একটি রাস্তার অভাবে সুখে নেই সুখবাসপুর গ্রামের দুই-শতাধিক পরিবার ! মুন্সিগঞ্জ /  বিশেষ সংবাদ / 
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের গ্রামের নাম সুখবাসপুর। আর এ গ্রামের দুই-শতাধিক পরিবার সুখে নেই রাস্তার অভাবে। গ্রামের নামেই সেখানে আছে সুখবাসপুর দিঘী। বিশাল জলরাশীর ওই দিঘীর পাড় ঘেষে বসবাস করে আসছে দুই শতাধিক পরিবার। সেখানে বাস করেন শেখ আব্দুস সামাদের পরিবার। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুস সামাদ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত কাছের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় সুখবাসরপুর দিঘীর পাড় ঘেষে মেঠো পথেই যাতায়াত করেছেন তিনি। জেলা কৃষকলীগের আমৃত্যু সভাপতি আব্দুস সামাদ আজ পৃথিবীতে নেই। ২০০১ সালের জানুয়ারীতে নিজ বাড়িতে জাতির জনকের এই ঘনিষ্টভাজন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। কিন্তু তাঁর পরিবারসহ দুই শতাধিক পরিবার আজো গ্রামের সেই মেঠো পথে কোন রকমে পায়ে হেটে যাতায়াত করে আসছেন। সেখানকার বসবাসরত পরিবার গুলোর কোন সদস্যের মৃত্যু হলে সেই মেঠো পথে খাটিয়ায় করে মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া দুস্কর হয়ে উঠে। শুধু তাই-ই নয়, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে উঠে মেঠো পথ। বিপদ সংকুল এ মেঠো পথে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকেই পা ভেঙ্গেছেন। অথচ সুলতান বেপারীর বাড়ি থেকে গ্রামের মূল সড়ক পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ ওই মেঠো পথে এ যাবত রাস্তা নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু দিঘীর পাড়ে মেঠো পথের অনেকাংশই ভেঙ্গে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় ওই পথে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবারগুলো।
এদিকে, সদর উপজেলার সুখবাসপুর দিঘীর পশ্চিম পাড় ঘেষা ওই পরিবার গুলোর মতোই সুখবাসপুর ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রামপাল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শেখ আব্দুস সালামের বাড়িসহ অর্ধশত বাড়ি-ঘরে যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা নেই। বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরের পাড় ঘেষে সেখানে বসবাসরত পরিবার গুলোর যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে পুকুরে বিলীন হয়ে যায় সেই রাস্তাটির। এরপর থেকে পরিবার গুলোর বিদ্যালয়ের জায়গায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে কোন রকমে যাতায়াত করছে। তার উপর বৃষ্টিতে ওই কাঁচা রাস্তায় পায়ে হাটতে গেলে দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয় পরিবার গুলোকে। কাজেই ঘরে বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রাস্তার অভাবে সুখবাসপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধুর সহচর প্রয়াত শেখ আব্দুস সামাদ ও প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুস সালামের বাড়ি এলাকার দুই-শতাধিক পরিবারের মাঝে কোন সুখ নেই। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার গুলো ওই দুই স্থানে সরকারি উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণের জোর দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিনে সুখবাসপুর গ্রাম ঘুরে রাস্তার অভাবে দুই-শতাধিক পরিবারের দু:খ-দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। সেখানে প্রয়াত শেখ আব্দুস সামাদের ছেলে কায়েস শেখ কিন্টুর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, যুগের পর যুগ ধরে মেঠো পথে যাতায়াত করছে পরিবারগুলো। কোন রকমে পায়ে হাটা গেলেও ৬০০ মিটার মেঠো পথে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। প্রয়াত আব্দুস সামাদের মেয়ে সোনিয়া আক্তার জানান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বেশ কয়েকবার সেখানকার পরিবার গুলোর খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও কৃষকলীগ নেতার পরিবারসহ দুই-শতাধিক পরিবারের সাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের কথা চিন্তা করে দিঘীর পাড় ঘেষে রাস্তা নির্মাণে আশ্বাস দিয়েছেন।
রামপাল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত শেখ আব্দুস সালামের ছেলে শেখ রাসেল বলেন, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের একজন মানুষ প্রয়াত আব্দুস সামাদের পরিবারসহ আরো অসংখ্য পরিবার সুখবাসপুর দিঘীর পাড় ঘেষে রাস্তা ছাড়াই যাতায়াত করছেন বছরের পর বছর ধরে। রাস্তার অভাবে দুভোর্গ ও ভোগান্তিতে আছেন দিঘীর পশ্চিম পাড়ের ওই পরিবার গুলো। শেখ রাসেল জানান, সুখবাসপুর ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আরো দুইশত পরিবার রাস্তার অভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে কষ্টের মধ্যে রয়েছে। কাজেই ওই দুই স্থানে রাস্তা নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছে অসহায় পরিবারগুলো।
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস জানান, সরেজমিনে আমি ওই রাস্তাটিসহ বেশ কয়েকবার সেখানকার পরিবারগুলোর কষ্টের খোঁজ-খবর নিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব আমি সুখবাসপুর দিঘীর পাড় ঘেষা রাস্তাটির সংস্কার কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যাবস্থা গ্রহন করবো এবং সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের সুখবাসপুর গ্রামের মানুষদের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করবো।