দৌলতদিয়ায় অবৈধভাবে মাটি খনন, ৬ জনকে জরিমানা রাজবাড়ী / 
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের ফেলু মোল্লার পাড়া গ্রামে অবৈধ ভাবে এক্সকেভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগে ৬ জনকে জরিমানা ও দুটি খননযন্ত্র এবং ১ টি ট্রাক জব্দ করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আটকের পর জরিমানা প্রদানকারীরা হলেন, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামউদ্দিন পাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লার ছেলে ফারুক মোল্লা (৩০), উত্তর দৌলতদিয়া ৬নং ওয়ার্ডের তারক আলীর ছেলে বেলায়েত মন্ডল (৫০), সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৩), রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর খানখানাপুর গ্রামের আক্কাছ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা (২৭), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল আওয়াল (২২), ফরিদপুর সদর উপজেলার হাড়োয়াডাঙ্গি গ্রামের ইউছুফ খানের ছেলে জসিম খান (৩১)।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরকারী খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে একাধিক খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকশ গজ দুরে মূল পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গেলেও বর্তমানে সেখানে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। এখান থেকে কাটা মাটি ট্রাকে করে পরিবহনের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। এ সময় সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকটি ট্রাক দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। আটক করা হয় দুইটি খনন যন্ত্র ও একটি ট্রাক। গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে।
এ সময় স্থানীয় ফরমান শেখ বলেন, ২ সপ্তাহ আগে আমার নিজের জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় বেলায়েত, খোকন, ফারুক, ওহাবসহ কয়েকজন খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমি বাঁধা দিলে তখন তারা চলে যায়। আবার দুইদিন ধরে আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধাই তারা মানতে নারাজ।
স্থানীয় আব্দুল সালাম মোল্লা, রহমান খানসহ অনেকেই জানান, গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়। এ অবস্থায় গ্রামটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। এই শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বছর হয়ত এই গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের অন্তত ২শ পরিবারকে ঝুকিতে ফেলে অবৈধ ভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ না হলে আগামী বর্ষায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
দন্ডপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন দাবি করেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে তা খনন যন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জোরজবরদস্তি করে করে মাটি কাটা হয়নি। তিনি আরো বলেন, গত বর্ষায় জমি-জমা ভেঙে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা জমির মাটি বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা হাতে পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারী খাস জমি অথবা মালিকানাধীন জমিতে ইচ্ছে মত মাটি খনন করা আইনত অপরাধ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে খনন কাজ বন্ধ করা সহ একটি ট্রাক, দুইটি এক্সকেভেটর (খনন যন্ত্র) জব্দ করা হয়। এছাড়া এই বে-আইনী কাজে জড়িত থাকার দায়ে ৬ জনকে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।