ছাত্রলীগ আমার একার নয় : ছাত্রলীগ সভাপতি ‘শোভন’ ক্যাম্পাস / 
হাসান মাহমুদ ইলিয়াস, ঢাবি : প্রতি হলের ন্যায় স্যার এ.এফ .রহমান হলে গতকাল (২৩ নভেম্বর) ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ‘শিক্ষার্থী সংলাপ এবং নির্বাচনী কর্মী সভা’র আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্র নির্বাহী সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, গত কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকতুজ্জামান সৈকত, স্যার এ.এফ.রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার।
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। হলের ছাত্রলীগের কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন করেন আবুল কালাম, আশিকুর রহমান লাভলু, তানজীন আল আল আমিন, আবু বকর সোহেল, ইমদাদুল হক চঞ্চল, জিহাদ আল হাসান, রাজু, আবু সায়েম, রোহান রেহমান, রাইসুল ইসলাম, রানা, সাইফুল ইসলাম খান, আপেল মাহমুদ, ইউসুফ, জুবায়ের, মেহেদী হাসান, ওসমান গনি, সাকিব, আলী আজম, ইসাহাক, ফয়সাল, আশিক এবং ফয়সাল হোসেন।
সংলাপে যে বিষয় গুলো উঠে আসে সেগুলো হলো কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকা, মশা ও ডেঙ্গু সমস্যা, আত্মহত্যা, গ্রুপিং, ডাকসু, বিদেশে কর্ম সংস্থান, নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরর দায়িত্ব, পারস্পরিক সম্পর্ক, নাব্য সংকট, কৃষকের অবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং রোধের উপায়, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, নিজস্ব প্রকাশনা না থাকা, গণরুম, রিডিং রুম, ক্যান্টিন, মাদক, লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়া, শিশুশ্রমসহ অন্যান্য বিষয়।
আত্মহত্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন এ বিষয়ে ছাত্রলীগের পদক্ষেপ কি এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, “ম্যাক্সিম গোর্কীর মা উপন্যাস সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। তিনি কিন্তু এটি লেখার পূর্বে অনেকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যান। আজ তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। জীবনকে মূল্যবান ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আপনারা যদি আত্মহত্যা করেন তবে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা কি করবে বলেন? আমরা অতি শীঘ্র এ বিষয়ক একটি সেমিনারের আয়োজন করব।”
মশা সমস্যা, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া এবং কেউ মারা গেলে এটি নির্বাচনে বিরোধী দলের ইস্যু হতে পারে জুবায়ের এর এমন কথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বলেন, “আমরা আর ৪ থেকে ৫ দিন অপেক্ষা করব। এর মধ্যে যদি প্রশাসন কিংবা সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ না নেয়, আমি এবং সাদ্দাম (সাধারণ সম্পাদক) নিজেরা মশক নিধন কর্মী হিসেবে কাজ করব।”
ছাত্রলীগের ৪০০০ হাজারের উপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতা কর্মী রয়েছে এবং পদধারী ছাড়াও ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত অনেক কর্মী রয়েছে, তাদের কাজ আসন্ন নির্বাচনে তাদের কাজ কি এমন প্রশ্নের জবাবে সঞ্জিত চন্দ্র বলেন, “সে বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে পদধারীদের ঢাকাতে থাকতে হবে।”
কর্মমুখী শিক্ষা, নদীতে নাব্য সংকট এবং কৃষকের অস্বচ্ছলতা সম্পর্কে তিঁনি বলেন, “আপনারা অবগত আছেন যে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র খননের জন্য বাজেট হয়েছে। আর কর্মমুখী শিক্ষা এবং কৃষকের বিষয়টি গোলাম রাব্বানী ভাই সুস্থ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তুলে ধরব। যাতে এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার রোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদেরই হয়ত ব্যর্থতা, আমরা সবার সাথে মিশতে পারিনা, ভাবে থাকি। তিনি বলেন, হলে থাকা শিক্ষার্থীদের আরো বেশি পড়াশুনা এবং ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্বে সক্রিয় হতে হবে। যাতে যে কোনো অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব হলে থাকা শিক্ষার্থীরা নিতে পারো এবং তোমার বন্ধু বান্ধবীরা কে কি করছে এ বিষয়টি খেয়াল রাখবে। আর একটি বিষয় তিনি খুব গুরুত্বের সাথে বলেন যে, কোনো শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত ক্লাস না করে উপস্থিতির হার কম হয় সে দায় ছাত্রলীগ নিবে না। আর গেস্টরুম যেন হতাশা কমানোর জায়গা হয়, সকল সমস্যার কথা যেন শেয়ার করতে পারে।”
আবাসন সংকট, মাদক প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে একনেকের মাধ্যমে ২০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যাতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, শাহনেওয়াজ ভবন আরো বহুতল করা হবে এবং মল চত্বরে ও হল করা হবে। ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার পুনঃরায় ক্ষমতায় আসলে আবাসন সংকট আর থাকবেনা। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হোক। সবার জন্য একটি আসন বরাদ্ধ থাক। মাদকে বিষয়ে কেউ প্রমাণ দিতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকাশনা সংস্থা, শিক্ষাবৃত্তি প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের অনেক কিছুতেই স্বল্পতা আছে। অনেক অ্যালামনাই বৃত্তি দিয়ে থাকেন। আমরা চেষ্টা করব কোনো অ্যালামনাই কে অন্তর্ভূক্ত করার।”
রিডিং রুম এবং ক্যান্টিন বিষয়ে বলেন, “আগামী মাসে আপনাদের নতুন রিডিং রুম এবং ক্যান্টিনের উদ্বোধন করা হবে। আর আমি প্রভোস্ট স্যার কে বলব যাতে তিঁনি আমাদের নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করে দেন টিভি রুমে এবং টিভি রুমের চেয়ার সংকটের সমাধান করে দেন।”
ডাকসু বিষয়ে বলেন, “আপনারা যারা এখনো ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম দেন নি বা আছে কিনা দেখেন নি, তারা হল অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এলে আগামী মার্চ মাসে ডাকসু নির্বাচন হবে। আমরা ও চাই আপনার নেতা আপনি ভোট এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন ।”
সকল এলাকার ছাত্রলীগের কর্মীদের জন্য কোনো সেমিনারের আয়োজন, নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বয়স্ক শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, “নির্বাচনের কারনে এখন এটি সম্ভব নয়। নির্বাচনের পরে এটি করব । নিজেরা চাঁদা দিয়ে চালাবো। যে চাঁদা দিবেনা তার সদস্য পদ বাতিল করে দিব। ভালো কাজ করার মাধ্যমে অন্যান্যরাও আমাদের সাথে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।” যারা পোস্টার ছাপান নিজেদের ছবি বড় করে দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে শোভন বলেন, “ছাত্রলীগের একদল অতি উৎসাহী এটি করেন। আমি বার বার নিষেধ করছি। আমাকে না জানিয়ে এটি অনেকেই করেছেন, পরে বলেছি যদি পোস্টার ছাপাতেই হয় আমাকে আগে জানিয়ে তারপর করবেন।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে ছাত্রলীগের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা কমে গেছে। ছাত্রলীগের প্রতি মানুষ আস্থা পাচ্ছে। তারা দেখেছে সঞ্জিত নিজেও কাঁধে করে পানি বহন করে পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। ছাত্রলীগ আমার একার নয়, ছাত্রলীগ আমাদের সবার।”
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এলাকায় আওয়ামীলীগের এক প্রার্থী নমিনিশন পেলে আওয়ামীলীগের অন্য নেতার অনুসারীরা গ্রুপিং করেন, নমিনিশন যাকে দেয়া হয়েছে তার পক্ষে কাজ করেন না এক্ষেত্রে কি বলবেন আবু বকর সোহেলের এমন প্রশ্নে শোভন আরো বলেন, “কেউ যদি গ্রুপিং করে তবে শুধু বহিষ্কার নয়, আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।”