Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

সুনামগঞ্জে ধর্ষনের শিকার ১৩ বছরের শিশু অন্তসত্তা! ধর্ষক গ্রেফতার সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে ধর্ষনের শিকার ১৩ বছরের শিশু অন্তসত্তা! ধর্ষক গ্রেফতার

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষনের ঘটনায় ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষকের তার নাম মোঃ আব্দুনুর মিয়া (৫৮)। সে ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামের মৃৃত আরব আলীর ছেলে। 

সোমবার সকাল ১১টায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গণিগঞ্জ গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।  

নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষনকারীর ঘরে স্ত্রী, ৫ ছেলে,ছেলের বউ ১ মেয়ে নাতি নাতনী থাকার পরও  লম্পট আব্দুনুর  ঐ নাবালিকা শিশুটিকে পর পর ধর্ষন করে।  শিশুটি বর্তমানে সাড়ে ৯ মাসের অন্তসত্তা হয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম্য সালিশের কয়েকজন মাতব্বরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও সুষ্ঠ বিচার পায়নি এই নির্যাতিত অন্তসত্তা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা। মনে হয় যে বিচারের বাণী নীরবে নিবৃত্তে কাদেঁ। ঘটনাটি আনুমানিক ২০১৮ সালের ১০ জুন পর পর দুই রাতে ঘটে। এই ধর্ষনের ফলেই শিশুটি এখন সাড়ে ৯ মাসের অন্তসত্তা হয়ে দিনমুজুর পিতার সংসারে অনেক অপবাদ সইতে হচ্ছে। 

ঘটনার পরপরই নির্যাতিতা শিশুটির দিনমুজুর পিতা গ্রামের মাতব্বরদের দ্বারস্থ হয়ে ধর্ষনের ঘটনাটি তাদের অবগত করেন এবং গ্রামের ৮ জন সালিশদের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে এবং ধর্ষনকারীদের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর নিকাহ নামার মধ্য দিয়ে বিয়ে করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় এবং চারমাস পূর্বে শিশুটির পরিবারকে জোরপূর্বক  ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়ার পর বাকি টাকা দিয়ে কাবিননামা করে ধর্ষনকারীর ঘরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু  গ্রাম্য সালিশের বিচারকগণ কথা দিয়ে কথা না ও সময় কালক্ষেপন করায় ঐ শিশুটি এখন সাড়ে ৯ মাসের অন্তসত্তা হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু প্রশ্ন হলো গ্রাম্য সালিশগণ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের নীতিমালা অনুসরন না করেই  একটি নাবালিকা শিশুকে বিয়ের পিড়িতে বসানোর জন্য সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এমন প্রশ্ন সমাজের সচেতন মহলের। এই ঘটনাটিকে নিয়ে কি তাহলে কি এতদিন নাটকমঞ্চই তৈরী করে রাখা হয়েছিল ?  বিষয়টি সুষ্টু তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে ধর্ষনের ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এই সালিশ বৈঠকের আয়োজন ছিল ?

ঘটনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও শিশুটির পিতা গ্রামের (মাতব্বর) সালিশদের দ্বারস্থ হলে এখন তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার পায়তাঁরা করছেন বলে শিশুটির পিতা ও মাতা সাংবাদিকদের নিকট এমন অভিযোগ করেন। তারা জানান,গণিগঞ্জ গ্রামের (একই ওয়ার্ডের) সালিশে গ্রাম্য  মাতব্বর পূর্বহাটি গ্রামের মৃত ধনাই মিয়ার ছেলে আব্দুল মজিদ(৬০), পশ্চিমহাটির মরল বাড়ির লাল মিয়ার ছেলে আব্দুল আওয়াল (৫৫), তালেব আলীর ছেলে মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম(৫২), আব্দুল গফুরের ছেলে খইছা মিয়া মেম্বার,বাজার হাটির রবাই মিয়ার ছেলে কাহার মিয়া, নুরফর মিয়ার ছেলে আনজু মিয়া মিলে গত প্রায় পাচ মাস পূর্বে ঐ সালিশগণ উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন এবং ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে বিয়ের কাবিন নামার মাধ্যমে শিশুটিকে ধর্ষনকারী আব্দুনুরের কাছে বিবাহের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও  নির্যাতিত পরিবারের সদসরা সালিশদের স্মরণাপন্ন হলে গ্রাম্য বিচারকদের অনীহা, উদাসীনতার কারণেই এই অবুঝ শিশুটি এখন সন্তানের  মা হতে চলেছেন বলে শিশুটির পিতামাতা গণমাধ্যমকর্মীদের এমন অভিযোগের কথা জানান। 

এদিকে আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই এই নাবালিকা শিশুটি একটি সন্তানের মা হতে চলেছেন এমন ভাষ্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের । অন্তসত্তা শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১৬ মার্চ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার  অফিসার ইনচার্জ মোঃ এখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী ধর্ষনকারীকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সবকিছু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর