বাংলাদেশ স্কাউটসের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাক, গাজীপুরে আজ শুরু হলো ১০ম বাংলাদেশ ও ৩য় সানসো স্কাউট জাম্বুরী। চলবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত।  তবে জাম্বুরীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১০ মার্চ রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায়। উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট মো. আবদুল হামিদ।

১০ম বাংলাদেশ ও ৩য় সানসো স্কাউট জাম্বুরীর থীম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘যোগ্য নেতৃত্ব উন্নত দেশ’। 

ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের প্রায় ১১ হাজার অংশগ্রহনকারী জাম্বুরী এরিনায় এসে পৌঁছেছে। স্কাউটদের কলকাকলিতে মুখরিত জাম্বুরী ময়দান।

এর মধ্যে বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলা থেকে ১০০৩ টি স্কাউট দলের ৯০২৭ জন স্কাউট ও গার্ল ইন স্কাউট অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে গার্লস ইন স্কাউটস এর সদস্য ২১৩৩ জন। এছাড়াও ভারত (২২১), নেপাল (৯৬), ভ‚টান (৮), মালদ্বীপ (২৩), শ্রীলংকা (৭), আফগানিস্থান (২), ব্রুনাই দারুস সালাম (১), আমেরিকা (২), ইংল্যান্ড (১) এর স্কাউট ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেচ্ছাসেবকসহ ১১ হাজার স্কাউট ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন। 

এছাড়া বিশ্বস্কাউট সংস্থার সেক্রেটারী জেনারেল আহমেদ আলহেন্দাউই, এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউটসের পরিচালক জে আর পাঙ্গিলিনান, বয় স্কাউট অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ড্যান অর্নবি, বিশ্বস্কাউট সংস্থার সদস্য জানাপিথ ফার্নান্দ, ব্রুনাই দারুস সালাম এর জাতীয় কমিশনার (স্কাউট) হাজী হাসান হামিদ, ভারত স্কাউটস ও গার্লস গাইডের চিফ কমিশনার কে কে খান্দালাল, ভারত স্কাউটস ও গার্লস গাইডের আন্তর্জাতিক কমিশনার জে সি মহান্থ,  ভারত স্কাউটস ও গার্লস গাইডের জাতীয় কমিশনার (স্কাউট) এম এ খালিদ এই জাম্বুরীতে অংশ নিচ্ছেন।

জাম্বুরীর আজকের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্ল ইন স্কাউটস এর ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরিনায় বিকেল সাড়ে ৪টায় গার্ল ইন স্কাউটস এর ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গাজীপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধান স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ও দুদক এর কমিশনার ড. মো: মোজাম্মেল হক খান। বিশেষ স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ স্কাউট এর গার্ল ইন স্কাউটিং বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর নাজমা শামস। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কমিশনার (গার্ল ইন স্কাউটিং) ও তথ্য কমিশনের কমিশনার সুরাইয়া বেগম, এনডিসি।

জাম্বুরী হচ্ছে স্কাউটদের মিলন মেলা। জাতীয় জাম্বুরী প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর আয়োজন করা হয়। স্কাউটরা এই জাম্বুরীতে ০৭ (সাত) দিন অবস্থান করে শিক্ষামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত চ্যালেঞ্জগুলো ‘ভেঞ্চার’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। মোট ১৪টি ভেঞ্চার ও কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে আকর্ষণীয়, উদ্দীপনামূলক, শিক্ষণীয় ও প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রাম সাজানো হয়েছে যা ভিলেজ, সাব ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত হবে। 

জাম্বুরীর ১৪টি ভেঞ্চার যথাক্রমে, (১) ভোরের পাখি, (২) তাঁবু কলা, (৩) অবস্ট্যাকল, (৪) শিক্ষা সফর, (৫) হাইকিং, (৬) করি ও শিখি, (৭) পাইওনিয়ারিং ও প্রাথমিক প্রতিবিধান, (৮) এসডিজি ও জিডিভি, (৯) ফান এন্ড গেম, (১০) পাশের বাড়ী, (১১) ফেইথস এন্ড বিলিফস, (১২) সাধারণ জ্ঞান, (১৩) তাঁবু জলসা, (১৪) গ্রীন ডিবেট। এছাড়াও জাম্বুরী প্রোগ্রামে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে: উদ্বোধনী  অনুষ্ঠান,  ভিলেজভিত্তিক তাঁবু জলসা, মহা তাঁবু জলসা, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, টপ অ্যাচিভার’স গ্যাদারিং, উডব্যাজার’স গ্যাদারিং, রোভার ভলান্টিয়ার’স গ্যাদারিং।

বাঙালি জাতির পিতাকে বর্তমান প্রজন্মের নিকট পরিচিত করার জন্য জাম্বুরীর মূল এরিনার নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে। জাম্বুরীতে ৪টি ভিলেজ থাকবে। ৪টি ভিলেজের নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঘনিষ্ট সহচর (১) সৈয়দ নজরুল ইসলাম, (২) তাজউদ্দীন আহমদ (৩) ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও (৪) এ এইচ এম কামারুজ্জামান এর নামে। 

৪টি ভিলেজের অধীনে ১২টি সাব ক্যাম্প কবি, সাহিত্যিক ও  বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে: (১) রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, (২) কাজী নজরুল ইসলাম, (৩) মাইকেল মধুসূদন দত্ত, (৪) জসিম উদ্দিন, (৫) সুফিয়া কামাল, (৬) ইমরান নূর (৭) জীবনানন্দ দাশ, (৮) এম মহবুবুজ্জামান,(৯) আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, (১০) হুমায়ুন আহমেদ, (১১) সৈয়দ শামসুল হক ও (১২) শামসুর রাহমান।

জাম্বুরী সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ স্কাউটস এর জাতীয় কমিশনার (সংগঠন) আখতারুজ্জামান খান কবির এর সভাপতিত্বে একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ১৪টি উপ কমিটি নিরলসভাবে কাজ করছেন। 

জাম্বুরী চীফের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ও দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো: মোজাম্মেল হক খান।

১৪ মার্চ রাতে শেষ হবে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে মেয়ের এই মিলন মেলা এবং ১৫ মার্চ সকালে অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ফিরে যাবে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে স্কাউট সদস্য সংখ্যা ১৭ লক্ষ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে স্কাউট সদস্য সংখ্যা ২১ লাখে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ স্কাউটস।