Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

৭৯ রানে জয়লাভ বাংলাদেশের খেলাধুলা

৭৯ রানে জয়লাভ বাংলাদেশের

ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশের ৩০৭ রানের জবাবে ৪৩ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২২০ রান। মাঠে ধুকছেন ভুবনেশ্বর কুমার (১৯) ও উমেশ যাদব (০)। সর্বশেষ ৪২.৪ ওভারে ১১ রানে আউট হন মোহিত শর্মা। এর আগে ৩৮.২ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা ৩২ রানে আউট হয়ে যান। এর আগে ৩৬ ওভারে ০ রানে আউট হন অশ্বিন। তার একবল আগে সুরেশ রায়না ৪০ রানে আউট হয়ে যান। এই সময় উইকেটের অপর পাশে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা ৩০ রানে। সুরেশ রায়নাকে আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরের বলে অশ্বিনের আউেটর মাধ্যমে ভারত আসলেই বড় ধরনের খাদের কিনারে পৌঁছে যায়। সর্বশেষ ৩৬.২ ওভারে জাদেজার আউট ভারতেক ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে। বাংলাদেশ এরপর থেকে জয়ের তীরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে এর আগে ২৯ ম্যাচে তিনটি জয় ছিল বাংলাদেশের।  বৃহস্পতিবার ১৮ জুনের এই ৩০ তম ম্যাচে চতুর্থ জয়ের আশা করা শুরু করে বাংলাদেশ।

রুবেল হোসেনের করা নবম ওভারে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন শিখর ধাওয়ান। সেসময় ১৩ রানে ব্যাট করা এই বাহাতি ব্যাটসম্যানের ক্যাচ গøাভসবন্দি করতে পারেননি মুশফিক।

মাশরাফি বিন মুর্তজার করা পরের ওভারে আবার ধাওয়ানের ক্যাচ ছাড়েন মুশফিক। আম্পায়ার মাশরাফির আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন কিন্তু এবারও ক্যাচ গøাভসবন্দি করতে পারেননি তিনি।

তৃতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন মুশফিক। তাসকিন আহমেদের বলে ধাওয়ানের (৩০) গøাভস ছুঁয়ে আসা বল এবার গøাভসবন্দি করেন তিনি।

পরের ওভারে বিরাট কোহলিকেও ফেরান তাসকিন। তার বলে মুশফিকের গøাভসবন্দি হন কোহলি (১)।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে রোহিত শর্মাকে (৬৩) বিদায় করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানডেতে নিজের প্রথম উইকেট নিতে রোহিতকে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করেন এই বাঁহাতি পেসার।

পরের ওভারে দারুণ এক সেøায়ারে অজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান মুস্তাফিজ। লাফিয়ে অসাধারণ ক্যাচ ধরা নাসির হোসেনের অবদানও তাতে কম নয়।

বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তার বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মহেন্দ্র সিং ধোনি (৫)।

এর আগে তিন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসানের অর্ধশতকে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো তিনশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুই বল বাকি থাকতে ৩০৭ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে একই মাঠে ৬ উইকেটে করা ২৯৬ ছিল আগের সর্বোচ্চ।

স্বাগতিকদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করা এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন পঞ্চম ওভারের পর থেকে।

উমেশ যাদবের করা ষষ্ঠ ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান নেন তামিম। সিøপের পাশ দিয়ে হয় প্রথম চার, পরেরটি তিনি হাঁকান পয়েন্টের ওপর দিয়ে। বোলার আর মিডঅনের মাঝ দিয়ে তৃতীয় চারটি আদায় করে নেন তামিম। আর শেষ বলে লংঅফ দিয়ে উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

৫.৪০ থেকে রান রেট বেড়ে হয় ৭.৫০; এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তামিম-সৌম্যকে। উমেশের সেই ওভারের পর তামিম নিজেকে একটু সামলে রাখলেও অতিথি বোলারদের ওপর চড়াও হন সৌম্য। তাতেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো শতরানের উদ্বোধনী জুটি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

১৩.৪ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি ভাঙে সৌম্যর (৫৪) রান আউটে। তার ৪০ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি সাজানো ৮টি টি চার ও একটি ছক্কায়।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকেই ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠে, বৃষ্টি হানা দেয় তার একটু পরেই। ষোড়শ ওভারে বৃষ্টির বাধায় এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার আগেই অর্ধশতকে পৌঁছান তামিম। ওয়ানডেতে এ নিয়ে মাত্র পঞ্চমবার একই ম্যাচে অর্ধশতক পেলেন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

ষোড়শ ওভারে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় বাংলাদেশের রান রেট ছিল আট ছুঁই ছুঁই। আবার খেলা শুরু হওয়ার পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৫ ওভারের এক স্পেলে তামিম, লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

৬২ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ৬০ রান তামিম এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আউট হন। একইভাবে আউট হন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিক। আর এলবিডবিøউর ফাঁদে পড়েন অভিষিক্ত লিটন।

১২৩ রানে ১ উইকেট থেকে ১৪৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়া বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে। শুরুতে সতর্ক ব্যাটিং করেন এই দুই জনে। ২৫তম ওভারে রান রেট নেমে আসে ছয়ের নিচে; তখন রান নিয়ে খুব একটা ভাবেননি এই দুই জনে। সময় গড়ানোর সঙ্গে শট খেলা শুরু করেন তারা, বাড়ে রান তোলার গতিও।

৩৫তম ওভারে রান রেট আবার ছয়ের ওপরে নিয়ে আসেন সাকিব-সাব্বির। তাদের ৮৩ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। রবিন্দ্র জাদেজার বলে সাব্বির বোল্ড হলে ভাঙে ১৪.২ ওভার স্থায়ী জুটি। ৪১ রান করা সাব্বিরের ৪৪ বলের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।

এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি সাকিব। অর্ধশতকে পৌঁছে উমেশ যাদবের বাজে একটি বলে জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। বলটি মাঠের যেকোনো জায়গায় পাঠাতে পারতেন ৬৮ বলে ৫২ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর তিনশ’ পার হতে বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল নাসির হোসেনের দিকে। ২৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু উমেশের বলে তিনি জাদেজার তালুবন্দি হলে বাংলাদেশের তিনশ’ রানে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা জাগে।

শেষ ওভারগুলোয় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান না থাকায় আর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় এই সময়ে খুব বেশি রান সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ঠিকই গড়ে তারা।

শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২১ রান করেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার দৃঢ়তায় ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিনশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।