Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

কৃষকদের সাথে প্রহসনের শেষ কোথায়? কৃষি সংবাদক্যাম্পাস

কৃষকদের সাথে প্রহসনের শেষ কোথায়?

পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে কৃষকদের জন্য রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।  উন্নত দেশ চীন তাদের ধান চাষাবাদের মৌসুমের শুরুতে উৎসব পালন করে সৃষ্টিকর্তার নিকট অধিক ফলনের জন্য প্রার্থনা করে। জাপান তাদের কৃষকদের জন্য সবসময় উন্নত প্রযুক্তির যোগান দেয় যার মাধ্যমে অল্প খরচে স্বল্প পরিশ্রমে কৃষক অধিক ফলন পেতে পারে। উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া তাদের কৃষকদের জন্য অধিক পরিমাণ বাজেট ঘোষণা করে।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক এবং বেহাল। কৃষক তার পরিশ্রমের সুফল পাচ্ছে না। ন্যায্যমূল্যের জন্য তাকে রাজপথে নামতে হচ্ছে। একজন  কৃষক রাতদিন পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলার সোনার মাটিতে সোনার ফসল উৎপন্ন করে। কিন্তু দিনশেষে তিনি তার ধানের  ক্ষেতে অভিমান করে আগুন ধরিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন  না। 

একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েক মাসের ব্যবধানে নির্দিষ্ট মৌসুমে ধান উৎপন্ন করা হয়।  এছাড়া হাওড়, বাওড়, খাল এবং বিল অঞ্চলে যাদের ধানের ক্ষেত থাকে তাদের ক্ষেত অধকাংশ সময় অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কোনো কৃষকের ধান  অনাবৃষ্টি কখনও বা খরার মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যায়।শেষ পর্যন্ত  কৃষকের শেষ সম্বল সোনার ধানটুকুও আর ঘরে তোলা হয় না।

ধান উৎপন্ন করতে হলে প্রথমে বাজার থেকে ধানবীজ সংগ্রহ করতে হয়। সেখানেও আরেক সমস্যা! ভেজালের ফলে অনেক বীজে বীজ বিশুদ্ধতার হার এবং জন্মানোর ক্ষমতা থাকে না ফলে সেগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। তারপর যে বীজগুলোতে ছোট চারাগাছ উৎপন্ন হয় সেগুলো নির্দিষ্ট জমিতে ভূমিকর্ষণ এবং মই দেওয়ার পরে ছিটানো হয়।  তারপর সেগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে পশুপাখি এবং কীটপতঙ্গ যাতে না খেয়ে যায় সেদিকে সুচতুর দৃষ্টিতে খেয়াল রাখতে হয়। তীব্র শীতে যাতে চারাগাছগুলো মারা না যায় সেজন্য বাজার থেকে পলিমারজাতীয় পলিথিন কিনে সমস্ত ক্ষেত ঢেকে দেওয়া হয়।  পরবর্তীতে কয়েকদিন পর কৃষক নিজে কিংবা কামলাদের দিয়ে চারাগাছগুলো উত্তোলন করে বিস্তৃত পরিসরে ক্ষেতে লাগায়।  তারপর জমিতে কীটপতঙ্গ বিনাশ করতে রাসায়ানিক স্প্রে দেওয়া হয় এবং আগাছাগুলো তুলে ফেলে দেওয়া হয়।  এভাবে কয়েকমাস পর ধান পাকে।তারপর কৃষক সেই পাকা ধান ঘরে তুলে। কৃষক নিজের জন্য পর্যাপ্ত ধান রেখে যখন চাষাবাদের প্রয়োজনীয় খরচ তুলতে ধান বিক্রির জন্য আড়তে যায়  তখন ধানের দামে পড়ে ভাটা। প্রতি কেজি ধান আড়তমালিকরা  ক্রয় করে  দশ থেকে বারো টাকায়। সেগুলো থেকে মহাজনরা চাল তৈরি করে শহরে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে পঞ্চাশ থেকে ততোধিক টাকা।কিন্তু উপরে বর্ণিত কি কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই না কৃষক ধান উৎপন্ন করে? 

সাম্প্রতিক টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক তারা পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দেন ক্ষোভ এবং হতাশায় পড়ে। প্রতি দুইমণ ধান বিক্রি করে একজন মজুরকে তার পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। প্রতিমণে কৃষকের ঘাটতি পড়ছে পাঁঁচশত টাকা থেকে ছয়শত টাকা। জয়পুরহাটে ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে মানববন্ধনে রাস্তায় ধান ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন কৃষক-শ্রমিক সংগঠনগুলি। রাজশাহীর বগুড়াতেও ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকরা তৎপর হয়ে ওঠে। ‘পাকা ধানে মই লাগানো’ প্রবাদটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কিন্তু সাম্প্রতিক এক কৃষক ধানের ন্যাযমূল্য না পাওয়ায় তার পাকা ধানে মই লাগিয়েছিল।

অতিসাম্প্রতিক সন্তানদের ঈদের পোশাক কিনে দিতে না পারায় আত্মহত্যা করেন এক দরিদ্র কৃষক।

কৃষকদের এই নাজেহাল অবস্থা থেকে মুক্তি  দিতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারে।  সরকারি উদ্যোগে ধান কিনতে পারে, কৃষকদের প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দিতে পারে,কৃষকদের বিনাসুদে অধিক পরিমাণ কৃষিঋণ প্রদান করতে পারে।  কৃষকদের এই সংকটময় পরিস্থিতি কেবল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাধান করা যেতে পারে।

মো. ওসমান গনি শুভ
শিক্ষার্থী, পালি এ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
মোবাইল : ০১৭৮২ ৭০৯৭১৩