Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

ফরিদপুরের ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ! ফরিদপুর

ফরিদপুরের ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ!

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অবস্থিত এ অঞ্চলের জনপ্রিয় ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছোলনা সালামিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসার কার্যক্রম নিয়ে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ মহলটি মাদ্রাসার পরিচালনা পর্যদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি মাদ্রাসার একটি দ্বিতল ভবনের নামকরন নিয়েও মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসার সাবেক সম্পাদক ও শিক্ষক হাফেজ মোঃ হাসমত আলীকে দুর্নীতির কারনে বরখাস্ত করা হয়। হাসমত আলীকে বরখাস্তের পর পরই একটি মহলের প্ররোচনায় মাদ্রাসার পরিচালনা পর্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসার সার্বিক দেখভাল ও অনুদান দেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার শুরু করে কুচক্রি মহলটি। এ মহলটি মাদ্রাসার দ্বিতল ভবন করে দেয়া পরিচালনা পর্যদের অন্যতম সদস্য গিয়াসউদ্দিন বেনু ও অপর সদস্য শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর মরহুম পিতার নামে মিথ্যা ও অবান্তর কথা বলে রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসার দ্বিতল ভবনটির নামকরন করা হয় আব্দুস সামাদ মিয়ার নামে। ভবনটি নির্মানের সমস্ত অর্থের যোগানদাতা মরহুম আব্দুস সামাদ মিয়ার দুই ছেলে বেনু ও ঝুনু। মাদ্রাসা থেকে বহিস্কৃত সাবেক সাধারন সম্পাদকের যোগসাজসে প্রভাবশালী একটি মহল মাদ্রাসার সুনামকে বিনষ্ট করতে নানাভাবে পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে তারা মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল মতিনকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসা থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় একাধিক বার সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে হুমকি প্রদান করে। এছাড়া হত্যারও হুমকি দেয়া হয়। এ নিয়ে বোয়ালমারী থানায় একাধিক জিডি করেন বর্তমান সাধারন সম্পাদক মোঃ আবদুল মতিন। 

অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া সাবেক সাধারন সম্পাদক মোঃ হাসমত আলী চাকুরীকালীন সময়ে মাদ্রাসার রেজুলেশন খাতা, ক্যাশ খাতা, এতিমখানার দলিলসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সাবেক সাধারন সম্পাদককে একাধিকবার চিঠি দিয়ে তা ফেরত চান মাদ্রসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ সাইয়েদ মুরাদুল্লাহ আহমাদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাদ্রাসা কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সাবেক সাধারন সম্পাদক হাফেজ মোঃ হাসমত আলী মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৬ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে বিগত ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মাদ্রাসায় তদন্তে যায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসার। সরেজমিনে গিয়ে বোয়ালমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হাসমত আলীর কাছে ৬ লাখ টাকা হস্তমজুত পান। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এতিমখানা-মাদ্রাসার দান এবং অনুদানের টাকা নিজে উঠিয়ে নিয়ে ভোগ করেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক এ এস এম আলী আহসান মাদ্রাসার সভাপতি বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে হাসমত আলীকে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে তার পদ থেকে বরখাস্তের নির্দেশ প্রদান করেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হাফেজ মোঃ হাসমত আলীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ নিয়ে হাফেজ মোঃ হাসমত আলীকে এ বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দেবার জন্য চিঠি দেয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে গত ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি জবাবপত্র দাখিল করেন। সেখানে তিনি ৬ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা ইসলামী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখায় এবং অবশিষ্ট ৪ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। এমতাবস্থায় অভিযোগকারীদের লিখিত বক্তব্য এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদনে হাফেজ মোঃ হাসমত আলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যান সংস্থা সমূহ  (রেজিষ্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুচ্ছেদ নং-৯নং ধারা এবং প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের ১৩ ধারা মোতাবেক হাফেজ মোঃ হাসমত আলীকে তার পদ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বরখাস্তের নিদের্শক্রমে অনুরোধ করা হলো। 

মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে অপসারন হবার পর নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন হাফেজ হাসমত আলী এমন অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মাদ্রাসার সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে একের পর এক মিথ্যা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। এই মহলটি এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীনদের মধ্যে অন্যতম মরহুম মোঃ আব্দুস সামাদ মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার শুরু করে। স্বাধীনতা সংগ্রামে আব্দুস সামাদ মিয়ার বিতর্কিত ভুমিকা ছিল তা প্রচার চালানো হচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কারনে সাবেক সাধারন সম্পাদককে মাদ্রাসা থেকে বিতারিত করার পরই একটি মহল নানামুখী ষড়যন্ত্র করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অন্যতম দাতা আব্দুস সামাদ মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে এলাকার পরিবেশ অশান্ত করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। 

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে বোয়ালমারীতে যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল তার মধ্যে আব্দুস সামাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। বরং তিনি স্থানীয় হিন্দুদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তাছাড়া স্বাধীনতা বিরোধী কোন কর্মকান্ডের সাথে আব্দুস সামাদ মিয়া জড়িত ছিলেন তার কোন প্রমানও পাওয়া যায়না। 

স্থানীয়রা জানান, শুধু বোয়ালমারীই নয়, গোটা জেলাজুড়ে ইসলামী দ্বিনী শিক্ষায় ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সুনাম রয়েছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে বেশকিছু ব্যক্তি। তারা নানাভাবে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষতিগ্রস্থ করার মিশনে নেমেছে।