Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

বোরহানউদ্দিনে পুলিশ-তাওহিদী জনতা’র সংঘর্ষে নিহত ৪, বিজিবি মোতায়েন ভোলা

বোরহানউদ্দিনে পুলিশ-তাওহিদী জনতা’র সংঘর্ষে নিহত ৪, বিজিবি মোতায়েন

ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে সমাবেশ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে ।

রোববার বেলা  পৌনে ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে ওই সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক।

ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের দিকে গুলি ছোড়া হয়েছে। তাতে একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।

ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে ‘অবমাননাকর স্ট্যাটাসের’ প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষ হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে মহানবী (সা.) ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ শনিবার ওই যুবকসহ আরো একজনকে আটক করে।

এদিকে কটূক্তির প্রতিবাদে রোববার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় স্থানীয় মুসল্লিরা। বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় মুসল্লিরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ শুরু হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহফুজ পাটোয়ারি, উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র মাহবুব, একই উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজছাত্র শাহিন ও মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট এলাকার মিজান।

আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়া গুরুতর আহত এক পুলিশ সদস্যকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বোরহানউদ্দিনে জরুরিভিত্তিতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক।

বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে রোববার ওই সমবেশ ডাকা হয়েছিল বিপ্লব চন্দ শুভ নামের এক যুবকের বিচারের দাবিতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফেসবুক মেসেঞ্জারে মহানবীকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় গিয়ে তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে বলে জানান। এ ব্যাপারে তিনি জিডি করতে চাইলে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানা হেফাজতে রাখেন।

এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) এনামুল হক বলেন, ‘শুক্রবার রাতে বিপ্লব চন্দ্র আমাদের কাছে আসলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য হেফাজতে রাখি। বিপ্লবের তথ্য মতে তার আইডি হ্যাক করা হয়েছে উল্লেখ করে শাকিল শরীফ (২০) নামে এক যুবক তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা না দেয়ায় শাকিল এসব করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শাকিল শরীফকে শনিবার আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছি। শাকিল শরীফ স্থানীয় নুর আলম মোল্লার ছেলে।’

ওসি এনামুল হক জানান, এরপর তারা ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন এবং বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে বিক্ষোভ সমাবেশ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। তারপরও সমাবেশ শুরু করায় সাধারণ মানুষ আসার আগেই তা বন্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়েছিল।

তিনি জানান, তাদের অনুরোধে সকাল ১০টার দিকে উপস্থিত লোকজনকে নিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার লোক এসে ঈদগাহ মাঠে জড়ো হয়। তারা দুই ইমামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সেখানে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ তখন আত্মরক্ষার জন্য মসজিদের ইমামের কক্ষে আশ্রয় নেয়।

ওসি বলেন, উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে বৃষ্টির মত ঢিল ছুড়তে থাকলে আত্মরক্ষার জন্য শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। হ্যাকিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আটক করা হয়েছে। এরপর শনিবার স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলে রোববারের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।

তিনি বলেন, ‘আমরা হ্যাকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আটকও করেছি। এরপর এ নিয়ে গত রাতে স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছে আজকের প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে।’

‘তখন সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে। যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি তখন একদল উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’