Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

সুনামগঞ্জে ধানের দরপতনে কৃষিতে অনাগ্রহ

কৃষকরা জমি বর্গা দিতে পারছেন না, বহু জমি পতিত থাকার আশংকা কৃষি সংবাদসুনামগঞ্জ

কৃষকরা জমি বর্গা দিতে পারছেন না, বহু জমি পতিত থাকার আশংকা

সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো জমি বর্গা, রংজমা বা পত্তন দেয়া যাচ্ছেনা। হাওরের কৃষকদের জমি প্রতি বছরই ভাদ্র-আশি^স মাসে বর্গা দেয়া হয়। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় এবার বড় কৃষকদের কেউই জমি রংজমা দিতে পারছেন না। বর্গা চাষীরাও জমি বর্গা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। গৃহস্থ-কৃষকদের আশংকা এবার বহু জমি পতিত থাকতে পারে। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, দিরাই-শাল্লাসহ ১১ উপজেলায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষকের (২০১৪ সালের হিসাব) বছরে একটি মাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভর তাদরে জীবন-জীবিকা নির্ভর। গত বোরো মওসুমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছিল ২ লাখ ২৪ হাজার ৪০ হেক্টর। ধান উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মে.টন। ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও ধানের দর পতনের কারণে উৎপাদনের খরচের চেয়ে কমদামে ধান বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

জামালগঞ্জের সর্ববৃহৎ ফসলী এলাকা পাকনা হাওরের ফেনারবাঁক গ্রামের কৃষক নবাব মিয়া বড় আক্কেপ করে বলেন, ‘আমরা মনে হয় বাংলাদেশের বাইরের মানুষ’। বহু কষ্ট কইরা ধান ফলাই, এই ধান সরকারী গুদামে দিতে পারিনাই। বাড়িতে ৫’শ সাড়ে ৫’শ টাকা দরে ধান বিক্রি করন লাগে। এই বছর জমিই রোয়াইতে পারবোনা। আগে যে জমি রংজমা-বর্গা দিছি, এইবার কোন মানুষ জমি নিতে চায়না। পাকনা হাওরে এবার মনে হয় বহু জমি পতিত থাকবো। আমার নিজের জমিতে এবার কীভাবে চাষাবাদ করাবো? এই চিন্তায় শেষ। অন্যরাও জমি বর্গা নিতে চাচ্ছে না। একই গ্রামের কৃষক বজলুর রহমান চৌধুরী জানালেন, কৃষি কাজের সময় দিন-রাইত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ধান ফলাইয়া কোন লাভ নাই। কত আর লোকশান দিমু। ধানের দাম নাই, সরকারী গুদামেও ধান দিতে পারিনাই এই কারনে অর্ধেক লছ দিয়া ধান বিক্রি করছি। সরকার যে দামে গুদামে ধান নিছে সব কৃষকরে ধান যদি নিত তা হইলে মুটামুটি ভাবে আমরা চলতে পারতাম। যাদের ধান নিছে, ওদের কয় শতক জমি আছে ? আমরা যারা মধ্যবিত্ত ও বড় গৃহস্থ (কৃষক) তারা কেউই সরকারী গুদামে ধান দিতে পারেনি। জমি করে সব লোকশান। আর জমি না করারই ইচ্ছা যদি মানুষ পাই রংজমা দিমু না পাইলে কি করবো বুঝতে পারছিনা। তিনি বড় আক্ষেপ করে বলেন অনেক চেষ্টা করেও একমণ ধানও সরকারি খাদ্য গুদামে দিতে পারেন নি।

এ ব্যাপারে  তাহিরপুরের কৃষক শামীম মিয়া বলেন, ‘খেত পাতানি (রংজমা) যাইতেছে না। গত বছর অনেক ঋন কইরা বীজ বুনা, সার কেনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কিছু জমি করছিলাম। এবার কয়েক জনের সাথে বল্লাম জমি নিতে তারা কয় আমরা খেত করতাম নায়।’ ক্ষেত কইরা লাভ নাই লস, সরকারী গুদামে ধান দিতে পারিনাই নেতারারে যারা ফিট করতে পারছে হেরার ধানই গুদামে নিছে। দক্ষিন সুনামগঞ্জের সংবাদকর্মী নাঈম তালুকদার বলেন, ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজের টাকা, আগাছা পরিষ্কার করা, কাটা, মাড়া ও বাড়ি পর্যন্ত ধান আনতে প্রতি একরে যে টাকা খরচ হয় এই টাকার ধান কেউই বিক্রি করতে পারে নি। তাহলে কীভাবে জমি করবে?

এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক আলমগীর কবীর বলেন, আমারা বড় গৃহস্থরা ধান ক্ষেত করে কোন লাভ নাই। লিল্লাহ্, সদকা, সাহায্য, ধান বিক্রির সুযোগ সব তো গরিবদের। আমরাতো পুতুল, বড় আর মধ্যবিত্ত কৃষকরা ঠেকছে। তারা না পারে লাইনে দাঁড়াতে, না নেয় লিল্লাহ্ না পারছে সরকারী গুদামে ধান দিতে। যে ধান পাইছিলাম বৈশাখেই ঋন বিন দিয়ে অর্ধেক ছিল। পড়ে পারিবারিক কাজে ৫’শ থেকে সাড়ে ৫’শ টাকা দরে ধান বেচন লাগছে। গুদামে আমরার ধান নেয়না। আমরা না-কি নীতিমালায় পড়িনা! আমরার কৃষি কইরা কি দোষ করছি, অর্ধেক দামে ধান বেছন লাগে গ্রামের দালালদের কাছে। এবার আমি রংজমার টাকা না দেবার শর্তেও কাউকে জমি দিতে পারছি না। অনেক জনকে বলছি বৈশাখে যা পারো দিও, এই কথা বলার পরেও কেউই জমি নিতে চাইছে না। কারন ধান কইরা লাভ কি উৎপাদন খরচইতো উঠেনা। 

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা জাকারিয়া মোস্তফার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে ধান গুদামজাত করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়লে এমন সমস্য কমে আসতো। কর্তৃপক্ষ আমাদের যে নীতিমালায় ধান ক্রয় করতে বলেছে আমরাতো এর বাইরে যেতে পারিনা। তবে সবাই ধান দিতে পারলে ভালো হতো।