Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

নলছিটিতে সংযোগ স্থাপনে ঠিকাদারের টাকা আদায়ের অভিযোগ

ঝালকাঠি সদর ও রাজাপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি অসংখ্য গ্রাহক ঝালকাঠি

ঝালকাঠি সদর ও রাজাপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি অসংখ্য গ্রাহক

ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন সদর উপজেলা ও রাজাপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে দেশের অন্যান্য এলাকার সংগে ঝালকাঠি জেলার সদর এবং রাজাপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।  কিন্তু এ ২ উপজেলার এখনও বিদ্যুত সংযোগ পায়নি অসংখ্য গ্রাহক। 

অপরদিকে, নলছিটিতে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, সদর উপজেলার পেনাবালিয়া ইউনিয়নের ভাওতিতা, ছিলারিশ, দেউরী, ডৌয়াতলা এবং লালমোহন গ্রামের অনেক এলাকায় প্রায় ৬মাস আগে খুঁটি পোতা হলেও এখনো টানা হয়নি বৈদ্যুতিক তার । এই এলাকার তাসলিমা বেগম, জালাল মল্লিক, রুলিয়া বেগমসহ অনেকে জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন ছিলারিশ গ্রামের হারুন হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদরকে নিয়ে প্রায় এক বছর আগে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সংযোগ দেয়ার কথা বলে তিন থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে অথচ দীর্ঘ দিনেও সংযোগ দেয়া হয়নি। তারা জানান, অফিস থেকে টাকা পাওয়ার কথা জানালেও সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে না, খোজ মিলছেনা টাকা আদায়কারীরও। 

পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ বিভিন্ন কারন দেখিয়ে কিছু গ্রাহকের সংযোগ না পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অতিরিক্ত অর্থ গ্রহনের জন্য দালাল চক্রকে দায়ী করেছেন। নির্ধারিত সাড়ে চারশ টাকার স্থলে বেশির্ভাগের কাছথেকে ৪/৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলে গ্রাহকরা জানিয়েছে। অনেক এলাকায় খুঁটি পোতা হলেও তার টানা হয়নি। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ দুই উপজেলার কমপক্ষে ৫ শ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। 

ঝালকাঠি পল্লী বিদুৎ সমিতির সভাপতি জালাল আহমেদ খান রাজু অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার জন্য স্থানীয় কিছু অসাধূ লোককে দায়ী করে জানান, দুএকটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারনে সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি দাবি করেছেন এ দুই উপজেলার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। 

ঝালকাঠি জেলা পল্লী বিদুতায়ন বোর্ড জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ এমদাদুল হক জানান,  প্রতিটি সংযোগে সাড়ে চারশ টাকা জামানত ছাড়া আর কোন টাকা লাগেনা। অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার ব্যাপারে অফিসের কেউ জড়িত নন বলে তিনি দাবি করেছেন। অপরদিকে ঠিকাদারের নানা অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতায় জিম্মি হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার আশায়  মোটা অংকের অর্থ লেনদেন করে আজও সংযোগ পায়নি নলছিটি পৌরসভার দক্ষিণ বৈচন্ডী গ্রামের শতাধিক পরিবার। দেড়শ বছরের প্রাচীনতম এ পৌরসভায় বাস করেও এখনো বৈদ্যুৎতিক আলো দেখেনি এখানকার হাজারো মানুষ। 

জানা গেছে, নলছিটি পৌরসভার মেয়র তছলিম উদ্দিন চৌধুরীর একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের  শুরুতে ৮ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নলছিটিতে বিদ্যুৎ লাইন ও পূর্ণবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বঞ্চিত বৈচন্ডী গ্রামে বিদ্যুৎতের আলো পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হয়। সে লক্ষ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এ বিশেষ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বাস্তবায়নে ওই প্রকল্পে পৌর এলাকায় দুই কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ ও পুরাতন লাইন সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আজাদ ট্রেডিং এন্ড করপোরেশন। ওই নতুন লাইন স্থাপনের আওতাভুক্ত করা হয় পৌর এলাকাধীন বিদ্যুৎ বঞ্চিত দক্ষিণ বৈচন্ডী গ্রাম। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন সেচ্ছাচারিতায় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যার ফলে ভেস্তে যেতে শুরু করেছে সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবারহের নলছিটি পৌর এলাকার কার্যক্রম। ওই কোম্পানির লেবার সুপারভাইজার মো. শহিদ হোসেন এ পর্যন্ত বৈদ্যুতিক খুঁটি কেরিং, লেবার খরচ ও আনুষাঙ্গিক নানা অযুহাতে স্থানীয়দের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থ। বর্তমানে সংযোগ তার দেয়ার নামে পুনরায় মোটা অংকের টাকা দাবি করছেন তিনি। স্থানীয়রা দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বকৃীতি জানালে কাজ শেষ করা নিয়ে গড়িমসি শুরু করছে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাজ শুরু হওয়ার পর গত দেড় বছরে প্রকল্পের আওতাধীন বৈচন্ডী গ্রামে নামমাত্র কয়েকটি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। দরপত্রে এস.টি ও এল.টি দুই ধরনের লাইন নির্মাণ উল্লেখ থাকলেও সে কাজের কোন অগ্রগতি নেই। এখানো লাগানো হয়নি সংযোগ তার, স্যাকল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। গত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভারী বর্ষণে আইচাবাড়ি মোড় এলাকায় স্থাপনকৃত অসম্পূর্ণ একটি খুঁটি ভেঙে পাশের মাছের ঘেরে পরে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঘের মালিকসহ স্থানীয়রা। খুঁটি ভাঙার বিষয়টি বারবার ঠিকাদার প্রতিনিধি শহিদকে জানালে তিনি তা ভ্রæক্ষেপ করেননি। এছাড়া খুঁটিগুলোতে চুড়ান্ত বাধঁসহ নানা কাজ অসম্পূর্ণ রাখায় সেগুলো হেলেদুলে পড়ছে সড়কের এপাশ ওপাশ। নলছিটি-হদুয়া আঞ্চলিক পীর মোয়াজ্জেম সড়কের বৈচন্ডী অংশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার সড়কে ঝুঁকির্পূণ ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ তার ঝুঁলে আছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ওই সড়ক দিয়ে সাভাবিক যান ও পথচারীদের  চলাচল ব্যহৃত হচ্ছে। এসব সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানালো সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহন করছে না কর্তৃপক্ষ। কবে  নাগাদ এ কাজ শেষ হবে জানা নেই কারো। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী আনিচুর রহমান অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ সংযোগের আশায় কন্ট্রাক্টার শহিদ ভাইকে টাকা দিয়েছি। এখন আরো টাকার জন্য নানা অজুুহাতে তিনি সময়ক্ষেপন করছেন। এতে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এ বিষয় ওই এলাকার ভুক্তভোগী ও দক্ষিণ বৈচন্ডী জামে মসজীদের সভাপতি গাজী আক্তার হোসেন জানান, এলাকাবাসীর র্দীঘদিনের দাবির পরিপ্রক্ষিতে মেয়র মহোদয় আমাদের বৈচন্ডী ওয়ার্ডে বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। নানা অজুহাতে আমরা ঠিকাদার শহিদকে একাধিক বার টাকা দিয়েছি কিন্ত আজও কাজ শেষ হয়নি। এখন আবার নতুন করে টাকা দাবি করলে আমরা তা দিতে অস্বকৃীতি জানাই তাই তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। 

এ ব্যাপারে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানীর ঠিকাদার প্রতিনিধি শহিদ হোসেন মুঠোফোনে নলছিটিতে বিদ্যুৎ দেয়ার নামে অর্থ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, স্টোরে আমাদের ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় তার ও অন্যান্য মালামাল সংকট রয়েছে। তারপরও  মাঝেমাঝে আমরা নলছিটির বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে বৈচন্ডী এলাকার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হবে। তবে কবে নাগাদ শেষ হবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে নলছিটি ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী ফিরোজ হোসেন সন্যামত বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নলছিটি পৌরসভার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় এ কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপক মহোদয় আমাদের অফিস পরির্দশন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করা নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে লক্ষে কাজ করছি। 

এ ব্যাপারে নলছিটি পৌরসভার মেয়র তছলিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমি দায়িত্ব নেবার পর নলছিটি পৌরসভার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবারহের জন্য মাননীয় শিল্পমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ওজোপাডিকোর একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বর্তমানে পৌর এলাকায় এটির কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ বঞ্চিত বৈচন্ডী গ্রামেও ইতোমধ্যে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। র্দীঘ সময় অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার কাজ শেষ করা নিয়ে গড়িমসি করে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় কাজের বিলম্ব হচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী ও বরিশাল বিভাগীয় তত্তবধায়ক প্রকৌশলীকে আহ্বান জানান তিনি। এদিকে গত ২৮ অক্টোবর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো.শফিক উদ্দিনের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল নলছিটি বিদ্যুৎ অফিস পরির্দশন করেন। এসময় তিনি নলছিটিতে চলমান দুই কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নিমার্ণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ প্রদান করেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের তত্তবধায়ক প্রকৌশলী (ওজোপাডিকো) ইখতিয়ার উদ্দিনসহ বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।