় একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত দুরূহ কাজ জেনেও আমরা স্বপ্ন দেখছি মানুষ একদিন বইমুখী হবে।

বইমেলা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন আকবর জানান, আমরা যারা লেখালেখি করি তাদের জন্য ঢাকায় গিয়ে বই প্রকাশ করা ছিল অত্যন্ত কঠিন, স্বপ্নের মতো। আমরা যতই সাহিত্যচর্চা করি এসব তুলে ধরার ক্ষেত্রে মূল ভ‚মিকাই রাখেন প্রকাশকরা। হাজারও লেখকের সমষ্টি হলেন একজন প্রকাশক। সম্প্রতি এ অঞ্চলে আইডিয়া প্রকাশন’র বই প্রকাশের উদ্যোগ এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ তা রংপুরের সাহিত্যচর্চায় নতুন এক মাত্রায় যুক্ত করেছে। আমার জানা রংপুরের অনেক কবি সাহিত্যিক আছেন, যারা নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করলেও বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন সুযোগ ছিল না। সম্প্রতি রংপুরের প্রকাশকরা সে সুযোগ করে দিয়েছে। এতে করে রংপুরের পাঠক এবং লেখক উভয়ের মধ্যেই সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে। আইডিয়া প্রকাশন ছাড়াও কয়েকটি ছোট্ট ছোট্ট প্রকাশনা কাজ করছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রংপুরে সাহিত্যচর্চা বাঁক পরিবর্তন ঘটবে আশা করা যায়।

ঢাকার বাইরে সাহিত্যচর্চা, বইমেলা এবং প্রকাশনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সাহিত্যিক ও অধ্যাপক আতাহার আলী খান জানান, আমরা অনেক জায়গায় বলিÑ ‘বই বেশি বেশি পাঠ করতে হবে’। এক্ষেত্রে বইমেলা, লাইব্রেরি ও প্রকাশনা একে অপরের পরিপূরক। আঞ্চলিক পর্যায়ে সাহিত্যচর্চা এবং বই প্রকাশ খুবই কঠিন কাজ। এ ধরণের কাজকে উৎসাহিত করা সকলের উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এবং সরকারেরও উৎসাহ দেয়ার ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখা দরকার। তবে এ সকল কাজের ক্ষেত্রে সুচিন্তিত নীতিমালা আরোপ করারও দরকার আছে।

গত ১০ বছর আগেও রংপুর থেকে বই প্রকাশ করে জাতীয় গ্রন্থমেলায় তুলে ধরার ছিল না কোন সুযোগ। কারণ গত ১০ বছর আগেও কোন সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা রংপুরে ছিলো না। এ অঞ্চলের লেখকদের ঢাকা যেয়ে বই প্রকাশ করতে হতো। তাতে ছিল নানান রকমের সমস্যা ও সংকট। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ বই প্রকাশ করলেও সেগুলো জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার কোন জায়গা ছিল না তাদের। যে কারণে এ অঞ্চলের সাহিত্যচর্চা ছিল শুধুমাত্র রংপুর কেন্দ্রীক। এ অঞ্চলের সাহিত্যচর্চার ঐতিহ্য থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক সাহিত্যচর্চার অভাব ছিল ব্যাপক। প্রকাশের সুযোগ না থাকায় লেখালেখিতে যারা ভালো ছিল তারাও একসময় অনাগ্রহী হয়ে পড়তেন। 

রংপুর অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও নেই এ ভাষার গুণগত টেকসই সাহিত্যচর্চা। বরং এ অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতিকে এক প্রকার গরিব, খেটে খাওয়া ও অশিক্ষিত লোকের ভাষা-সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করে কেউ কেউ। জাতীয় পর্যায়ে এই অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে যুগের চাহিদামাফিক তুলে না ধরার ফলে ঐতিহ্যবাহী রংপুরের ভাষা ব্যবহারেও ঝিমুনি ধরেছে বলে অভিমত অনেকের। ফেলো, নিউজ নেটওয়ার্ক