Opu Hasnat

আজ ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ২০২৩,

পাইকগাছায় সুকুমার রিশির মৃত্যু রহস্য-৭

সুকুমারসহ ৫জনকে স্প্রীট খাওয়ানো হয় : সবাই অসুস্থ হলে সুকুমারের মৃত্যু হয় খুলনা

সুকুমারসহ ৫জনকে স্প্রীট খাওয়ানো হয় : সবাই অসুস্থ হলে সুকুমারের মৃত্যু হয়


পাইকগাছায় সুকুমার রিশির স্প্রীট পানে মৃত্যু হয়েছে। সুকুমারসহ ৫ জন স্প্রীট পান করা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ডাক্তার প্রভাত বলছে, নিহত ও অসুস্থদের এ্যালকো খাওয়ানো হয়েছে। মৃত ও সুস্থদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে স্প্রীট খাওয়ানো হয়েছে। 

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার মামুদকাটি গ্রামের নির্মল রিশি তার অসুস্থ সন্তানের জীবনের বদলে জীবন দিয়ে জোরা দেলপূজা মানত করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৩/০৪/২০১৫ তারিখ, সোমবার পূজার জন্য নির্মল রিশি দীপক, সুকুমার, রাম, প্রশান্ত ও পলাশকে কিসেন নেয়। সন্ধ্যায় তাদেরকে শিবঠাকুর নিয়ে গ্রামের ডাক্তারের প্রভাতের বাড়ীতে পাঠায়। তারপর ডাক্তার প্রভাত ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে বলে আমার ঘরে মদ নাই। তোমরা আমার কাছে এ্যালকো আছে তাই খাও। এই বলে তাদের ৫জনকে চায়ের কাপে করে সবাইকে খেতে দেয়। খাওয়ার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপরে তারা জানতে পারে তাদেরকে স্প্রীট খেতে দেয়া হয়েছে। সবাই স্থানীয় পল­ী ড্ক্তাার বাসুদেবের কাছে চিকিৎসা নিতে থাকে। এর মধ্যে সুকুমারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়। সুকুমারের পিতা-মাতা উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলে নির্মল তাদেরকে বাঁধা দিয়ে বলেন, কিসেনের টাকা, গামছা, গেঞ্জি ও সন্ন্যাসী দিয়ে নিয়ে যাও। সুকুমারের অবস্থা গুরুতর হলে নির্মল স্থানীয় চৌকিদার সুধান্য মাধ্যমে সুকুমারের পিতা-মাতার কাছে পাঠিয়ে দেয়। তার পরিবারের লোকজন উন্নত চিকিৎসা দেয়ার আগে সুকুমার মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করার জন্য টাউট বিষ্ণু ও মেম্বর কুমারেশ সুকুমারের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে জোর করে এফিডেভিট করে নেয়। এ ঘটনা জানতে ডাক্তার বাসুদেবের কাছে চাইলে তিনি ঘটনা স্বীকার করে বলেন, সুকুমার এতই অসুস্থ ছিল তাকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলি। অন্য ৪জনকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করি। 

মামুদকাটি গ্রামের চায়ের দোকানদার রবীন্দ্র দেবনাথ সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সুকুমার অনেক রাত পর্যন্ত আমার দোকানের পাশে নির্মল আটকিয়ে রেখেছিল। সুধান্য চৌকিদার বলেন, গভীর রাতে অভিযুক্ত নির্মল তার ভ্যানে করে সুকুমারের পিতা-মাতার কাছে আমি পৌছে দেই। 

মৃত সুকুমারের সাথী দীপক রিশি জানান আমরা ৫জন ডাক্তার প্রভাতের বাড়ীতে শিব নিয়ে যাওয়ার পর আমাদেরকে এ্যালকো খাওয়ার কথা বলে স্প্রীট খাওয়ায়। সে কারণে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। জনৈক কোমলদাশ জানান, সুকুমার অসুস্থ হলে খেয়াঘাটে ছটফট করতে থাকে। তার পিতা-মাতার কাছে দেয়া হয়নি। মৃত্যুর পর অভিযুক্ত ডাক্তার প্রভাত ও নির্মল টাউট বিষ্ণু ও মেম্বর কুমারেশকে ম্যানেজ করে তাদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করে সুকুমারের পিতা-মাতাকে দিয়ে জোর করে এফিডেভিট করানো হয়েছে। 

এ সব তথ্য অনুসন্ধানের জন্য এ প্রতিনিধি শনিবার বিকালে মামুদকাটি গ্রামে গেলে শতশত মানুষ গোপনে জানায়, অভিযুক্ত ডাক্তার প্রভাত ও নির্মল এবং টাউট বিষ্ণু ও মেম্বর কুমারেশ     খুবই প্রভাবশালী তাই আমরা তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। সুকুমারের বাড়ীতে গেলে তার পিতা-মাতাকে কাউকে বাড়ী পাওয়া যায়নি। নামপ্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি জানান, এ বিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে তাই তাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। ভয়েতে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। টাউট বিষ্ণু এর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি। অভিযুক্ত ডাক্তার প্রভাত বলেন, আমি তাদের এ্যালকো খেতে দিয়েছিলাম এটা সত্য। কোন স্প্রীট খেতে দেয়নি। অভিযুক্ত নির্মল জানান, আমার পুত্র সুকুমারের জন্য মানতকৃত দেলপূজায় তাদের কিসেন নিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু কোথাও থেকে কোন কিছু খেতে নিষেধ করেছিলাম। সুকুমার অসুস্থ হলে কিসেনের টাকা, গামছা, গেঞ্জি, সন্ন্যাসী চেয়ে তাকে অনেকক্ষণ আটকিয়ে রেখেছিলাম এটা ঠিক কিন্তু তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আটকিয়ে রাখিনি। সে আমার পূজাটাই নষ্ট করে দেয়। তাই তার প্রতি ক্ষোভ ছিল। (চলবে)।