রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেন সু চি আন্তর্জাতিক / 
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি'র দাবী, সেনা অভিযানে নয় বরং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিনে তিনি এ দাবি করেন।
সু চি তার বক্তব্যে রাখাইনে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। রোহিঙ্গা নিপীড়নে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের কোনো উল্লেখই তিনি করেন নি।
সু চি জানান, গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযানে যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ আনা হয়নি। গণহত্যার যে কনভেনশন তা সার্বদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। গাম্বিয়া আদালতে মিয়ানমারের ‘অসত্য ও অসম্পূর্ণ’ চিত্র উপস্থাপন করেছে।
রাখাইনে সেনা অভিযান প্রসঙ্গে মিয়ানমার নেত্রী বলেন, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ২০১৭ সালে কয়েক হাজার সদস্য নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলা চালায়। আরসা ও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় সন্ত্রাসী ও বেসামারিক নাগরিকদের পৃথক করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে অভিযানে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার বিচার মিয়ানমারের সামরিক আদালতে হয়েছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে আনার সমালোচনাও করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, অভ্যন্তরীন বিচার ব্যর্থ হলে তখনই আন্তর্জাতিক বিচারের প্রসঙ্গ আসে। যেহেতু বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনায় অভ্যন্তরীণ আদালতে বিচার হয়েছে এবং বিচার চলছে সেহেতু আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ আনা অনভিপ্রেত।
বৃহস্পতিবার এ মামলায় এবারের মতো তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এতে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়পক্ষই একে ওপরের যুক্তিখণ্ডন ও আরও কিছু বলার থাকলে তা তুলে ধরবে।
চলতি বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গতকাল (মঙ্গলবার) প্রথম দিনের শুনানিতে জরুরি ভিত্তিতে এ মামলার বিচারকাজ শুরুর দাবি জানায় তারা। রোহিঙ্গারা যেন আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করতেও আদালতকে অনুরোধ জানায় গাম্বিয়া।
এ মামলার পরও ন্যায়বিচার পেতে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে রোহিঙ্গাদের। চূড়ান্ত রায় দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বছরের পর বছর সময় নেন। কিন্তু আদালত চাইলে যে কোনো ধরনের অন্তর্র্বতী আদেশ দিতে পারেন। মিয়ানমারের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন।
গাম্বিয়ার করা এ মামলার সূত্রে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তেমনই কোনো অন্তর্র্বতী আদেশ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে নতুন করে চাপের মুখে পড়তে পারে দেশটি।