Opu Hasnat

আজ ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সারাটি জীবন ভ্যানের চাকা ঘুরিয়েও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি প্রতিবন্দি লিটন নড়াইলবিশেষ সংবাদ

সারাটি জীবন ভ্যানের চাকা ঘুরিয়েও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি প্রতিবন্দি লিটন

জীবনের নাট্যমঞ্চে অভিনয় করতে করতে আমি আজ ক্লান্ত। হয়তো অভিনয় করে বেঁচে থাকার জন্যই আমার জন্ম। আমারও ইচ্ছে করে হাসি আর আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে। কোন আঘাত পেলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আর আঘাত করোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে। এমনই না বলা হাজার কথা প্রতিবন্দি লিটন মোল্যার চোখে মুখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 

লিটন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলাধীন মঙ্গলহাটা গ্রামের মোঃ আফিল উদ্দিন মোল্যার সন্তান। দেশ স্বাধীনের আগে ঘর আলো করে মায়ের কোল জুড়ে ধরণীর বুকে ভুমিষ্ট হয় শিশু লিটন। বাবার স্নেহে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয় শৈশবেই। একটি রিকশার চেনের ভিতর হাত ঢুকে গিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে দুরন্ত লিটন। কেটে ফেলতে হয় বাম হাত। তখন তাঁর বয়স ৭-৮ বছর। শৈশবেই থেমে যায় দুরন্তপনা। হাত হারিয়ে প্রাইমারী শেষ করলেও দেখা মেলেনি হাইস্কুলের। অভাবের সংসারে ক্ষুধার যন্ত্রনা মেটাতে ক্লান্ত কৃষক বাবা পারেনি লিটনকে হাই স্কুলে ভর্তি করতে। দুঃখ দুর্দশার মধ্য দিয়ে বড় হয় লিটন। যৌবনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে। ২৫ বছরের দাম্পত্ব জীবনে তাঁদের সংসারে বর্তমানে রয়েছে একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান। দুই সন্তানের জনক লিটন বর্তমানে এলাকার একজন অভিমানি ভ্যান চালক। শত কষ্টে ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকলেও অন্যের নিকট সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। জীবনের বেশীর ভাগ সময়টা কেটেছে তিন চাকার ভ্যান চালিয়ে। উপজেলার সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতি মাসে প্রতিবন্দি ভাতা হিসেবে পায় মাত্র ৫’শ টাকা। প্রতিদিন সে ভ্যানের চাকা ঘুরিয়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় করতে পারলেও ঘোরাতে পারেনি ভাগ্যের চাঁকা। অভাব যেন নিত্যসঙ্গী, কোন ভাবেই পিছু ছাড়ছে না তাঁর। সামান্য আয়ের মধ্য দিয়ে ছেলেকে এস এস সি পাশ করাতে পারলেও ভর্তির টাকা যোগাড়ে ব্যার্থ হয়ে সেখানেই থেমে যায় এক মাত্র ছেলের লেখাপাড়া। 

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) লিটন মোল্যার সাথে কথা বলার সময় তার জীবনের এরকম না বলা অনেক কথা জনা যায়। লিটন মোল্যা পরিশেষে এই প্রতিবেদককে জানান, সরকার যদি আমার ছেলেকে একটি চাকুরী দেন, তাহলে আমার সারাজীবনের  কষ্টের অবসান ঘটবে।