Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের “সাঁঝের মায়া কুঞ্জ” এখন মধুর বাড়ি রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের “সাঁঝের মায়া কুঞ্জ” এখন মধুর বাড়ি

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ডান দিকে গোয়ালন্দ বাজার সড়ক দিয়ে যেতে প্রায় দুইশত গজ এগোতে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে একটি তিনতলা বাড়ি। বাড়িটির নাম সাঁঝের মায়া কুঞ্জ। তবে একাধীক মৌচাক ও হাজার হাজার মৌমাছি বসবাসের কারনে বাড়িটি পরিচয় পেয়েছে মধুর বাড়ি নামে। একটি দুটি নয়, প্রায় ৩০ টি মৌমাছির চাকে ঘেরা এ বাড়ি। বাড়ির দোতলা ও তিনতলা ভবনের কার্নিশের ওপর বাসা বেঁধেছে মৌমাছিরা।

জানাগেছে, ২০০৫ সালে বাড়িটি নির্মাণ করেন গোয়ালন্দের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা ওয়াদুদ মুরাদ। 

বাড়িটি নির্মাণের এক বছর পর থেকে মৌমাছি এসে বাসা বাঁধা শুরু করে। এক যুগের বেশি সময় ধরে মৌমাছিরা বাড়িটিতে বাসা বেঁধে আসছে। এই বাড়ির মৌচাক দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ । গোয়ালন্দ বাজারের প্রধান সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানবাহনের যাত্রীরা আসা-যাওয়ার সময় দৃষ্টিনন্দন মৌমাছির চাক উপভোগ করে থাকে।

২০০৭ সালের ২৪ মার্চ মাসে মারা যান ওয়াদুদ মুরাদ। স্ত্রী ও তিন মেয়ে রেখে যান তিনি। তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন মুরাদ গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেবগ্রাম ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। বড় মেয়ের ঢাকায় বিয়ে হয়েছে। মেজো মেয়ে ঢাকায় ইডেন মহিলা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং সবার ছোট মেয়ে গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেনীতে পড়ে।

 শনিবার সকালে মধুর বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়, তিনতলা ভবনের পূর্ব পাশের কার্নিশ জুড়ে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে মৌমাছির চাক। একটি-দুটি নয়, ২৮ টির মতো। আরও দুই-একটি কয়েক দিন আগে কেটে ফেলা হয়েছে। ভবনের প্রতি তলার বারান্দা ও সিঁড়ির ওপর অনেক মৌমাছি দেখা উরছে। জানালার ফাঁকা স্থান দিয়ে ঘরে আসা যাওয়া করছে মৌমাছিরা।

ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা ভাড়া দেওয়া রয়েছে। তিনতলায় বর্তমানে ছোট মেয়েকে নিয়ে বাস করছেন ইয়াসমিন মুরাদ।

বাড়িটির বর্তমান মালিক ইয়াসমিন মুরাদ বলেন, বাড়ি নির্মাণের পরের বছর তিন-চারটি চাক বসেছিল। এখন বাড়তে বাড়তে ২৫-৩০ টি করে বসে । প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে মৌমাছিরা এসে বাসা বাঁধে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে মৌমাছিগুলো চলে যায়। বছরের প্রায় পাঁচ মাস মৌমাছিদের অবস্থানকালে অন্তত ১০বার মৌয়ালেরা এসে মধু সংগ্রহ করেন। মধু অর্ধেক মৌয়ালেরা নেন এবং অর্ধেক বাড়ির মালিক নেন। তাতে একেকবার ১০ থেকে ১২ কেজি করে মধু পান তাঁরা। এত মধু কী করেন জানতে চাইলে বলেন, কখনো তাঁরা বাজারে বা মৌয়ালদের কাছে ৪ শত টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করেন। পরিবারের পর আত্মীয়স্বজন এবং সহকর্মীদের দেন। এ ছাড়া আশপাশের এলাকার অনেকে আসেন খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে। 

ইয়াসমিন মুরাদ আরো বলেন, এত মৌমাছি থাকলেও আজ পর্যন্ত কখনো আমাদের অত্যাচার করেনি। পরিবারের কাউকে, এমনকি যাঁরা ভাড়া আছেন, তাঁদেরও কামড় দেয়নি। রাতের বেলায় বাতি জ্বললে বাতির নিচে এসে কিছুটা জ্বালাতন করে। তবে এসব দেখতে দেখতে এখন আমাদের সয়ে গেছে। মৌমাছিরা আঘাত না পেলে সহজে কাউকেই কামড় দেয় না।’

বাড়িটির বিপরীত পাশের সিমেন্ট ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন জানান,‘দীর্ঘদিন ধরে মৌমাছির চাক দেখছি। এখানকার মধু খাঁটি ও সুস্বাদু। এই বাড়িকে সবাই মধুর বাড়ি হিসেবেই চেনে। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকালে অনেকে কৌতুহলবশত দাঁড়িয়ে দেখে।’ 

বাড়ির দ্বিতীয় তলার এক ভাড়াটে বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে এখানে ভাড়া আছি। কখনোই মৌমাছি আমাদের কামড় দেয়না। এখান থেকে চারশত টাকা কেজি দরে মধু কিনে গ্রামের বাড়ি পাঠাই। মাঝে মধ্যে ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতেও পাঠাই।  

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, রাজবাড়ীতে ব্যপক পরিমানে সরিষা, কালো জিরা, ধনিয়ার আবাদ হয়ে থাকে। আর এ সকল ফসল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। এ বছর রাজবাড়ীতে ১৭০০ কেজির মতো মধু উৎপন্ন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জেলার ৩০ জন মৌ চাষির মাঝে ৩০ টি বক্স প্রদান করা হয়েছে। আর গোয়ালন্দের মধুর বাড়িটির কথা আমি শুনেছি। ওই বাড়িতে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি। প্রাকৃতিকভাবে বসছে মৌমাছি। ওই এলাকার লোকজন একদম খাটি মধু পাচ্ছে।