Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৪ নরসিংদী

আ’লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৪

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়িতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৪ জন।

শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী গ্রামে এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নে এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ী বালুয়াকান্দি এলাকার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছেলে তোফায়েল হোসেন (১৮), নিলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাও এলাকার উসমান মিয়ার ছেলে সোহরাব হোসেন (৩০) ও গোপীনাথপুর এলাকার মৃত সোবহান মিয়ার ছেলে মো. স্বপন মিয়া (২৫)। অপর নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদ সরকারের সমর্থকদের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত মার্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহেদ সরকার। এর ৪০ দিন পর গত ৩ মে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক।

ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক হত্যার পর থেকে প্রতিপক্ষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান শাহেদ সরকার সমর্থকরা। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শুক্রবার সকালে শাহেদ সমর্থকরা এলাকায় ফিরলে প্রতিপক্ষ সিরাজুল হকের সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত  ১০ জন আহত হয়। এর মধ্যে চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তোফায়েল হোসেন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

তোফায়েল সম্প্রতি বাঁশগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে ফরম পূরণ করেছে। সে শাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এ ছাড়া গুরুতর আহতাবস্থায় সুমন মিয়া (২৬), মামুন মিয়া (২৫) ও  সুমন মিয়া (২৬) নামের তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের সমর্থকরা আবার বাঁশগাড়ি এলাকায় বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিয়ে সংঘর্ষে অংশ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে নিলক্ষা এলাকার তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ী এলাকার সিরাজুল হক সমর্থক এবং আবদুল হকের লোকজন শাহেদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকরা বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনায় অংশ নেয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে প্রতিপক্ষ আবদুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষ দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রথমে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব হোসেন ও পরে আবদুল হক সরকারের সমর্থক স্বপন মিয়া নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫-১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।

নিলক্ষা ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, একপক্ষ অতর্কিতে তাদের প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। পরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উভয়পক্ষের একজন করে মোট দুজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন।

নিলক্ষা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, লাশগুলো  রায়পুরা থানা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরেই তাজুল চেয়ারম্যানের সমর্থকরা আবদুল হক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তবে আজকের সংঘর্ষ পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। হঠাৎ করেই এই সংঘর্ষ হয়েছে।

রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) মোজাফফর হোসেন বলেন, শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ীর ঘটনার খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিলক্ষা ইউনিয়নের প্রথমে বীরগাঁও ও পরে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ শুরু হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।