Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

এবারও জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী জাতীয়

এবারও জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম বার্ষিক অধিবেশন। এই অধিবেশনে ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি হবে তার ১৬তম ভাষণ। এবারও এ বিশ্বসভায় বাংলায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভাষণে গুরুত্ব পাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু। ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ভাষণের দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভাষণ দেবেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও সেপ্টেম্বরের তৃতীয় মঙ্গলবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অধিবেশনে শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। এবারের অধিবেশনে জলবায়ু ও শরণার্থী ইস্যু সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। এরপর গুরুত্ব পাবে টেকসই উন্নয়ন ও অভিবাসন সমস্যা। এছাড়া, পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূলের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। এর বাইরে গতবারের মতো এবারো রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে জাতিসংঘে বিভিন্ন ফোরামে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হলেও মূল অধিবেশণ শুরু হবে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অধিবেশনের বিষয়ে জানানো হবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্যে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে যাবেন শেখ হাসিনার। ২৭ সেপ্টেম্বর মূল ভাষণ ছাড়াও জলবায়ু, টেকসই উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য, রিফিউজি ইস‌্যুতে শীর্ষ সম্মেলনেও ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

জানা গেছে, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতিও প্রশংসিত হয়েছে জাতিসংঘে। নানাবিধ সমস্যা সত্বেও মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে তার প্রশংসা আরো জোরালোভাবে উচ্চারিত হবে বিশ্বসভায়। এভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় দীপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ-তারও স্বীকৃতি আসতে পারে আনুষ্ঠানিকভাবে।

জাতিসংঘে সমস্ত কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটাবে বাংলাদেশ মিশন। এ নিয়ে সবাই ব্যস্ত রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে। এছাড়া, ঢাকা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে।

জানা গেছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের প্রধানদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো জাতিসংঘ এবং শেখ হাসিনার হোটেল কক্ষে হতে পারে। সফরসঙ্গীর অধিকাংশই গ্র্যান্ড হায়াতে উঠলেও প্রধানমন্ত্রীসহ তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা থাকবেন হোটেল প্যালেসে। সেই হোটেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

জাতিসংঘ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে বসবে বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ বৈঠক। একই দিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আমন্ত্রণে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সাধারণ বিতর্ক চলাকালে আরো কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে।

২৪ সেপ্টেম্বর হবে টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত জাতিসংঘের উচ্চ স্তরের রাজনৈতিক ফোরামের (এইচএলপিএফ) বৈঠক। এই বৈঠক ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর সারা দিন ধরে চলবে।

পরের দিন 'উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন' বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। একই দিন পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূলের বিষয়েও বৈঠক হবে। ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোর উন্নয়ন এবং এ বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে।

অধিবেশনের কার্যতালিকা থেকে জানা গেছে, প্রথম সাত দিন অতিবাহিত হবে ২১ জন উপ-সভাপতি নির্বাচন ও বিভিন্ন পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে। ইতিমধ্যেই নাইজেরিয়ার তিজ্জানি মোহাম্মদ-বান্ডে চলতি অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অধিবেশনের মূল আকর্ষণ সাধারণ বিতর্ক শুরু হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। চলবে দুই সপ্তাহ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, সৌদি আরবের যুবরাজ ও উপ-প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রমুখ এরই মধ্যে অধিবেশনে যোগ দেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে তিনি রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।