Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

পুলিশকে যেন জনগণ বন্ধু ভাবতে পারে, এভাবে নিজেকে গড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী জাতীয়

পুলিশকে যেন জনগণ বন্ধু ভাবতে পারে, এভাবে নিজেকে গড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষানবীশ পুলিশ কর্মকর্তাদের এমনভাবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন যেন বিপদে জনগণ তাঁদের বন্ধু ভাবতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নবীন পুলিশ কর্মকর্তা এবং আজকে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে (এক বছরের) কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তাদের এটাই বলবো যে-বিপদে জনগণের বন্ধু, এভাবেই নিজেকে গড় তুলবেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব তা যথাযথভাবে পালন করবেন এবং সমাজের সমস্ত কালো বিষয়, যা দেশ ও সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

শেখ হাসিনা রবিবার সকালে এখানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সবসময় মনে রাখবেন, আপনারা জনগণের পুলিশ।’

‘কারণ, জনগণের মাঝেই আপনাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন। কাজেই, তাঁদের কল্যাণ এবং তাঁদের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা দেওয়া-আপনাদের দায়িত্ব,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আজকের যারা নবীন কর্মকর্তারা, প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন কাজে যোগদান করছেন তাঁদের আমি এটাই আহ্বান জানাবো-সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সঙ্গে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী সকালে সারদাস্থ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ভিআইপি অতিথি ভবন ‘তরুণিমায়’ পৌঁছলে হাউজ গার্ডের একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মো. নজিবুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী সেখানে ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পদকও বিতরণ করেন।

শিক্ষানবীশ পুলিশ কর্মকর্তা শারমিন আক্তার চুমকি কমান্ডার হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন।

মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক, উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচে ১১৭ জন এএসপি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ১৭জন ছিলেন মহিলা সদস্য।

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে মো. খায়রুল কবির ‘বেস্ট শ্যুটার’, মো.আব্দুল্লাহ আল মামুন বেস্ট ‘ফিল্ড পারফর্মার’ মো. সালাহউদ্দিন বেস্ট হর্সম্যানশিপ এবং সাইফুল ইসলাম খান ‘বেস্ট একাডেমিক’র পুরস্কার লাভ করেন। মো. সালাহউদ্দিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষানবীশ ও বিবেচিত হন।
প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এবং শিক্ষানবীশ এএসপিদের সঙ্গে ফটো সেশনেও অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পুলিশ একাডেমীতে একটি আম গাছের চারা রোপণ করেন এবং ৩৬তম ব্যাচের কোর্স সমাপনী উপলক্ষ্যে কেক কাটেন।

প্রধানমন্ত্রী এবারের পুলিশ বাহিনীর সদস্য নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া না যাওয়ায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁরা (পুলিশ বাহিনী) যে নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়েছেন সেখানে একটি লোকও কোন ধরনের দুর্নীতি বা ঘুষ দেওয়ার কথা বলতে পারেনি। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এবার পুলিশ বাহিনীতে যে নিয়োগ হয়েছে, সেজন্য তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সরকার প্রধান বলেন, ‘জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবার জন্য এই পদক্ষেপটা আমি মনে করি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতেও সেভাবেই আপনারা এগিয়ে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে বলেই আজকে আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে এবং এই অভিযান চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশের অকুতভয় সদস্যদের সশস্ত্র প্রতিরোধের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে ‘স্বাধীনতা পদক ২০১১’ এ ভূষিত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পুলিশের নবীন কর্মকর্তারাও তাঁদের পূর্বসূরীদের মত দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।’
চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যেন সেবা পায়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুুলিশ বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৪৯ হাজার ২শ’ পদ ও সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সাথে বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক বিশেষায়িত পুলিশও তৈরী হচ্ছে। যেমন শিল্পাঞ্চল ভিত্তিক শিল্প পুলিশ, ট্যুরিষ্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, দ্ইুটি স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন এবং ‘গার্ড এন্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের পদায়নের ক্ষেত্রে তাঁদের উচ্চমান প্রদানে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, রেশন প্রদান, আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি, ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তণ এবং জনগণের জন্য পুলিশ সেবাকে তাঁদের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে ‘৯৯৯’ এ কল সার্ভিস চালুর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।

তিনি পুলিশের এসব সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়েও তাঁর সরকারের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।

আজকের বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ। তার জন্য দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে অপরিহার্য্য।’

পুলিশ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তা সবার জন্য দোয়া ও আর্শীবাদ করে তাঁরা যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে পারেন এবং জাতির পিতার কাঙ্খিত সোনার বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখতে পারেন সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বাসস