Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক দানিছ আহমদের স্বীকৃতি চান ছেলে শাহিন আহমদ মুক্তিবার্তাসুনামগঞ্জ

মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক দানিছ আহমদের স্বীকৃতি চান ছেলে শাহিন আহমদ

১৯৭১ সালের বাঙালীর মহান মুক্তিসংগ্রামের অগ্নিঝরা দিন গুলোতে সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জের মানুষও ঝাপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। সীমান্তবর্তী বালাট এবং টেকের ঘাটে শ্মরনার্থী শিবিরের পাশাপাশি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধের সংগঠকের কাজ করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দানিছ আহমদ। সুনামগঞ্জ মহকুমার একটি অজপাড়াগাঁ বসিয়াখাউরীতে দানিছ আহমদের জন্ম। একটি সুশিক্ষিত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ও বেড়ে উঠার কারণে দানিছ আহমদ সুনামগঞ্জ কলেজে ছাত্র থাকাকালে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামীলীগ কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য। বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পরপরই সুনামগঞ্জে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। মহকুমা আওয়ামীলীগের দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী আব্দুর রইছ, আব্দুর জহুর মাষ্টার, বরুন রায়, দানিছ আহমদ, সৈয়দ দেলোয়ার আকমল আলী, আব্দুল জব্বার, বিষ্ণুপদ রায়, আছদ্দর আলী প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজ এগিয়ে চলে। ২৫শে মার্চের ভয়াল কালোরাত্রিতে পাকিস্থানি হানাদার দল নিরস্ত্র নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালীদের উপর অর্তকিতে ঝাপিয়ে পড়ে। ইতিহাসের বর্বোরোচিত গণহত্যা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শুরু হয় বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর পর দানিছ আহমদ ছিলেন বালাটি ক্যাম্পের সংগঠকের দায়িত্বে। এখানে স্মরনার্থিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র গোলা বারুদ, খাবার, কাপড় সহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। পরবর্তীতে এখানে আসেন এসপিএ সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। তিনি এখানকার মুক্তিয্দ্ধুাদের নিয়ে যান ভারতে ট্রেনিংয়ের জন্য। ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শত্র“মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বালাট ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে দানিছ আহমদের পরিকল্পনায় অনেক গুলো সফল অপারেশন পরিচালনা করা হয়। বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল জহুর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দানিছ আহমদ রাজনীতি থেকে দুরে সরে যান। তিনি যোগদেন সরকারী চাকুরীতে। ১৯৭১ সালে ১৬ আগষ্ট রাতে বসিয়াখাউরী থেকে নৌকাযোগে রওয়ানা হয়ে প্রথমে আহসানমারা ফেরী ধ্বংস করে জয়কলসে পাকিস্তানি সেনাদের বাংকারে সদলবলে আক্রমন করেন দানিছ আলী। জয়কলস বাংকারের রাজাকার দের সঙ্গে সেদিন পাকি বাহিনীর সদস্যরাও ছিল। ১৬ আগষ্ট তাদের অধিকাংশ লোকই নিহত হয়। এ সংবাদ তাদের সিলেটস্থ বিগ্রেড সদর দপ্তরে পৌছলে তারা আতংকিত হয়ে পড়েন। কারণে এ অবস্থায় মুক্তিয্দ্ধুাদের শায়েস্তা করতে না পারলে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে তাদের চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ১৬ আগষ্টের প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযুদ্ধাদের শায়েস্তা করতে হানাদার বাহীনি আক্রমনের পরিকল্পনা গ্রহন করে। মুক্তিযুদ্ধাদের অবস্থান জানতে তারা যোগাযোগ করে তাদের স্থানীয় এজেন্টদের সঙ্গে। দালালরা সিলেট সদর দপ্তরে হাজির হয়ে জানায় মুক্তিযুদ্ধারা শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে ডুংরিয়া গ্রামে অবস্থান করছে এবং সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভারতীয় সেনারা প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করছে। এখানেও দানিছ আহমদের ভূমিকা ছিল অন্যতম। মহান মুক্তিযুদ্ধে দানিছ আহমদের এতো অবদান থাকা স্বত্বেও তিনি কোন ধরনের মুক্তিযুদ্ধো স্বীকৃতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেননি। তাই তার ছেলে ছাতক পৌরশহরের তাতিকোনা মহল্লার বাসিন্দা শাহিন আহমদ জানান আমার পিতা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকও ছিলেন অথচ আমরা তার আজও কোন মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাইনি। এছাড়া পাকি বাহিনীরা আমাদের বাড়ী ঘর দোয়ার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়কার করে দিয়েছিল। তৎকালীন সময়ে আমাদের মাথা গুজার ঠাই থাকেনি। তাই আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি যেন আমার পিতার মুক্তিযুদ্ধা স্বীকৃতি দিতে সদয় হন। 

(তথ্য গুলো সংগ্রহ করা হয়েছে আবু সুফিয়ান রচিত একাত্তরের সুনামগঞ্জ গ্রন্থ থেকে)