Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

মেঘালয়ে ১৪ জন খনি শ্রমিক এখনও ৭০ ফুট পানির নিচে আন্তর্জাতিক

মেঘালয়ে ১৪ জন খনি শ্রমিক এখনও ৭০ ফুট পানির নিচে

ভারতের মেঘালয়ে ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’ বা ‘ইঁদুর গর্ত খনি’ খ্যাত একটি খনিতে পানির নিচে আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন একশোরও বেশি উদ্ধারকারী। কিন্তু পুলিশ বলছে, গত পাঁচদিন ধরে এখনও ওই শ্রমিকদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা বেঁচে আছেন কি-না, তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব জয়ন্তিয়া জেলার কসন গ্রামে জঙ্গলের ভেতরে অবস্থিত একটি বেআইনি কয়লা খাদানে (এই খনিগুলাকে ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’ বলা হয়) নেমেছিলেন ওই শ্রমিকরা। পাশ দিয়েই বইছে লিটিয়েন নদী।


পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথম দিন নেমেই ওই শ্রমিকরা সেখানে আটকে পড়ে। তার কয়েকদিন আগে কৃপ চুলেট নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি খাদানটি ভাড়া নিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পরেই ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পূর্ব জয়ন্তিয়া জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট সিলভেস্টার নঙ্থনার বিবিসিকে বলেছেন, বেআইনিভাবে চলা এই খনিটির ২৫০ ফুট নিচ থেকে পানিতে ভর্তি হয়ে গেছে। পানিস্তর রয়েছে আরও প্রায় ৭০ মিটার। ১৩ তারিখ রাতে এই ঘটনার পরদিন সকাল থেকেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, পুলিশ, দমকলসহ একশোরও বেশি উদ্ধারকারী কাজ করে চলেছেন। কিন্তু আমরা এখনও আটকিয়ে পড়া শ্রমিকদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাইনি।


 
প্রায় ৩২০ ফুট পানির নিচে কোথায় শ্রমিকরা আটকিয়ে রয়েছেন- সেটা জানার জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী বা এনডিআরএফের ডুবুরীরা নেমেছিলেন খাদানে। পানির তলায় তল্লাশি চালানোর জন্য ‘সোনার যন্ত্র’ও ছিল।

‘যন্ত্র দিয়েও আমরা খুঁজে বের করতে পারিনি শ্রমিকদের অবস্থান। চেষ্টা করা হচ্ছে খনি গহ্বর থেকে পানি পাম্প করে তুলে ফেলার। অনেকগুলো পাম্প চালানো হচ্ছে’-বলছিলেন উদ্ধারকাজের মূল দায়িত্বে থাকা এনডিআরএফের কমাড্যান্ট সতীশ শাস্ত্রী।

‘কিন্তু আবার নতুন করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে আবারও খনিতে পানি ঢুকছে। স্থানীয় মানুষরা বলছেন, এই ধরনের খনিগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাই অন্য খাদানগুলো থেকে এই খাদানে সম্ভবত পানি ঢুকে যাচ্ছে’-যোগ করেন তিনি।


 
সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উৎপাদনকারী সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যে, একশো হর্স পাওয়ারের পাম্প যদি বসানো যায়, যা দিয়ে মিনিটে চারশো গ্যালন করে পানি তোলা যাবে, তাহলে খনি গহ্বর থেকে দ্রুত পানি বের করে ফেলা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডে একটি কিশোর ফুটবল দল এই বছর এক গুহায় আটকে পড়েছিল। পানি জমে তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তারা একটি উঁচু যায়গায় নয়দিন বসে থাকার পর ডুবুরীরা তাদের খোঁজ পায়।

জয়ন্তিয়া জেলা প্রশাসন পাম্প আনার আর্জি জানিয়েছে শিলংয়ে মেঘালয় সরকারের কাছে। উদ্ধারকারী দলের প্রধান শাস্ত্রী বলছেন, যেহেতু এটা বেআইনি খনি, তাই এর না আছে কোনো মানচিত্র, না নেয়া হয়েছিল কোনোরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের শুধুমাত্র স্থানীয় সর্দার, অর্থাৎ যারা কয়লাখনি শ্রমিকদের সুপারভাইজার, তাদের কথার ওপরে ভরসা করেই উদ্ধার প্রচেষ্টা চালাতে হচ্ছে।


 
তিনি বলেন, ডুবুরীরা পানিস্তরের ৩০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিলেন, কিন্তু শ্রমিকরা তার আরও প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। কয়লা মেশানো পানি এতটাই কালো যে, প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যন্ত্র নামিয়েও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি।

এই শ্রমিকদের বেঁচে থাকার কোনো আশা এখন আর আছে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে শাস্ত্রী বলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা কোনো দেহ উদ্ধার করতে পারছি, ততক্ষণ এটাই ধরে নেয়া হয় যে, তারা জীবিত আছেন। এটাই উদ্ধারের নিয়ম।’

মেঘালয়ে অসংখ্য ছোট-বড় কয়লা খনি বেআইনিভাবে চালানো হতো, যেগুলোকে জাতীয় পরিবেশ আদালত ২০১৪ সালেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। এই কয়লা খনিগুলোকে ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’ বলা হয়। তবুও যে বেআইনি এসব খনি চলছে, এই দুর্ঘটনা তারই প্রমাণ।

পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট সিলভেস্টার নঙ্থনার অবশ্য বলছেন, প্রত্যেকটা অংশে পৌঁছান তো সম্ভব হয় না, তবে বেআইনি খনি চলার খবর পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। যেমন এই ঘটনার পরেই গ্রেফতার হয়েছে বেআইনিভাবে পরিচালিত খনিটির মালিক। বিবিসি বাংলা