Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

বালিশ কান্ডের থেকেও বড়কান্ড, ফমেকের পর্দা দুর্নীতি কান্ড! স্বাস্থ্যসেবাফরিদপুর

বালিশ কান্ডের থেকেও বড়কান্ড, ফমেকের পর্দা দুর্নীতি কান্ড!

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের দুর্নীতি যেনো হাল সময়ের রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের বালিশ ক্রয়ের দুর্নীতিকেও হার মানিয়েছে। রুপপুরে ৬ হাজার টাকায় বালিশ কেনা হয়েছিলো আর এখানে ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে আইসোলেশন কক্ষের পর্দা ক্রয়ের দুর্নীতি! এছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে দুর্নীতর বিস্তর নজির। এমনই একটি আমেরিকার তৈরি ভিএসএ অনসাইড অক্সিজেন জেনারেটিং প্লান্ট যাতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা। 

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে এসব যন্ত্রপতির খোঁজ নেন কর্তৃপক্ষ। এসময় একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্লান্টের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, এ যন্ত্রটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের পিছনে পশ্চিম পাশের একটি কক্ষে স্থাপন করা  হয়েছে। গত তিন বছর ধরে ওই কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই প্লান্টটি দেখানোর সময় তালায় জং ধরে যাওয়ায় হ্যাক্সো ব্লেডদিয়ে তালার কড়া কেটে ওই কক্ষে ঢুকতে হয়েছে। তবে যন্ত্রটির কি সচল রয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। এছাড়া এসময় কয়েকটি যন্ত্র খুঁজেই পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনায় অনিয়ম এবং আর্থিক ঘাপলার হয়েছে অভিমত ব্যক্ত করে হাইকোর্ট দুদককে এ বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই সময়কালে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরণের ১৬৬টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। অনিক ট্রেডার্স ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিল পেলেও ১০ কোটি টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যন্ত্রপাতির দাম বেশি দেখানোসহ বিভিন্ন অসংগতির কারনে আটকে দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ১ জুন অনিক ট্রেডার্স হাইকোর্টে এটি রীট করে। এ রীট করার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্ব্য সেবা বিভাগের সচিব ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অনিক ট্রেডার্সের সরবরাহ করা ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতির একটি তালিকা চেয়ে পাঠান।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা গত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ১০ কোটি টাকার বিপরীতে দামসহ ১০ টি আইটেমের যন্ত্রপাতির একটি তালিকা দেন।

ওই তালিকার সাথে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সরেজমিনে পরিদর্শকালে যে অবস্থা দেখা যায়, পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আমেরিকার তৈরি ভিএসএ অনসাইড অক্সিজেন জেনারেটিং প্লান্ট গত তিন বছর ধরে তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচে হাসপাতাল সার্টেইন সিসটেম ফর আইসিইউ/সিসিইউ বেডস কোরিয়া খাতে ১৬টি শয্যার জন্য সাড়ে ১২ হাত দৈর্ঘ ও সাড়ে চার হাত প্রস্থ বিশিষ্ট আধুনিক পর্দা কেনা হয়েছে। ১৬টি শয্যার জন্য কেনা এই পর্দার প্রতিটি ক্রয়ে খরচ দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা করে। তবে যন্ত্রপাতি থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারি না থাকায় গত তিন বছর ধরে এই সিসিইউ ইউনিটটিতে কোন কার্যক্রম নেই। ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিয়া সুলতানা জানান, তিনি প্রতিদিন এ কক্ষটি খোলেন এবং দেখাশুনা করেন আবার বন্ধ করে দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনটি ডিজিটাল প্রসেসার সিস্টেম যা আমেরিকার তৈরি তার দাম দেখানো হযেছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রকৃত পক্ষে ডিজিটাল প্রসেসার সিস্টেম যে মেশিনটি সরবরাহ করা হয়েছে সেটি আমেরিকার তৈরি নয় বরং কোরিয়ার তৈরি। এ যন্ত্রপাতিগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে না।

এছাড়া আমেরিকার তৈরি ভ্যাকুয়াম প্লান্ট দাম দেখানো হয়েছে ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এটি পুরনো দন্ত বিভাগে স্থাপন করা হয়েছে। এই কক্ষটিও খোলা হয়না এবং এই যন্ত্রটিও ব্যবহৃত হচ্ছে না।

২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচে আমেরিকার তৈরি বিআইএস মনিটরিং সিস্টেম মেশিনটি অপারেশন থিয়েটারে স্থাপন করা হয়েছে বলে বলা হলেও বাস্তবে এটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে স্টোর কিপার আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, ‘এই মেশিনটি আছে হয়তো অন্য কোন নামে কোথাও পড়ে আছে।’

স্মরণকালের এই দুর্নীতিকান্ডে চারটি থ্রি হেড কার্ডিয়াক স্টেথিসস্কোপ আমেরিকার তৈরি দাম দেখানো হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার পাঁচশ টাকা। এর দুটি সিসিওয়ার্ড ও দুটি মেইল মেডিসিন ওয়ার্ডের দুই ইউনিটে রয়েছে। 

২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচে আমেরিকার তৈরি দু’টি ফাইবার অপটিক ল্যারিনগোসস্কোপ সেটের একটি গাইনি ওটিতে এবং একটি জেনারেল ওটিতে স্থাপন করা রয়েছে। ওই সময়ে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচে কেনা কোরিয়ার তৈরি  ছয়টি টোমেটিক স্কাব সিসটেম অপারেশন থিয়েটারে এবং তিন লাখ টাকায় কেনা ১০টি চাইনিজ শাকর্শন মেশিন অপারেশন থিয়েটারের জন্য কেনা হয়।

চার লাখ ৮৭ হাজার পাঁচশ টাকা খরচে আমেরিকার তৈরি ২০টি ড্র সিস্টেম ইকুইপমেন্ট  আইসিইউ ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে। ওয়ার্ডটি চালু না থাকায় কোন কাজে লাগছে না এসব। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত প্রকেল্পের অধিনে এ যন্ত্রপাতি কেনা হয়। 

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, আদালতের নির্দেশনা তিনি পাননি। পেলে তিনি আদালতের নির্দেশনা মেনে চলবেন। দদুক যদি তদন্ত করে তবে তাকে তিনি সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, ১০ কোটি টাকা যে সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে তার মূল্য কিছুটা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে বলে তাঁর ধারনা। তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। 

এই বিভাগের অন্যান্য খবর