বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন : কাজী অমিত মতামত /  ক্যাম্পাস / 
বর্তমান বিশ্বায়নের এই যুগে যে দেশ বা জাতি বিশ্বের সাথে যত তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, সে দেশ বা জাতি ততই এগিয়ে যাবে। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। বিশ্ব সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও অনেক এগিয়ে গেছে। তবে এটা সত্যি যে বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে কিন্তু আপন সংস্কৃতিকে ভুলে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে বাঙালিদের হাজার বছরের পুরানো সংস্কৃতিকে।
এখন, প্রশ্ন হলো আমাদের পুরানো সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে কেন? আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ আমরা সভ্য হচ্ছি, আমাদের আধুনিকতা। এখন, আমরা বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। আমরা দারিদ্র্য রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্টে পরিণতি হচ্ছি। তাই, এখন আর আমাদের পুরোনো সংস্কৃতির প্রয়োজন নেই। হারিয়ে ফেলেছি আমাদের বাঙালিদের জাতিসত্তার পরিচয়।
এখন আমরা হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, হাগ ডে, বিশ্ব মা দিবস, বিশ্ব বাবা দিবস, থার্টি-ফাস্ট ডে ও হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন করি আর আমাদের হাজার বছরের পুরোনো সংস্কৃতিকেই ভুলে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে আমরা আবেগ প্রবণ জাতি। আমাদের আবেগ এত বেশি যে, নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে আকাশ সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এতে যে আমাদের দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। সে খেয়াল আমাদের নেই।
আমরা বাঙালি। আমাদের ভাষা বাংলা। অনেকে এই বাংলাকেই ভুলে যাচ্ছে। আমরা এখন হিন্দি ভাষার প্রতি জোর দিচ্ছি। (কারণ আমরা বাংলা ভাষাকে স্বাধীন করেছি, এখন হিন্দি ভাষাকে স্বাধীন করার প্রসেসিং চলতেছে) পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ২৪ বছরে শত চেষ্টা করেও যে ভাষা বলাতে পারে নি। যে ভাষা রক্ষা করার জন্য পৃথিবীর বুকে বাঙালিরা সর্ব প্রথম রক্ত দিয়েছে আর এখন সেই ভাষাতেই মানুষ যাচ্ছে এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাদের সংস্কৃতিকে কৌশলে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিচ্ছে।
কিছু উদাহরন দিচ্ছি, বর্তমানে বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিশুরা হিন্দি কার্টুন, হিন্দি গান ও ডোরেমন ইত্যাদির উপর প্রচুর আসক্ত। এমনকি তাদের কিছু খাওয়ানো ও ঘুমানোর সময় এই গুলোও দেখাতে হবে। এই শিশুরা স্কুলে যাবার পূর্বেই হিন্দিতে কথা বলা শিখে যায়। আমার একজন ছাত্রী ছিল ক্লাস টু-তে পড়ত। আমি তাকে বাংলায় প্রশ্ন করতাম আর সে হিন্দিতে উত্তর দিত। তা দেখে আমি তো অবাক!
আচ্ছা! আমরা কি ভুলে যাচ্ছি, শিশুরা সুষ্ঠু সংস্কৃতির চর্চা করলে সেটা তার সঠিক মেধা বিকাশে কাজে লাগবে। আর সঠিক মেধা বিকাশের মাধ্যেমেই একটি শিশু নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।
আর আমাদের মা-বোনদের কথা আর কি বলব? তারা তো স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার ওয়ান, সনি, জি স্নাইল ও ইটিভি ইত্যাদির তো অন্ধ ভক্ত। তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনারা কি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চান না কি ভারতীয় চ্যানেলগুলো চান৷ তাহলে আমার মনে হয়, তারা নিঃসন্দেহে ভারতীয় চ্যানেলগুলো চাইবে।বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের ৩০ টিরও বেশি চ্যানেল রয়েছে।
আমাদের হাজার বছরের পুরোনো সংস্কৃতিকে বাদ দিলেও শতবর্ষের সংস্কৃতিকে কি ধরে রাখতে পেরেছি? স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত মাইগ্রেশন চলছিল কিন্তু এর পরে তো আর হয় নি।এখন তো আমরা স্বাধীন দেশ।তবুও আমাদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারি নি।
পরিশেষে এটা সত্য যে, আমরা নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভুলে আকাশ সংস্কৃতির প্রতি প্রভাবিত হচ্ছি। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর হাজার বছরের পুরোনো বাঙালি সংস্কৃতি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সংস্কৃতির শিকড়কে।দুঃখজনকভাবে হলেও সত্যি আমরা জাতীয়ভাবে এর কোনো প্রতিকার করতে পরিনি। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে এবং দেখবে, তাই বলে নিজেদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে অপরের সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হবে। এটা মোটেও কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কাম্য নয়। আমাদের মৌলিক চেতনাকে ধ্বংস করে আকাশ সংস্কৃতিকে ধারণ করা হবে আতœঘাতী সিদ্ধান্ত। সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ নিজ সংস্কৃতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসা। আমাদের সকলের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। নিজস্ব সংষ্কৃতি চর্চায় আরো সচেতন হতে হবে। বাংলাদের সরকারকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে বাঙালি সংষ্কৃতিকে সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন এর হাত থেকে রক্ষা করতে।
লেখক : কাজী অমিত হাসান
শিক্ষার্থী : ঢাকা কলেজ
মোবা : +৮৮০ ১৭৬০-৪৯৭৬১৫
ই-মেইল : kaziamithasan140@gmail.com