Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ, ৩ দিনে ২০ জনের নামে মামলা চুয়াডাঙ্গা

দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ, ৩ দিনে ২০ জনের নামে মামলা

দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরায় পথে দেদাচ্ছে আসছে ভারতীয় গরু ও মহিশ। চোরাকারবারীরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে কৌশলে এসব গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে। বাংলাদেশ বডারগার্ড বিজিবি প্রতিনিয়ত পরিত্যক্ত অবস্থায় চোরাই পথে আসা গরু মহিষ জব্দ করলেও চোরাকারবারী দের আটক করতে পারছেনা তারা সবসময় থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। গরু মহিষ চোরাকারবারীর সাথে জড়িত সন্দেহে গত তিন দিনে সীমন্তিবর্তী দুই গ্রামের ২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি। 

এরা হলো এরা হলেন, চাকুলিয়া গ্রামের আরাফাত হোসেনের ছেলে সহিদ মিয়া (২৪) সাদেক হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬) ছালে আহমদের ছেলে বাবুল মিয়া (২৮) কুদ্দুস আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২৭) আবু তাহেরের ছেলে গনি মিয়া (২৮) দৌলত খানের ছেলে মকবুল মিয়া (২৫) হাসেম আলীর ছেলে সম্রাট(২৮) মিজানুর রহমানের ছেলে আমানউল্লাহ(২৪) সামউদ্দিনের ছেলে আব্দুল মমিন (২৫) ও আব্দুল আলিমের ছেলে আলমগীর (২৩) তাহের আলীর ছেলে আব্দুল গনি(২৮), আব্দুল হাকিমের ছেলে আলাল উদ্দিন (৩৫), -হোসেন আলীর ছেলে সম্রাট শেখ(২৫)। ও ঠাকুরপর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে বকুল মিয়া(২২) কবীর হোসেনের ছেলে আলমগীর(২৮) আলমগীর হোসেনের ছেলে কামরুল(২৬) আসাদুলের ছেলে ওয়াহিদ(২৪) আজাদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন(২৬) ফজলু মিয়ার ছেলে আরিফ(২৫) ও কবীর মিয়ার ছেলে আশেদ আলী(২৪)।

এভাবে চোরাই পথে গরু মোষ আসতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে স্থানীয় খামারীরা। কোরবানি আগ পর্যন্ত ভারতীয় গরু আসতে থাকলে দেশীয় গরুর বাজার ভালো না পেলে খামারিরা এই চাষে আগ্রহ হারাবে। 

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সুত্রে জানাগেছে, উপজেলায় খামার গুলোতে যে পরিমান গরু ছাগল মজুদ আছে তা আগামী কোরবানীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা সম্ভব হবে। 

জানাগেছে, দামুড়হুদা এলাকায় দীর্ঘ সীমান্ত থাকলে ও মুন্সিপুর, ঠাকুরপুর, চাকুলীয়া, বাড়াদী সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে এসব গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। চোরাকারবারীরা অধিক লাভের আশায় রাতের আধারে অতি কৌশলে চোরায় পথে এসব পশু দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামের ভিতরে লোকালয়ের বাইরে মাঠের ভিতরের বাগানে রাখে। পরবর্তিতে ঐ সব পশু স্থানীয় হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকে।  

ভারতীয় গবাদিপশু দেশে প্রবেশ করায় খামারীরা তাদের পালিত গবাদিপশুর বাজার দর নিয়ে আশংখ্যা করছেন। তারপরে ও এলাকায় দিন দিন খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দামুড়হুদার জুড়ানপুর গ্রামের মৃতু নুর মোহাম্মদের ছেলে আছির উদ্দীন জানান, ২০১৮ সালে প্রথম দিকে আট লক্ষ টাকা ব্যায়ে টিনের সেড সাঁঝের মায়া এগ্রো নামে খামার গড়ে তোলে।  পরবর্তিতে আট বিঘা জমিতে গরুর খাবারের জন্য ঘাস লাগায়। এর দুই মাস পর পনের লক্ষ টাকায় ২০টি এড়ে বাছুর ও চাঁর টি গাভি ক্রয় করে। পরে ছয়মাস পালন করার পর এড়ে গরু বিক্রি করে। এসময় ভারতীয় গরুর চাপে বাজার ভালো না পাওয়ায় চার লক্ষ টাকায় লোকসান গুনতে হয়। পরবর্তিতে চারটি এড়ে বাছুর ও ১২ টি এড়ে বাছুর সহ গাভি কেনেন। বর্তমানে তার খামারে গাভিসহ ২৬ টি গরু রয়েছে। চোরাই পথে ভারত থেকে গরু মোষ আসায় বাজার দর নিয়ে আশংখ্যা করছেন তিনি।ভারতীয় গরু আসা যদি বন্ধ হয় তাহলে ভালো বাজার দর পেলে লাভবান হবে বলে আশা করছেন।

দামুড়হুদা উপজেলা সদরের খামারী মাহামুদুর রহমান মাসুদ জানান, গত বছর কয়েকটি দেশি জাতের গরু নিয়ে নিজের বাড়িতে গবাদিপশুর একটি ছোট খামার গড়ে তুলেছিলেন। কোরবানির ঈদে বিক্রি করে ভালো লাভবান হবেন এমন আশায় কিন্তু ভারতীয় গরুর চাপে লাভের পরিমান কম হওয়ায়  তিনি বলদ গরুর আবাদ বন্ধ করে এবছর গাভির খামার গড়ে তুলেছেন। এতে সে ভালো লাভবান হচ্ছে বলে জানান। তিনি আরো জানান বাংলাদেশ বডারগার্ড বিজিবি যদি আন্তিরিকতার সাথে চেষ্টা করলেই যেমন চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ হবে তেমনি স্থানীয় খামারীরা লাভবান হবে।

দামুড়হুদার ঠাকুরপুর বিওপি নায়েক সুবেদার আঃ হালিম জানান, চোরাকারবারীরা চোরাই পথে গরু মহিষ আনছে এদের এসব গরু মহিষ আটক করা ও হচ্ছে। এরা পালিয়ে গেলেও এর সাথে জড়িত দের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়াও এদের আটকের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে যে কোনো মূল্যে এই চোরাচালান বন্ধ করা হবে।   

দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মশিউর রহমান জানান, উপজেলা ছোট বড় প্রায় এক হাজার চারশত খামার রয়েছে। এসকল খামারে প্রায় ৭হাজার গরু মজুদ আছে এরমধ্যে ৬হাজার কোরবানিযোগ্য। আসন্ন কোরবানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। যা উপজেলার চাহিদা পুরন করে বাইরে রপ্তানী করা সম্ভব হবে। অপর দিকে ভারত থেকে চোরায় পথে যেভাবে গরু মহিষ আসা শুরু হয়েছে তা কোরবানির আগ পর্যন্ত অব্যহত থাকলে স্থানীয় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এতেকরে খামারীরা এই চাষ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।