Opu Hasnat

আজ ৫ জুন সোমবার ২০২৩,

মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনায় মা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে মানিকগঞ্জবিশেষ সংবাদ

মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনায় মা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে

সরকারী নিষেধাজ্ঞা অপেক্ষা করে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনায় ইলিশ মাছ ধরার যেন মহাউৎসব চলছে। কেউ মাছ ধরছে, কেউ জেলেদের জালে ধরা মাছ ছিনিয়ে নিয়ে ভাগবাটায়োরা করে নিচ্ছে। অনেকে মাছ ধরে নৌকাতে না রেখে পুলিশের ভয়ে নদীর পারে স্বজনদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখছে।  কেউ কেউ মাছ ক্রয় করে মওজুত করছে এবং ঢাকাতে আত্মীয়- স্বজনের বাড়িতে পাঠাচ্ছে। জেলেরা যেমন মা ইলিশ ধরার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। তেমনি নদীর পার এলাকায় দিন-রাত ইলিশ মাছ ক্রয়-বিক্রয় চলছে। অর্ধেক দামে মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে ক্রেতার চাহিদাও বেড়েছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে।  এদের কাছে প্রশাসন অসহায়, না ইচ্ছে করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করছে না, এটাই সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা?  

জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার পাশ দিয়ে পদ্মা-যমুনা নদী প্রবাহিত।  ইলিশের প্রজননের এ মৌসুমে সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশেষ করে চাঁদপুরসহ নদীর উজানে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনায় প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ছে। 

সারাদেশে ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ হলেও মানিকগঞ্জে মাছ ধরা থেমে নেই। রাজনৈতিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নির্বিচারে চলছে মা ইলিশ নিধন। নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে চকচকে রূপালী ইলিশ। যা আর কিছু দিন গেলেই নদীতে ডিম ছাড়বে।  নির্দিষ্ট কিছু অসাধু জেলেদের মোবাইল ফোনে ফোন দিলেই মিলে ছোট-বড় মাঝাড়িসহ সব ধরণের ইলিশ মাছ। সন্ধ্যা হলেই পদ্মা-যমুনার পার এলাকায় ইলিশ মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ে যায়। অনেকে গোপনে ব্যাগে করে বাসায় বা বাড়িতে পৌঁছে দেয়। 

অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে মা ইলিশ মাছ শিকার করাচ্ছে। বিনিময়ে জেলেদের নিকট থেকে তারা টুপাইস কামাচ্ছেন এবং বিনা পয়সায় মাছ নিয়ে ফ্রিজ ভরছেন। নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় জেলেরা মা ইলিশ শিকারে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। রাতের অন্ধকারে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ মাছ ধরে মাটির নীচে, ঝোপের ধারে বাড়ির বিভিন্ন গোপন স্থানে মওজুদ করছে। যখন কোন ক্রেতা ফোন দেয় তখন ব্যাগে করে মাছ তার নিকট পৌছে দেয়া হয়। আবার কিছু বিক্রেতারা মাছ নিয়ে গোপনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে জানান, বর্তমানে পেশাদার জেলেদের চেয়ে সৌখিন ও অপেশাদার জেলেরাই বেশী মাছ ধরার কাজে ব্যাস্ত রয়েছে। বিশেষ করে চর এলাকার লোকজন মাছ ধরছে এবং বিক্রি করছে। নিষিদ্ধ এ সময়ে ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহণ করা, মজুদ ও বিক্রি করা বন্ধে যারা কাজ করবে তারাই জেলেদের মাছ ধরতে সহযোগীতা করছে। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা এ মা মাছ নিধনের জন্য বেশীর ভাগ দায়ী । এরা নৌকা প্রতি ৫শ টাকা করে উৎকচ নিয়ে জেলেদেরকে মাছ ধরার জন্য অনুমতি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ টাকা দু’তিনজন নেতার পকেটে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান হলেও সংশ্লিষ্টরা মাছ এনে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এর ভাগ পাচ্ছে। 

এদিকে মাছের দাম কম হওয়াতে ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। অনেকে ঢাকা থেকে আসছে মাছ ক্রয় করতে। আগে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হতো ১৫/১৬শ টাকা আর এখন সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫/৬শ টাকায়। ছোট সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি করছে ২/৩শ টাকা দরে। যা সকল শ্রেণীর মানুষ ক্রয় করতে পারছে।  নদীর তীরেই দ্রæত ক্রেতাদের নিকট তারা কম মূল্যে মাছ বিক্রি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে নদীর পার এলাকায় এক শ্রেণীর দালালের সমাগম দেখা যাচ্ছে। এ দালালরা জেলে এবং প্রশাসনের সাথে মধ্যস্ততা করে থাকে। শুধু তাই নয়, এরা নিজেরা ট্রলার এবং ডিঙ্গি নৌকা যোগে জেলেদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করে এনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। 

শিবালয় উপজেলার সহকারী মৎস কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মাছ ধরার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাদের লোকবল কম তারপরও প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ বার মোবাইল কোর্ট বসিয়ে দেড় লাখ মিটার জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ৩১ জন জেলেকে জরিমানা করা হয়েছে। 

দৌলতপুর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিনই অভিযানে যাই। এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫শ মিটার জাল, ২৮ কেজি মাছ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৭জন জেলেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
  
হরিরামপুর উপজেলা মৎস কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তিনি নদীতে আছেন এখন কিছুই বলতে পারবেন না। 

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম গালিভ খান সাংবাদিকদের জানান, মাছ ধরার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্ত অভিযানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়না। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।