Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

চট্টগ্রামস্থ নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে আমরা আপোষহীন : রাষ্ট্রপতি চট্টগ্রাম

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে আমরা আপোষহীন : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সাথে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরাক্ষার্থে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে আমরা আপোষহীন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌ-বাহিনীর প্রতিটি সদস্য ত্যাগ স্বীকারে কখনোও পিছপা হবে না। 

রোববার বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে মিডশীপম্যান ২০১৬ ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০১৮/বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই মহান প্রত্যয়ের আলোকেই বর্তমানে নৌবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নৌবহরে দু’টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চালু করা হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্মিলিত আন্তর্জাতিক মানের সুবিশাল বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স। আধুনিক এ প্রশিক্ষণ সুবিধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নবীন কর্মকর্তাদের সমুদ্রসীমার স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন হতে দু’টি মিসাইল ফ্রিগেট এবং নির্মাণাধীন দু’টি করভেট অতিশীঘ্রই নৌবহরে যুক্ত হবে। একইসাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করভেট, মাইনহান্টার, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ভেসেল ও সেইলিং ট্রেনিং শিপসহ বিভিন্ন জাহাজ ক্রয় ও নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নেভাল এভিশেনের জন্য মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্র্যাফট, এন্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও এলআরএমপিএ (লং রেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট) ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ার লক্ষ্যে মিসাইল, আইএফএফ সিস্টেম ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কাজও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা' এবং ‘বানৌজা শেখ হাসিনা' ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি ঢাকায় জাতির পিতার নামে প্রথমবারের মত একটি নৌঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ মুজিব’ এর কমিশনিং এবং একইসাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ২২টি বহুতল ভবনও অবসরপ্রাপ্ত নৌসদস্যদের আবাসনের জন্য টাউনশিপ সাভার প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরো বলেন, নবীন কর্মকর্তারা নেভাল একাডেমি থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে।তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেয়ায় নবীন কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধান অতিথি নবীন কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মিডশিপম্যান ও ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারবৃন্দদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে আজ তোমরা কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। এ জীবন যেমন আনন্দের, তেমনি চ্যালেঞ্জের। দেশমাতৃকার নিরাপত্তার স্বার্থে তোমরাই হবে এই নৌ-বাহিনীর ভবিষ্যত কর্ণধার। আমাদের নৌ-বাহিনী যে আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করেছে, যেকোন মূল্যে তা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে জাতি তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে তা অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের। জীবন বাজি রেখে জাতির সে সম্মান তোমাদের রক্ষা করতে হবে। 

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৬ ব্যাচের ৫৯ জন মিডশীপম্যান এবং ২০১৮/বি ব্যাচের সাত জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ সর্বমোট ৬৬ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে চার জন মহিলা, একজন মালদ্বীপ এবং একজন শ্রীলংকার কর্মকর্তা রয়েছেন। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশীপম্যান ২০১৬ ব্যাচের আহমেদ রিদওয়ান খান সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এয়াড়া, মিডশীপম্যান ইজাজ মাহমুদ শুভ প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৮/বি ব্যাচ হতে এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট সাঈফ হোসেন সুধী শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ লাভ করেন।

রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অন্যান্যের মধ্যে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌ সদর দপ্তরের পিএসও, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়কসহ ঊর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক এবং শিক্ষা সমাপণী ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।