Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিজয় শুভেচ্ছা জাতীয়

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিজয় শুভেচ্ছা

আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জাতীয় জীবনের সেরা অর্জনের দিন এটি। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের সূর্য উদিত হয়েছিল বাংলার আকাশে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হোক, মহান বিজয় দিবসে- এ আমার প্রত্যাশা।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বীর বাঙালি রচনা করে এক গৌরবময় বিজয়গাথার।

বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসী ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

হামিদ বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

এই দিনে তিনি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন । তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয় । 

তিনি শ্রদ্ধা জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি এ যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকা-ের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানা চড়াই-উতরাই এর মধ্য দিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত।

আবদুল হামিদ বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, পেয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে । উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং তাদের পছন্দমতো প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পায়।

তিনি আশা করেন, এবারের নির্বাচনে জনগণ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক প্রার্থীদের নির্বাচিত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখবে। ভোট উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিজয় সুদৃঢ় হোক, তিনি এ প্রত্যাশা করেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। ২০১৮ সালের বিজয় দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন জাতীয় ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বাঙালি জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

‘বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। এই সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে।’

বিজয় দিবস বাঙালি জাতির অনন্য গৌরবের দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

এ উপলক্ষে প্রথানমন্ত্রী দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিজয়ের এই দিনে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনকে, যাঁদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বিগত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।

“আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।