Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

৮ অক্টোবর উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু হত্যার ৫ম বার্ষিকী

পাঁচ বছরেও মামলার চার্জশীট হয়নি, অভিভাবকহীন পরিবারটি ধ্বংসের মুখে নাটোর

পাঁচ বছরেও মামলার চার্জশীট হয়নি, অভিভাবকহীন পরিবারটি ধ্বংসের মুখে

আজ ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবু হত্যার ৫বছর পূর্তি হলেও আজ পর্যন্ত মামলার চার্জশীট দেয়া হয়নি। 

২০১০ সালের ৮ অক্টোবর উপজেলা সদর বনপাড়া বাজারে পূর্ব ঘোষিত মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে হামলায় বাবু নিহত হন। এ ঘটনার পর একের পর এক নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বর্তমানে নিহত বাবুর পরিবার পড়েছে একেবারে ধ্বংসের মুখে। 

নিহতের পরিবার, বিএনপি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সানাউল্লাহ নুর বাবু নিহত হওয়ার পর তার সহধর্মিণী মহুয়া নুর কচি তার পরিবর্তে মাঠে নামেন। জেলা বিএনপির সদস্য ও বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ন আহŸায়ক হিসাবে তিনি বাবুর অসমাপ্ত কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতিতে নামেন। কিছুদিন পরই বনপাড়া পৌর মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন তিনি। মাত্র ৪১ ভোটের ব্যবধানে তাকে পরাজিত করে মেয়র হন বাবু হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রভাষক কে এম জাকির হোসেন। তারপরও শুরু থেকেই রাজনীতির মাঠে মহুয়া নূর কচি ছিলেন বেশ সক্রিয়। তবে গত ২১ জানুয়ারী থেকে আই ভি আই জি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তিনি পঙ্গুত্বের পথে। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলার ক্ষমতা নেই তার। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিজি) ডাঃ ইকবালের তত্বাবধানে তিনি এখন চিকিৎসাধীন আছেন। তার ব্যয় বহুল চিকিৎসা চালাতে গিয়ে পুরো পরিবারই এখন  নিঃস্ব হতে চলেছে। 

এদিকে গত ১০ জুন সানাউল্লাহ নূর বাবুর পিতা ও স্বাস্থ্য বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় সাবেক পরিচালক ডা. সাবের হোসেন খুন হন। ডা. সাবের হোসেন (৭৩) বনপাড়ায় তার মধ্য বয়সী দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগমকে নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করতেন। কয়েক বছর আগে মমতাজ বেগম কৌশলে সাবের হোসেনের কাছ থেকে তিন তলাবিশিষ্ট বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি নিজ নামে লিখে নেন। সম্প্রতি মমতাজ বেগম পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় ঘটনায় মৃত্যু হয় বাবুর বাবা ডা. সাবের হোসেনের। পরে মমতাজ বেগমের নিজের পক্ষের মেয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে মায়ের বিরুদ্ধে বাবাকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন। সাবের হোসেনের প্রথম স্ত্রী সানাউল্লাহ নুর বাবুর মা ডা. সফুরা বেগমও বর্তমানে জীবনের শেষ অবস্থায়। বয়সের ভারে দু-চোখে ভালো দেখতে পান না। একমাত্র ছেলে ও স্বামী হারানোর শোকে তিনিও এখন মৃত্যু পথযাত্রী। তার কোন ভাই নেই। একমাত্র ছোট বোন বেবী স্বামী-সংসার নিয়ে অন্যত্র অবস্থান করেন। বিবাহিত জীবনে সানাউল্লাহ নুর বাবুর কোন ছেলে নেই। তিনটি মেয়ে আর তিন জনই এখন ছাত্রী। বাবু ও তার বাবা ডা. সাবের হোসেন খুন হওয়ার পর সংসারের ভার নেয়ার মত কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় এবং বাবুর স্ত্রী ও মা দুজনেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় বর্তমানে অভিভাবকহীন পরিবারটি রয়েছে বিলীনের পথে। 

প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর উপজেলা সদর বনপাড়া বাজারে পূর্ব ঘোষিত মিছিলে প্রকাশ্যে হামলায় বাবু নিহত ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন আলীসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী এবং আর টিভির নাটোর প্রতিনিধি সাংবাদিক শেখ তোফাজ্জ্বল হোসাইন ও এটিএন এর ক্যামেরাম্যান মাসুদ রানাসহ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় সুনিদিষ্ট ভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে বাবুর স্ত্রী মহুয়া নূর বাবু ও  সাংবাদিক শেখ তোফাজ্জ্বল হোসাইনের পিতা শহীদুল্লাহ শেখ। মামলা দুটি পুলিশ ও ডিবি হয়ে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ছয় বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত দুটি মামলার চার্জশীট দেয়া হয়নি, নেই তেমন কোন অগ্রগতিও। সকল অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত রয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুরু থেকেই দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সিআইডির রাজশাহীর পরিদর্শক আহম্মদ আলী জানান, ন্যায় বিচারের স্বার্থে এখনো মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে। কতদিনে এই তদন্ত শেষ হবে তা তিনি জানাতে পারেন নাই।