Opu Hasnat

আজ ৪ জুন রবিবার ২০২৩,

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত চামড়ার আড়ত

নাটোরে চামড়া আমদানী কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ অর্থ-বাণিজ্যনাটোর

নাটোরে চামড়া আমদানী কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত চামড়ার আড়ত নাটোরের চকবৈদ্যনাথ আড়তে এবারে কাঁচা চামড়ার আমদানী কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অন্যান্য বছর কোরবানির ঈদের সময় বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপক ভাবে যে হারে কাঁচা চামড়া আড়তে আসতো এবারে তার এক-তৃতীয়াংশ চামড়াও এ পর্যন্ত আসেনি। এই ঈদের পরে দীর্ঘ সময়ে কাঁচা চামড়া না আশায় নাটোরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। 

গত বছর ঈদের মৌসুমে নাটোরের আড়তে প্রায় পাচঁশত কোটি টাকার চামড়া বেচা-কেনা হলেও এবারে দুইশ’ কোটি টাকার চামড়া বেচা-কেনা হবে কি না তা নিয়ে আশংকায় রয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিনাঞ্চলের ২১টি জেলা থেকেই কাঁচা চামড়া আসে নাটোরের এই আড়তে। তবে সব চেয়ে বেশী চামড়া আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া ও খুলনা থেকে। সারা বছর এই আড়তে চামড়া বেচাকেনা হলেও শব-ই-বরাত আর রোজার ঈদের পরে সবচেয়ে বেশী চামড়া আসে কোরবানীর ঈদে। কোরবানীর ঈদের পরে তা চলে বেশ জোড়েসোড়ে। প্রতিবছর নাটোরের এ আড়তে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার চামড়া কেনা-বেচা হয়। দেশের সবচেয়ে বড় প্রায় ১৫টি টেনারীর প্রতিনিধি এবং কটেজ পার্টি হিসাবে পরিচিত আরো ২০টির মতো কাঁচা চামড়ার ক্রেতা নাটোরের আড়ৎ থেকে তাদের চাহিদা মতো চামড়া কিনে নিয়ে যায়। তারা কখনো নগদে আবার কখনো বাকীতে এসব চামড়া কিনেন। 

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর প্রতি ফুট চামড়ার দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা অথচ এবারে ঢাকার টেনারীর মালিকদের চাপে চামড়ার দাম প্রতি ফুট নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। দামের এই তারতম্যে বেচা-কেনা স্বাভাবিক কারণেই কমে আসবে। এতে করে ক্ষুদে ও প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশংকা করা হচ্ছে। নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রæপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ জানান, নাটোরের চামড়ার আড়তে ঢাকার পোস্তার চেয়ে প্রতি ফুটে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বেচা-কেনা হচ্ছে। এ আড়তে এবার চামড়ার আমদানী কম হবার কারণ হিসাবে তিনি জানান, ক্ষুদে ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে নিজেরাই নিজেদের আড়তে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন আশা করা যাচ্ছে দু-একদিনের মধ্যেই ওই সব চামড়া নাটোরের আড়তে চলে আসবে। তিনি আরো জানান, ঢাকার টেনারী ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের পাওনা প্রায় ৫০ কোটি টাকা এখনও পরিশোধ না হওয়াই তাদের আর্থিক সংকট রয়েই গেছে। চামড়া আড়তে না এসে ভারতে পাঁচার হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচার হচ্ছে না। 

চামড়া ব্যবসায়ী গোলাম মোর্তুজা জানান, বিদেশে চামড়ার বিকল্প হিসাবে রেকসিনসহ  বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চামড়ার চাহিদা কমে এসেছে। এছাড়াও বিশ্ববাজারে ডলারের অবমূল্যায়ন হওযায় দাম কমে গেছে। এসব কারণে চামড়া ব্যবসায়ীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি জানান, সরকার যদি সহজ শর্তে আমাদেরকে ঝণ প্রদান করে তাহলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ ক্ষতি পুসিয়ে নিতে পারব। নাটোরের পুরাতন চামড়া ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম নুরু জানান, এবারে চামড়ার দাম অনেক কম হওযায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঢাকার টেনারী মালিকরা  তাদের প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া বিদেশে বেশি রফতানি করতে না পারায় তারাও আর্থিক সংকটে রয়েছেন। আগের বকেয়া পরিশোধ না করে টেনারীর মালিকরাও নাটোর থেকে আগের মত পর্যাপ্ত সংখ্যক চামড়া নগদ টাকায় কিনতে পারছেন না।