Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

তরুণ, নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দাবি জাতীয়

তরুণ, নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দাবি

আসন্ন ২০১৯-২০ বাজেটে তামাকপণ্যে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ (সিটিএফকে) এর সহায়তায় প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে শনিবার (২৩ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, বিটা, সুপ্র, এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, চেয়ারম্যান, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং চেয়ারম্যান, জাতীয় তামাক বিরোধী প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  ড. নাজনীন আহমেদ, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)। সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ড. মাহফুজ কবীর, রিসার্চ ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)।  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এম এ সালাম, গ্রান্টস ম্যানেজার, সিটিএফকে; মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা এবং এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা। এছাড়াও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রাক্তন উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা এর কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরেই তামাক পণ্যের করকাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকরাও এবিষয়ে একমত পোষণ করেন কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়না। আমরা আবারো দাবি জানাচ্ছি তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষায় বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানো হলে, যারা নতুন করে শুরু করতে চায় তারা নিরুৎসাহিত হবে। তামাক ব্যবাহারকারীদের মনস্তাত্তি¡ক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কাজ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রমে তামাক ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে তামাক ব্যবহারের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন। ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যে করারোপরের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তামাকের হাত থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্য এর মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম সস্তা এবং তা ক্রমশ আরও সস্তা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল। একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে তামাকপণ্য ক্রয়ের সুযোগ থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্যপদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছেনা। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো উচ্চস্তরের সিগারেট নিম্নস্তরে ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, অথচ মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.২ শতাংশ আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২০১৯-২০ বাজেটে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা এবং সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়: 

বাজেট প্রস্তাব :
১. সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে (নিম্ন এবং উচ্চ) নিয়ে আসা: ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এই দুইটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২. বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া: বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্তকরণ: ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

৪. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য থাকবে।

উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (১.৩ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ১.৯ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪% থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২.৫% এবং বিড়ির ব্যবহার ৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৪% হবে । দীর্ঘমেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপি’র ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। 

সুপারিশমালা :
১. তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে;

২. বিভিন্ন তামাকপণ্য ও ব্রান্ডের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীর ব্রান্ড ও তামাকপণ্য পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করতে হবে;

৩. সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করজালের আওতায় নিয়ে আসতে হবে;

৪. পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট/কৌটায় বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; 

৫. একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করতে হবে;

৬. সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে হবে; 

৭. স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২%) করতে হবে।