Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

প্রেমিকের প্ররোচনায় ভিডিও কলে রেখে ছাত্রীর আত্মহত্যা! ঝালকাঠি

প্রেমিকের প্ররোচনায় ভিডিও কলে রেখে ছাত্রীর আত্মহত্যা!

বিগত ৩ বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিলো ইডেন কলেজ ছাত্রী ঝালকাঠির কন্যা সায়মা কালাম মেঘা এবং বরিশাল হাতেম আলী কলেজ ছাত্র ঝালকাঠির পুত্র মাহিবি হাসানের সাথে। প্রেমের এক পর্যায়ে তারা পারিবারিকভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে বাধ সাধে মাহি’র মা সেলিমা বেগম। তিনি কোনমতেই এ বিয়ে মানতে নারাজ, তাই পুত্রও শুরু করে তালবাহানা। একাধিকবার বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করে আবার পরিবর্তন করে প্রতারণার নতুন কৌশল শুরু করে। এসব বিষয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে প্রেমিকের প্ররোচনায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় মেঘা। পাষন্ড মাহি ভিডিও কলে তা উপভোগ করে। নিজ ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে প্রেমের সম্পর্কের ইতি টানে মেঘা। এরপর সহপাঠি আফরিন জাহান ও মেঘা’র মা রুবিনা আজাদকে ০১৭৫০০৭১৮৫৩ নম্বর থেকে মাহি ফোন দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। 

মেয়ে শোকে কাতর পিতা-মাতা কন্যা হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহরের পূর্ব চাঁদকাঠিস্থ নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেঘা’র চাচা আবুল বাশার। এসময় মা রুবিনা আজাদ, পিতা আবুল কালাম, চাচাতো ভাই মাইনুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। 

জানাগেছে, ঢাকার কাঁঠালবাগান এলাকায় মৃত্যুর শিকার ইডেন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘার দাফন সম্পন্ন হয়েছে ঝালকাঠি শহরের মুসলিম পৌর কবরস্থানে। মঙ্গলবার দুপুরে তার দাফন সম্পন্ন হয়। রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার কাঁঠালবাগান এলাকার ৭৪/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মেঘার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রোববার রাতেই কলাবাগান থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে নিহতের চাচা আবুল বাশার। মামলায় দাবি করা হয়, ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাদকাঠি এলাকার মাহিবী হাসান (২৫) নামের এক যুবকের প্ররোচনায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে মেঘা। 

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মেঘার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে কলাবাগান থানা পুলিশ। মেঘার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মেঘার বাবা আবুল কালাম আজাদ (৫৫) জানান, ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় শহরের পূর্বচাদকাঠি এলাকার মৃত নফিসুর রহমানের ছেলে বরিশাল হাতেম আলী কলেজের ছাত্র মাহিবী হাসানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেঘার। ২০১৭ সালে মেঘা ঢাকা ইডেন কলেজে ভর্তি হয়। কাঁঠালবাগান এলাকায় এক বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতো মেঘা। তিনি বলেন, ঢাকায় গিয়ে মাহিবী হাসান প্রায়ই মেঘার সঙ্গে দেখা করতো। মাস ছয়েক আগে মেঘা এবং মাহিবী বিয়ের ব্যাপারে একমত হলেও বাদ সাধেন মাহিবীর মা ঝালকাঠি কির্ত্তীপাশা হাসপাতালের নার্স সেলিনা বেগম। মেঘার বান্ধবীদের বরাত দিয়ে মেঘার চাচা আবুল বাশার জানান, শবেবরাতের দুদিন আগে শুক্রবার ঢাকায় কাউকে না জানিয়ে তাদের বিয়ে করার কথা ছিল। এ জন্য মেঘা কিছু কেনা কাটাও করেছিল। কিন্তু মাহিবী কথা দিয়েও বিয়ের জন্য আসেনি। এ নিয়ে মোবাইল ফোনে তাদের ঝগড়া হয়। তিনি জানান, ঘটনার দিন রোববার বিকালে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও মেঘা এবং মাহিবীর ইমোতে কথা হয়। ভিডিও কলে কথা বলার সময়ই মেঘা তার প্রেমিক মাহিবীকে জানায়- সে যদি বিয়ে না করে তাহলে এখনই সে আত্মহত্যা করবে এবং মাহিবীকে ভিডিও কলে রেখে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে মেঘা ঝুলে পড়ে। মর্মান্তিক এ দৃশ্য দেখেও পাষন্ড মাহিবী হাসান মেঘাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়নি। মেঘার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে মাহিবী ঝালকাঠিতে মেঘার মা রুবিনা আজাদকে মোবাইল ফোনে মেঘার মৃত্যুর বিষয়টি জানায়। মেঘার মা বিষয়টি ঢাকায় মেঘার বান্ধবী আফরিন জাহান আনিকাকে জানালে আনিকা কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে কাঁঠালবাগানের বাসায় যায়। তারা বাসায় গিয়ে বাড়ির মালিকের সহায়তায় দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় মেঘাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা মেঘাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে মেঘার চাচা ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক আবুল বাশার ঢাকার কলাবাগান থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর কলাবাগান থানার এসআই মো. সেলিম রেজা সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন। এসআই সেলিম রেজা বলেন, মেঘার চাচা যে ইউডি মামলা করেছেন তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। মেঘার আত্মহত্যার পেছনে কারো প্ররোচনা থাকলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তখন দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় প্ররোচনা দানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। 

এদিকে, বুধবার ঝালকাঠি শহরের পূর্বচাদকাঠি বিআইপি কলোনির পেছনে মাহিবী হাসানের বাড়িতে গেলে দোতলা বাড়ির নিচতলায় কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো দেখা যায়। নিচতলার ভাড়াটিয়া একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গাজী হায়দার বলেন, আমি আমার দুই বোন নিয়ে নিচতলায় ভাড়া থাকি। বাড়ির মালিক জেলা জজ আদালতের পেশকার মো. নফিসুর রহমান কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার স্ত্রী সেলিনা বেগম এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে দোতলায় থাকেন। গত ২১ এপ্রিল শবেবরাতের দিন রাতে তারা কোথায় চলে গেছে আমরা জানি না। গত ৩-৪ দিন ঘরে তালা মারা। স্থানীয়রা জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর কিছুটা বখে যায় সুদর্শন মাহিবী হাসান। একাধিক মেয়ের সঙ্গে সে প্রেম করতো। তার প্রেমের সর্বশেষ বলি ইডেন কলেজের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘা।