উত্তাল পদ্মার ভাঙন তান্ডবে ছোট হয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মানচিত্র ! মুন্সিগঞ্জ /  বিশেষ সংবাদ / 
রাক্ষুসী পদ্মার উত্তাল ভাঙন তান্ডবে ছোট হয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মানচিত্র। সর্বগ্রাসি, প্রমত্তা রাক্ষুসী পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠেছে। ফলে এখন বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরবর্তী গ্রামে। প্রমত্তা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে প্রচন্ড গতিবেগে ঘূর্ণায়মান স্রোতের বিকট শোঁ শোঁ গর্জনের শব্দে ভয়ে না ঘুমিয়ে রাতযাপন করছেন নদী-তীরবর্তী মানুষ। শিশু-কিশোরসহ পরিবারের অনেকে ঘুমন্ত অবস্থায় কখন বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনার মতো তারাও পদ্মায় ঘূর্ণায়মান স্রোতে তলিয়ে যায়- এমন ভয়ে রাতে জেগে থাকছেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড়ের হাইয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দারা।
ক্ষতিগ্রস্ত কিসমত আলী বেপারী ভয়ার্তকণ্ঠে পদ্মার ভাঙন তান্ডব লিলার কথা এভাবেই জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে অপরিকল্পিত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত থাকায় টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী, কামারখাড়া, দীঘিরপাড়, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বড়াইল, গারুরগাঁও, চৌসার, বাগবাড়ী, জুসিষা গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, প্রথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাাসা, রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন তান্ডবে এরই মধ্যে পাল্টে গেছে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানচিত্র। এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই হাইয়ারপাড় গ্রামের ২২ পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার ভাঙনে পৈতৃক ভিটাবাড়ি হারিয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড়ের সুজ্জত আলী, সায়েদ হাওলাদার, খালেক শেখ, ইদ্রিস হাওলাদার, করিম হাওলাদারসহ বেশ কয়েকটি পরিবার সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে হাইয়ারপাড় গ্রামের জামে মসজিদটিও। যে কোনো সময় মসজিদটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও ভাঙনের মুখে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হাইয়ারপাড় গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আবদুল খালেক বলেন, এরই মধ্যে তার বসতবাড়ির মূল ঘরটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পাশে থাকা অপর একটি ঘরে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে ভাঙন আতঙ্কে। অবৈধভাবে অপরিকল্পিত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে পদ্মার ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ তার।
আতঙ্কিত গ্রামবাসীর অভিযোগে জানিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারটি ড্রেজার দিয়ে পদ্মার বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিলই, দীঘিরপাড়, ও কামারখাড়া ইউপির প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এ চক্রের নেতৃত্বে অবৈধভাবে পদ্মা নদীতে ড্রেজিং করে মাটি কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙন তীব্র হয়ে ওঠে। অবৈধভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এখন পদ্মার তীব্র স্রোতে তীরঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কামারখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে বেশকিছু বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তের কামারখাড়া দীঘিরপাড় এলাকায় স্থায়ী কোনো বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় নদী ভাঙন অব্যাহত আছে।
দীঘিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হাওলাদার জানান, কিছুদিন ধরে আবারও পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবেই ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার ফলে এখন ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা আক্তার জানান, রাক্ষুসি পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্নিষ্টদের ভাঙনে ক্ষতিপ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো: মুনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।