Opu Hasnat

আজ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে বেড়াকুটির চাষিরা কুঁচিয়া চাষে স্বাবলম্বী কৃষি সংবাদনীলফামারী

সৈয়দপুরে বেড়াকুটির চাষিরা কুঁচিয়া চাষে স্বাবলম্বী

সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে সৈয়দা রুখসানা জামান শানু : নীলফামারী জেলার বেড়াকুটি ইউনিয়নে বেসরকারী সংস্থা সেলফ হেল্প এন্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প), সৈয়দপুর শাখার লিফট কর্মসূচীর আওতায় এবং বিকেএসএফ এর সহযোগিতায় এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া মাছের চাষাবাদ শুরু করেছেন। জাগেষ চন্দ্র, বাবলু, চঞ্চলসহ এলাকার আরো অনেকে আছেন যাদের মাস খানেক আগে ছিল না তেমন কিছু। কর্মহীনতার মাঝে সামন্য দিনমজুরী হিসাবে চলতো যাদের সংসার। কিন্ত এখন তারা স্বপ্ন দেখছে এবং কুঁচিয়া চাষে অনেকটা স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। 

সরেজমিনে বেড়াকুটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়ার চাষাবাদ শুরু করেছেন এখানকার কৃষকরা। হাটু পানিতে ১৫ ফিট স্কয়ার করে জায়গা নিয়ে ৬/৭টি ছোট ছোট ডিচে চাষাবাদ হচ্ছে কুঁচিয়া। আর তার পাশে কুঁচিয়ার খাবার হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে কেঁচোর খামার। এরুপ ছোট ছোট ডিচ ইউনিয়ন সহ এর আশেপাশে রয়েছে ৪১টি। মূলত শার্পের লিফট কর্মসূচীর আওতায় ও পিকেএসফ এর সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষের জন্য ৬০ জন কৃষককে ১৫ দিনের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে যাতে তারা কর্মহীনতার মাঝেও স্বামলম্বী হতে পারে। 

সাপের মতো দেখতে মনে হলেও কুঁচিয়া এক প্রকার মাছ। যার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (Moneptorus Cuchia)। অনেকেই কুঁইচা, কুঁচো, কুঁচা বলেও চেনে। সাধারণত খাল-বিল, হাওড়-বাওড়,ও প্লাবিত অঞ্চলে কুঁচিয়া মাছের দেখা মিললেও বর্তমানে এসব জলাভূমিগুলো দুষিত ও বিনষ্ট হওয়ায় কুঁচিয়া মাছ ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে। 

বিলুপ্ত প্রায় এ কুঁচিয়া মাছের চাষাবাদ বর্তমানে একুয়াকালচার ও প্রাকৃতিক জলজ ব্যবস্থাপনা এ দুই পদ্ধতিতে শুরু করেছে অত্র এলাকার কৃষকরা। একুয়াকালচার পদ্ধতিতে নির্মিত একটি ০.৫ আয়তন বিশিষ্ট ডিচে তারা প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১০০ টি পোনা ছেড়েছেন এবং খাবার হিসাবে দেওয়া হয়েছে তেলাপিয়া বা কার্প মাছের পোনা।

অপর প্রাকৃতিক জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটিতে কুচিয়া মাছের ডিমের আকার বড় এবং সংখ্যায় কম হওয়ায় প্রাকৃতিক জলজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে পোনা উৎপাদন ও মাছ বড় করে বাজারজাত করা হয়। যদিও এখানকার কৃষকরা একুয়াকালচাল পদ্ধতিকেই বেছে নিয়েছেন।

চাষি জোগেষ জানান, আগে ক্ষেতে কাজ করতাম। এখন কুঁচিয়া চাষে লাভবান হচ্ছি। অল্প খরচে ছোট পুকুরেই চাষ হচ্ছে কুঁচিয়া। সাথে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। একই কথা জানান এলাকার অন্যান্য কৃষকারা। পুকুরের মধ্যে পাড় করে ডিচে ২ থেকে ৩ ফিট গভীর পানিতে চাষাবাদ হচ্ছে কুঁচিয়া মাছের। খরচও কম পড়ে চাষাবাদে বলে জানান কৃষক বাবলু। কুঁচিয়া মাছ ডিম কম দেয় বলে কৃত্রিম প্রজননের তেমন সুুুুযোগ থাকে না। তাই প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের পথ বেছে নিতে হয়।

সেলফ হেল্প রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প) এর লিফট কর্মসূচীর মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন প্রামানিক বলেন, মূলত দিন মজুর, কর্মহীন চাষিদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে আমরা এ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। চাষিদের আমরা বিনামূল্যে প্রশিক্ষনের পাশাপাশি পুকুর পাড় তৈরির জন্য বাঁশের বেড়া, পলিথিন, নেট, চোংগা, মাটির হাড়ি সরবরাহ করছি। 

কুঁচিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্পর্কে তিনি বলেন,  মূলত এ কুঁচিয়া এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। একটি পূর্ণ বয়স্ক কুঁচিয়া মাছ ২ হাজার পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ একটি কুচিয়ার ওজন ৩০০/৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। কুঁচিয়া মাছ কাঁদায় পট করে বাস করে। কুঁচিয়া সাধারণ খাবার হিসাবে জীবন্ত ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, কেঁচো খেতে পছন্দ করে বলে পানিতে কুঁচিয়ার পাশাপাশি ছোট মাছও ছাড়া হয়েছে।

সৈয়দপুর স্বাদুুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রশিদুল হাসান কুঁচিয়া মাছের ঔষুধি গুণ সম্পর্কে বলেন, কুঁচিয়া মাছ রক্তশূণ্যতা পূরনের পাশাপাশি শারিরিক দুর্বলতা, অ্যাজমা, ডায়াবেটিক, বাতজ্বরসহ অনেক রোগের মহৌষদের মত কাজ করে। তাছাড়া ধান ক্ষেতের ফসল অনিষ্টকারী পোকা লার্ভা, শামুক খেয়ে কুঁচিয়া কৃষকের উপকারী বন্ধু হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হজম শক্তির ক্ষমতা বাড়ায়।

নীলফামারী, সৈয়দপুরসহ এর আশেপাশে নির্বাচিত এলাকায় একুয়াকালচার পদ্ধতিতে কুচিয়া চাষের জন্য যে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সরকারি পর্যায় সব ধরণের সহযোগিতাও করা হবে বলে জানান তিনি।