Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

পাংশায় জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া অসহায় ২ নারী রাজবাড়ী

পাংশায় জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া অসহায় ২ নারী

খুব কম বয়সে বিয়ে হয় মনোয়ারা খাতুনের বিবাহের পর থেকেই মনোয়ারা খাতুনের উপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন স্বামী ও শশুড় বাড়ীর লোকজন তাকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে আসছিল। এর মধ্যেই মনোয়ারা খাতুনে ঘরে একে একে জন্ম নেয় ৪ ছেলে সন্তান। এর পরই মনোয়রা খাতুনের জীবনে চরম বিভিষিকাময় অধ্যায় চলে আসে তার বড় ছেলের বসয় তখন ১২ বছর এসময় তার স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর শশুড় বাড়ীর লোকজন তার উপর অমানষিক নির্যাতন শুরু করে বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজ শুরু করেন মনোনয়রা খাতুন। মনোয়ারা খাতুন তার ৪ ছেলে নিয়ে সংসার চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে এক বেলা খেয়ে ২ বেলা না খেয়ে তার দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে, সংসারের কাজের ফাকে ফাকে অণ্যের বাড়ীতে ঝি’র কাজ করতে থাকেন মনোয়রা। এ কাজ করেই সংসারের সকল দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাধে এভাবেই চলে যাচ্ছিল মনোয়রা খাতুনের সংসার। এরই মাঝে মনোয়রার ভাগ্যের চাকা ঘুড়তে শুরু করে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ রাজবাড়ী ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে তিনি সন্ধান পান ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ রাজবাড়ী ফিল্ড অফিসের। ওই সময় মনোয়ারা খাতুনের ছোট ছেলে হামিদুলের বয়স ৭ বছর এ সময় তিনি তার ছেলেকে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ রাজবাড়ী ফিল্ড অফিসের অধীনে স্পন্সরশীপ কর্মসূচীর অর্ন্তভূক্ত হয়। এর পর থেকে প্রতি মাসে ২৬০০ টাকার অর্থনৈতিক সহায়তায় মনোয়ারা খাতুন জীবনে আলোর সন্ধান পান সেই সাথে নির্যাতনের কষ্ট ভুলে নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করেন। বিভিন্ন সময় ছাগল পালন, গাভী পালন, শিশু সু রক্ষা, শিশু অধিকারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ইসলামিক রিলিফ থেকে পরের বাড়ী কাজ করে এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ রাজবাড়ী ফিল্ড অফিসের দেওয়া সহযোগীতা নিজের প্রচেষ্টায় বর্তমানে ৪ রুম বিশিষ্ট একটি ছাদ দেওয় পাকা বাড়ী করেছে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে। তার ছোট ২ ছেলে লেখা পড়া করছে, অর্থের অভাবে তার বড় ২ ছেলেকে পড়া লেখা করাতে পারেনি তারা দিন মজুরের কাজ করেন। মনোয়রা খাতুনের ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ লক্ষ টাকা এখন তার অভাব দুর হয়েছে ছেলেরাও ভাল টাকা আয় করছে। 

এই সাফল্যে পাংশা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় তাকে ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোগে জীবন শুরু করেছে যে নারী’ ক্রেষ্ট ও সনদ পত্র দিয়েছে উপজেলা চত্বরে কথা হয় পাংশা শহরের পারনারায়রপুর গ্রামের মৃত সাইফুল খার স্ত্রী মনোয়রা খাতুনের সাথে তিনি বলেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠান আমার পাশে দাড়ানোর কারনেই আজ আমি সফল হয়েছি এখন আমার আর কোন কষ্ট নেই। 

একই ভাবে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্যে অর্জন করেছে মাগুড়াডাঙ্গী গ্রামের মৃত অধির কুন্ডুর স্ত্রী সারতী রাণী কুন্ডু ও অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে ক্রেষ্ট ও সনদ গ্রহণ করেন। সারতী জানান যখন ৫ম শ্রেণীতে পড়ি অভাবের তারনায় পারিবারিক ভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়া হয় আমার স্বামীর পেশা ছিল মুদি ব্যবসা বিয়ের এক বছর পর আমাদের একটি কণ্যা সন্তান জন্ম নেয়, সুখেই দিন কাটছিল। এর মধ্যেই মেয়ের বয়স ১ বছর হতে না হতেই আমার স্বামী স্ট্রোক করে মারা যায়। আমি হলাম বিধবা সন্তানরা হলো পিতৃহারা। শুরু হলো আমার দুখের জীবন সমাজের সঙ্গে আমার নিজের সঙ্গে। আমার ঘরে তখন খাবার ছিল না ২ বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে কোন রকম দিন পার করছিলাম। অন্যের বাড়ীতে কাজ করেছি, মানুষের কাথা সেলাই করেছি, বর্গা গরু পুশেছি সেই গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করেছি সেই টাকা দিয়ে একটি বাছুরসহ গাভী কিনে গাভীর দুধ বিক্রি করে দিন অতিবাহিত করেছি। আমি ২০১২ সালে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ রাজবাড়ী ফিল্ড অফিসের সন্ধান পায় সেখান থেকেই আমার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বর্তমানে ২টি গাভী প্রতি বছর ২টি করে বাচ্চা দেয় প্রতিদিন ৪ কেজি করে দুধ করতে পারছি। বর্তমানে আমার বাড়ীতে গরুর খামারে ৩ টি গাভী ও ৩টি বাচ্চা রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন ২২ লিটার করে দুধ বিক্রি করছি এখন আমি ও আমার পরিবার ভাল আছে।