Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ঝালকাঠির বৈশাখী শোভাযাত্রায় লাঠিয়ালদের লাঠি খেলা ঝালকাঠি

ঝালকাঠির বৈশাখী শোভাযাত্রায় লাঠিয়ালদের লাঠি খেলা

ঝালকাঠির বৈশাখী শোভাযাত্রায় লাঠিয়ালদের আকর্ষণীয় লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০জন সদস্য লাঠি নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে লাঠি খেলা প্রদর্শণ করেন। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত বাঙালী সংস্কৃতির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এ লাঠি কেলা প্রদর্শন করা হয়। গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ লাঠি খেলা। ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি এখনো বেশ জনপ্রিয়। আবহমানকাল ধরে ঝালকাঠিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় এক সময় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে লাঠি খেলা। কিন্তু কালের বির্বতণে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে এই খেলাটি। ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচা নাচি। অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠি খেলা। লাঠি খেলা অনুশীলনকারীকে লাঠিয়াল বলা হয়। 

এই খেলার জন্য লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, তবে প্রায় তৈলাক্ত হয়। প্রত্যেক খেলোয়ার তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের পিপলিতা গ্রামের সংগঠন পিপলিতা লাঠিখেলা দলনেতা মোখতার খলিফার বয়স এখন ৫০ এর কোঠায়। ওস্তাদদের কাছ থেকে মাত্র ১১/১২ বয়সেই এই লাঠি খেলা শিখেছেন। ১২/১৪ বছর আগেই তাদের সাথে আগে লাঠি খেলাগুলো জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে খেলে থাকতেন। কোন মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনলে আশেপাশের গ্রামের শতশত মানুষ আসতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে লাঠি  খেলার প্রচলন হারিয়ে যাওয়ায় এখন পুরো সময়ই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত তিনি।  

গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেন ড. কামরুন্নেছা আজাদ। তিনি জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উত্সব-বাংলা বর্ষবরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনও লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। বিগত দশকেও গ্রামাঞ্চলের লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলাটি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত এই খেলা দেখার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে এই খেলা দেখা গেলেও তা খুবই সীমিত। এ খেলাটি দিন দিন বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এর খেলোয়ার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না কোন নতুন খেলোয়ার। 

জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক জানান, দেশীয় সংস্কৃতি ধরে রাখতে বর্তমান সরকার বেশ আন্তরিক। তবে শুধু সরকার নয় সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা এবং তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা বৈশাখী শোভাযাত্রায় লাঠিখেলাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও র‌্যালীতে অংশগ্রহণে তাঁদের সম্পৃক্ত করে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।